আলমডাঙ্গায় নিষিদ্ধ কৃষাণ এ্যাগ্রো কেমিক্যালের 'কার্বোফুরান' নামের জীবনঘাতী বালাইনাশক আটক
নিষিদ্ধ কৃষাণ এ্যাগ্রো কেমিক্যালের 'কার্বোফুরান' নামের জীবনঘাতী বালাইনাশকের একটি বড় চালান আটক করেছে আলমডাঙ্গা কৃষি অফিস। কৃষকের জমি ও জীবের মারাত্মক ক্ষতিকর কার্বোফুরান গত ২৩ সালের জানুয়ারিতে নিষিদ্ধ করে কৃষি অধিদফপ্তর। তারপরও গোপনে কৃষাণ এ্যাগ্রো কেমিক্যাল গ্রামগঞ্জের বাজারগুলোতে নিষিদ্ধ এই বালাইনাশক গোপনে বাজারজাত করে আসছে।
২৯ সেপ্টেম্বর রবিবার আলমডাঙ্গা উপজেলার মহেশপুর মোড়ে ২৪০ প্যাকেট কার্বোফুরান আটক করেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান। কৃষি কর্মকর্তারা ধ্বংস করার জন্য জব্দকৃত কার্বোফুরান উপজেলা কৃষি অফিসের গোডাউনে নিয়ে রেখেছেন।
নিষিদ্ধ বালাইনাশক ভ্যানযোগে কে নিয়ে যাচ্ছিলেন? কোথায় নিয়ে যাচ্ছিলেন? তা আটককারী উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান রহস্যজনক কারণে জানাতে চাননি। হাটবোয়ালিয়া থেকে ভালাইপুর সড়কের মহেশপুর মোড়ের সড়কে একটি পাখি ভ্যান থেকে আটক করেছে বলে জানান।
তবে যে ভ্যানে নিষিদ্ধ কার্বোফুরান নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেই ভ্যানচালক মোড়ভাঙ্গার মাহাবুল হক জানান, তার ভ্যান ভাড়া করেছিলেন কৃষাণ এ্যাগ্রো কেমিক্যালের সদ্য চাকরি পাওয়া হারদীর কুয়াতলা গ্রামের লিটন আলী।
আলমডাঙ্গা কৃষি কর্মকর্তা রেহানা পারভীন জানান, জব্দকৃত কার্বোফুরান ধংস করার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলেছি। দ্রæত ধ্বংস করা হবে। জব্দকৃত ২৪০ প্যাকেট নিয়ে কৃষি অফিসের গোডাউনে রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কার্বোফুরান নামের বালাইনাশকটি মানুষ তো বটেই, বেশির ভাগ প্রাণীর জন্যই মারাত্মক ক্ষতিকর। ২০১৬ সালে জাতিসংঘ এটি নিষিদ্ধ করতে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানায়। এরপর এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৮৭টি দেশ বালাইনাশকটি নিষিদ্ধ করেছে।
গত ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৮৮তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এটি নিষিদ্ধ করে। রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুযায়ী, গত জুন থেকে এটি আর ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত হয়।
বাংলাদেশ কীটতত্ত্ব সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রুহুল আমীন পিটাকের সভায় কার্বোফুরানকে মারাত্মক ক্ষতিকর বা এক্সট্রিমলি হ্যাজার্ডাস বালাইনাশক হিসেবে চিহ্নিত করেন। সাধারণত ধান, গম, ভুট্টার মতো দানাদার শস্যের পোকা দমনে এটি ব্যবহৃত হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, নেপাল ও বিশ্বের বেশির ভাগ কৃষিপ্রধান দেশে এটি নিষিদ্ধ হয়েছে।
‘এটি মানুষের জন্য ক্ষতিকর তো বটেই, গাছের পরাগায়ণের ভূমিকা রাখা বিভিন্ন জাতের মাছি, প্রজাপতি থেকে শুরু করে ক্ষতিকর পোকা খেয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য রেখে চলা লেডি বিটল ও টাইগার বিটলের মতো পোকা এর কারণে মারা যায়। এটি মাটির উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও কেঁচো এবং মাছের ক্ষতি করে। " বাংলাদেশ কীটতত্ত্ব সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপকরুহুল আমীন উপরোক্ত মত ব্যক্ত করেন।