৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের বেদখল হওয়া বিচারাধীন জমিতে ১৪৫ ধারা জারি

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪
54
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

বাঁশের ছাপড়া তুলে আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের জমি ঘটনায় ১৪৫ ধারা জারি করা হয়েছে। কোন প্রকার শান্তি শৃঙ্খলার যাতে অবনতি না হয় তার জন্য আলমডাঙ্গা থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত।


আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় কোটি টাকার সম্পত্তি ষড়যন্ত্র করে দখল করতে উঠে পড়ে লেগেছে একটি সিন্ডিকেট। আলমডাঙ্গার আলোচিত ভূমিদস্যু জাকারিয়া হিরোর নিকট থেকে পাইলট হাইস্কুলের শহীদ মিনার মাঠ উদ্ধার করতে না করতে আলমডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের জমি অবৈধভাবে দখল করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। এ ঘটনায় সচেতন শিক্ষার্থী -অভিভাবকসহ এলাকাবাসীর মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।


জানা গেছে, আলমডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের কৌশলীর আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বিচারাধীন জমিতে ১৪৫ ধারা জারি করেছেন। একই সাথে উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের পিছনের ৭৩ নং গোবিন্দপুর মৌজায় ১৬ নং আরএস খতিয়ানে ৮৭৩৫ দাগে ৩৮ শতক জমি রেেয়েছ। এই জমি ১৯৬১ স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভোগ দখলে রয়েছে স্কুলের। নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে আসছে বিদ্যালয়। এরই মধ্যে ওই সম্পত্তির উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে একটি ভূমিদস্যু চক্রের। তারা কয়েক কোটি টাকার স্কুলের এই সম্পত্তি নিজেদের দখলে নিতে শুরু করে নানা চক্রান্ত। এই সম্পত্তি নিজেদের দাবী করে রুইতন সেখ ও খেপাই সেখের পক্ষে তার ওয়ারেশগণ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন পূর্বেই। মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রথম দিকে আদালতে হাজিরা দিলেও পরে আর মামলার বিষয়ে খোঁজ খবর রাখেনি। ফলে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি বেহাত হওয়ার উপক্রম হয়। ২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রæয়ারি আদালতে একতরফা শুনানির খবরে স্কুল কর্তপক্ষ নড়েচড়ে বসে। স্কুলের মূল্যবান এ সম্পত্তি রক্ষায় দৌড়ে ঝাপ শুরু করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। মামলায় নতুন উকিল নিয়োগ দেওয়া হয়।


এরই মধ্যে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। নানা ব্যস্ততায় আবারও মামলা পরিচালনায় শৈথিল্য দেখান বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে বাদী পক্ষ আবারও আইনি লড়াইয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তারা শুক্রবার বিদ্যালয় ছুটির দিনে বিবাদমান জমিতে বাঁশ টিনের ছাপড়া নির্মাণ করে জমিটি দখলে নেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। সংবাদ পেয়ে শনিবার দুপুরেই ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপস্থিত হন। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশীষ কুমার বসু। পরে আলোচনা সাপেক্ষে ভূমিদস্যু চক্রের অপচেষ্টা প্রতিরোধ করতে আইনগত ও সামাজিক পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন।


মামলাটির বিদ্যালয় পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মানিক আকবর জানান, মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। আগামি ২০ নভেম্বর শুনানির তারিখ নির্ধারিত। বিচারাধীন জমি দখল করা বে-আইনি কর্মকান্ড।


বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক হাসিনুর জানান, সম্পত্তি রক্ষায় যা যা করণীয় স্কুল কর্তৃপক্ষ তা করতে পিছুপা হবে না।
এদিকে, সচেতনমহল বিদ্যলয়ের এ মূল্যবান সম্পত্তি রক্ষায় সোচ্চার হয়েছেন। কোন ভাবেই স্কুলের এই সম্পত্তি যাতে হাতছাড়া না হয় সে বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা যায়। পাইলট হাইস্কুলের শহীদ মিনারের জমি পুণরুদ্ধার করতে আলমডাঙ্গার ছাত্র জনতা যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলে অবৈধ দখলমুক্ত করে ছেড়েছে। এ আন্দোলন এখনো চলমান। এরই মধ্যে বালিকা বিদ্যালয়ের জমি পুণরুদ্ধার করতে আলমডাঙ্গাবাসী এক পায়ে খাড়া। যে কোন মুহুর্তে দখলদার চক্রের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন শুরু হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা বিরাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বেশ সোচ্চার। বিভিন্ন গ্রæপে প্রবল প্রতিবাদ উঠেছে। অবৈধ দখলদারদের শাস্তির দাবিতে মাঠে নামার ঘোষণা দিচ্ছেন কেউ কেউ।


আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক তাপস রশিদ বলেন, আলমডাঙ্গার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ের কোন ক্ষতিসাধন আলমডাঙ্গাবাসী স্বাভাবিকভাবে মেনে নেবেন না। স্কুল কর্তৃপক্ষের ভুলে বা যেভাবেই হোক এ মামলা এখন স্কুলের হয়তো প্রতিকুলে। বিবাদমান জমি কোন ব্যক্তিগত সম্পত্তি না, এটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। সুদীর্ঘ ৬৪/৬৫ বছর বিদ্যালয়ের দখলে রয়েছে। বিদ্যালয় খাজনা দিয়ে আসছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বার্থে ম্যানেজিং কমিটির যা যা করার তা করতে হবে। প্রয়োজনে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অবশ্যই আমরা আলমডাঙ্গাবাসীরা বিদ্যালয়ের পাশে আছি। অবশ্যই অচিরেই অবৈধ দখলদারমুক্ত করা হবে।


আলমডাঙ্গা গণত্রাণ কমিটির প্রধান সমন্বয়ক মাওলানা শাফায়েত-উল-ইসলাম হিরো বলেন, আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার মাঠ, এ- টিম মাঠ, বালিকা বিদ্যালয়ের জমি ও হাটবোয়ালিয়া ফুটবল মাঠের জমি বেদখল হয়েছে। বেদখল হওয়া সকল জমি পুণরুদ্ধার হওয়া জরুরী। এসব অসামাজিক নীতিভ্রষ্ট ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।


জামজামি বালিকা বিদ্যালয়ের টাকায় কেনা জমি প্রধান শিক্ষক নিজ নামে দলিল করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram