রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়
চুয়াডাঙ্গার নবাগত পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা আলমডাঙ্গার রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন। ২১ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকেলে থানা চত্বরে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম, পূজা উদযাপন কমিটি ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। আলমডাঙ্গায় পতিত সরকারের অনেক কর্মীর হাতে অস্ত্র দেখা গিয়েছিল তা এখনও উদ্ধার হয়নি উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। থানা পুলিশের তৎপরতা না থাকার কারণেও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
মতবিনিম সভায় আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ গণি মিয়ার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদ্য যোগদানকারী চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা (বিপিএম সেবা)। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান।
আলমডাঙ্গা মহিলা কলেজের প্রভাষক ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা সহকারী সেক্রেটারি শফিকুল আলম বকুল বলেন, ৪ আগস্ট আলমডাঙ্গা এটিম মাঠে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়ে আমাদের অনেক নেতাকর্মীদের রক্তাক্ত আহত করেছিল। নির্মমভাবে পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছিল। আওয়ামীগের সেই সন্ত্রাসীদের আজ পর্যন্ত আটক করেনি পুলিশ। কার ঈঙ্গিতে তাদের আটক করা হচ্ছে না প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন,আমরা আশাবাদী নবাগত এসপির নেতৃত্বে এসব অপরাধীদের আটক করবে পুলিশ। তা নাহলে আবারও ৫ আগস্টের মত ঘটনা ঘটবে।
আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছরে গায়েবি মামলায় আলমডাঙ্গার শত শত বিএনপির নিরপরাধ নেতাকর্মীকে বাড়ি থেকে তুলে এনে জেলে পাঠানো হয়েছে। থানায় এনে নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা বাড়িতে শান্তিতে ঘুমুতে পারিনি। পুলিশ ছিল বিএনপির লোকজনের কাছে এক আতঙ্কের নাম।
এসময় স্টেজে বসা আলমডাঙ্গা থানার ওসি শেখ গনি মিয়ার প্রতি তীব্র আক্রমণাত্বক বক্তব্য দিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, ৫ আগস্টে স্বৈরাচার সরকার পতনের দিন বা তার পরে থানায় একটি ইটও কেউ মারেনি। বিএনপির লোকজন থানা পাহারা দিয়েছে। তাহলে এখন আলমডাঙ্গায় কেন পুলিশের টহল নেই? ওসিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, মাসে মাসে থানায় বসে বসে বেতন নিচ্ছেন অথচ জনগনের জানমালের রক্ষায় কাজ করছেন না। এর জবাব দিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা জানি আপনার বাড়ি গোপালগঞ্জ। আপনি মানুষের জানমালের রক্ষায় কাজ না করলে আলমডাঙ্গার মানুষ ধরে নিবে আপনি এখনও বিতাড়িত আওয়ামীলীগের হয়ে কাজ করছেন।
আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শহিদুল কাওনাইন টিলু পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে নামুন। উপজেলার প্রত্যকটা গ্রামে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী রয়েছে। কোথাও কেউ কোন সমস্যা করলে আমাদের বলুন আমরা ব্যবস্থা নেব।
তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট করে নির্দেশ দিয়েছেন, কেউ যদি চাদাবাজি করে, হাট-বাজার দখল করে তাকে ধরুন। সে যদি বিএনপির লোক হয় তাকেও ধরুন বিএনপি ব্যবস্থা নিবে। তিনি আরও বলেন, গত ৪ আগস্ট আমার বাড়ির সামনে আওয়ামিলীগের লোকজন অস্ত্রের মহড়া দিয়েছিল। তাদেরকে আটক করা হয়নি, একটা অস্ত্রও উদ্ধার করেনি পুলিশ। তিনি এসব অস্ত্র উদ্ধারের আহবান জানান।
মতবিনিময় সভায় পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বলেন, আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া সমাজের আইন- শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব নয়। পটপরিবর্তনের পর সমস্ত পুলিশের মধ্যে আস্থার সংকট ছিল, পুলিশের সেই আস্থা ও মনোবল বৃদ্ধি করতে হবে। মাদককে প্রশ্রয় দিলে সন্তানেরা মাদক অ্যাডিক্টেড হবে সুতরাং এবিষয়ে কোন ছাড় নয়, মাদকের থেকেই চাঁদাবাজির সৃষ্টি হয়, সকল অপকর্মের সৃষ্টি হয়, মাদক নির্মূল করতেই হবে।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ভয়াবহ অবস্থার তুলনায় চুয়াডাঙ্গা জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। এজন্য তিনি জেলাবাসীকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি জনগণের সেবক হওয়ার প্রত্যয় নিয়ে জনবান্ধব পুলিশিং, চোরাচালান ও মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সকল পুলিশ সদস্যকে সম্পৃক্ত থাকার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। সবাইকে অর্পিত দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।
আলমডাঙ্গা থানার এসআই বিকাশ চন্দ্র দাসের উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আক্তার হোসেন জোয়ার্দ্দার, পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজুর রহমান পিন্টু, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও সাবেক জেহালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসিরুল ইসলাম সেলিম, পৌর বিএনপি সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান, আলমডাঙ্গা বনিক সমিতির সভাপতি আরেফিন মিয়া মিলন, আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি নাহিদ হাসান, বৈষম্য বিরোধি ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাকিব মাহমুদ।
এছাড়াও মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন পৌর বিএনপির সাধারন সম্পাদক জিল্লুর রহমান ওল্টু, উপজেলা বিএনপির সহসাধারন সম্পাদক হাজী মকবুল হোসেন, বাড়াদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তবারক হোসেন, পৌর বিএনপির সহসাধারন সম্পাদক মহাবুল হক মাস্টার, পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আজগর সাচ্চু, পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুল ইসলাম, উপজেলা কৃষকদলের সাবেক সভাপতি বোরহান উদ্দিন, বাড়াদি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ পারভেজ, কালিদাসপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর আসাদুল হক, জামজামি ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর বজলুর রহমান, সমন্বায়ক তানভীর ফয়সাল অনিক, মাহফুজ আলিফ, রাতুল, শামীম, সৌরভ, কামরুল হাসান কাজলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।