আলমডাঙ্গা বিএনপির বটবৃক্ষ মীর মহি উদ্দীন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে: দু'আ প্রার্থনা
আলমডাঙ্গা বিএনপির বটবৃক্ষ হিসেবে পরিচিত মীর মহি উদ্দীন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাঁর সুস্থ্যতার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে সকলের নিকট দু'আ চাওয়া হয়েছে।
মীর মহি উদ্দীন ও শহিদুল কাওনাইন টিলু আলমডাঙ্গা বিএনপির অপরিহার্য দুটি নাম। টিলু উস্তাদের আর মীর মহি উদ্দীনের মস্তিস্কের অসাধারণ মেলবন্ধনে এলাকায় দু নেতা সকলের নিকট অপরিহার্য হিসেবে পরিগণিত হয়। ভোটের হিসেব নিকেষে নির্ভুল সমীকরণের শিক্ষক মীর মহি উদ্দীন। অন্যদিকে, নেতাকর্মীদের মাঝে হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালার মত সম্মোহন সৃষ্টি করতে পারেন।
সম্প্রতি নামাজ পড়তে গিয়ে মীর মহি উদ্দীন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি মিনি স্ট্রোক করেন। পরে ঢাকাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য যান। এক পর্যায়ে তিনি আবারও স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। কৃত্রিমভাবে তাঁকে খাওয়ানো হচ্ছে। কথা বলতে পারেন না। মাঝে মাঝেই আইসিইউ- তে নেওয়া হচ্ছে।
মীর মহি উদ্দীন আলমডাঙ্গা পৌরসভার দুই ট্রাম মেয়র ছিলেন। তিনি পৌরসভাকে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করেন। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে শহরে ড্রেন নির্মাণ, পানি,সাপ্লায়ের প্রক্রিয়া করেন। এছাড়া, বাস টার্মিনাল নির্মাণ, ক্যানেলে গোসলের জন্য বেশ কিছু পাকা ঘাট নির্মাণ, শহীদ মিনার নির্মাণ, স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ করেন। তিনি পৌর শহরে অনেক মসজিদ-,মন্দির নির্মাণ, পুণর্র্নিমাণ করেছেন। পৌর এলাকা আলোকিত করতে বিদ্যুত সুবিধা দ্বার গোড়ায় পৌছে দিতে তিনি ছিলেন অনন্য। সমালোচনা যতই থাক, অন্তত এ সব কাজের জন্য মানুষ তাঁকে স্মরণ করবেন।
আরেকটি কাজের জন্য আলমডাঙ্গা অঞ্চলে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। সেটি হল - শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করা। তিনি আলমডাঙ্গা মহিলা ডিগ্রী কলেজ, আলমডাঙ্গা পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়, এনায়েতপুর বাড়াদী মীর খোস্তার আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আমেনা বেগম প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় নির্মাণ করেন। এছাড়াও, বেলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চরপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জগন্নাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খাসকররা কলেজ ও জামজামি কলেজ প্রতিষ্ঠায় তিনি উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখেন।
নির্দ্বিধায় বলা যায় যে মীর মহি উদ্দীন তাঁর সময়ের অন্যান্যদের চেয়ে অধিক গতিশীল। তিনি এক সাথে বিভিন্ন ধরণের কাজে পারঙ্গম ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ায় তিনি অতিরিক্ত সুবিধা পেতেন। বিশেষ করে মন্ত্রণালয়সহ অফিসিয়াল কাজে। তাঁর অনেক সহপাঠী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে। তিনি কখনও থানায় ও চায়ের দোকানে বসতেন না। এ বৈশিষ্ট্য ছিল প্রশংসনীয়। আইন আদালত ও অফিসিয়াল কাজে তিনি ছিলেন পুরো জেলায় অনন্য।
ব্যবসায়ী হিসেবে মীর মহি উদ্দীন ছিলেন সুপ্রতিষ্ঠিত। তিনি বর্তমানে জেলা ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। এক সময় তিনি এ সংগঠণের বিভাগীয় সভাপতি ছিলেন। গত দুই দশকে যারা সারের ডিলার হয়েছেন, তাদের অধিকাংশ মীর মহি উদ্দীনের হাত ধরে।
ব্যবসায়ী হিসেবে যেমন সফল, ঠিক তেমনই দানের ব্যাপারে তিনি ছিলেন উপোড় হাত। মেয়র না থাকলেও আলমডাঙ্গায় তিনি সবচে বেশি দান করেন। প্রতি শীত ও ঈদে তিনি কয়েক হাজার দরিদ্রদের কম্বল, শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবী, শার্ট ও নগদ টাকা বিতরণ করতেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের দরিদ্র পরিবারের মেয়ের বিয়েতে উল্লেখযোগ্য সহযোগিতা করেছেন। এ সব কারণে মীর মহি উদ্দীনের বিকল্প মীর মহি উদ্দীন নিজেই।
ধর্মীয় কর্মকান্ডেও তিনি ছিলেন অগ্রগামী। তিনি দীর্ঘদিন আলমডাঙ্গা পুরাতন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সভাপতি হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
আলমডাঙ্গা অঞ্চলের বিএনপির প্রাণপুরুষ টিলু উস্তাদ জানান, "সম্প্রতি আমরা হাসপাতালে মীর মহি উদ্দীনকে দেখতে গিয়েছিলাম। তাঁর মত গতিশীল নেতৃত্ব এ সময় খুব প্রয়োজন। তিনি যেন খুব দ্রæত সুস্থ্য হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসতে পারেন, সেজন্য মহান রাব্বুল আল আমিনের কাছে দু আ করেছে। আপনাদের কাছেও বিনীতভাবে দু আ চাচ্ছি। সকলে তাঁর জন্য দু'আ করবেন।"
বর্তমানে তিনি রাজধানীর নিউরোসাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর দুই মেয়েই চিকিৎসক। তারা সার্বক্ষনিক দেখভাল করছেন। দ্রæত সুস্থ্যতার জন্য মীর মহি উদ্দীনের স্ত্রী আলমডাঙ্গা মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ জিয়াউন নাহার সকলের নিকট দু আ চেয়েছেন।