আলমডাঙ্গায় ভুমিদস্যুর কবল থেকে ব্যায়ামাগার উদ্ধারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল
আলমডাঙ্গার ভুমিদস্যু জাকারিয়া হিরোর কবল থেকে আলমডাঙ্গার ঐতিহাসিক ও সার্বজনীন প্রতিষ্ঠান 'আলমডাঙ্গা ব্যায়ামাগার' উদ্ধারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ব্যায়ামাগার উদ্ধার কমিটি। ১১ সেপ্টেম্বর বুধবার বেলা ১১ টায় আলমডাঙ্গা উপজেলা চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধননে ভুমিখেকো হিরোর রাহুগ্রাস থেকে আলমডাঙ্গার সার্বজনীন ব্যায়ামাগার পুনরুদ্ধার করতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বক্তারা। প্রায় ৪৪ বছর আগে আলমডাঙ্গার ব্যায়ামাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই সময় থেকে আলমডাঙ্গার ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করে আসছিল এ ব্যায়ামাগার। খুলনা বিভাগে ক্রীড়া জগতে অনন্য সংগঠন হয়ে উঠে আলমডাঙ্গা ব্যায়ামাগার। আলমডাঙ্গা ব্যায়ামাগারের সদস্যরা ইতোপূর্বে খুলনা বিভাগের হয়ে ৬ বার স্বর্ণপদক অর্জন করেছে। ১৯৮৫ সালে ব্যায়ামারের নামে জমি রেজিষ্ট্রি করা হয়। ক্রয়কৃত জমিতে একতলা পাকা বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়। নির্মাণে একাধিকবার সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে ভূমিদস্যু হিরো আওয়ামীলীগের কিছু নেতা ও প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ব্যায়ামাগার আত্মসাৎ করেছে। বিল্ডিং ভেঙ্গে ফেলেছে। সেখানে ৬ তলা বিল্ডিং নির্মাণ করেছে। ৪ লক্ষাধিক টাকার গাছ বিক্রি করে নিয়েছে। আলমডাঙ্গা কেন্দ্রিক ভূমিদস্যু চক্রের এক মহুরী ও এক কূচক্রী উকিল এই চক্রে জড়িত বলেও অভিযোগ তোলা হয়।
আলমডাঙ্গা ব্যায়ামাগার আলমডাঙ্গাবাসীর সার্বজনীন সম্পদ ও গর্ব দাবি করে ব্যায়ামাগার পূণরুদ্ধারে বক্তারা প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেছেন। প্রশাসন সদর্থক পদক্ষেপ না নিলে আলমডাঙ্গাবাসী তাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠান পূণরুদ্ধার নিজেরাই করে ছাড়বে। তারা যে কোন মূল্যে অবৈধ দখলদার ভূমিদস্যুর নিকট ব্যায়ামাগার উদ্ধারের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
মাবনবন্ধনে বক্তব্য রাখেন আলমডাঙ্গা ব্যায়ামাগারের জমি উদ্ধার কমিটির আহবায়ক ইকবাল হোসেন, ব্যায়ামাগারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মহিউদ্দিন, প্রভাষক ইদ্রিস আলী খান, পৌর বিএনপির সাধারন সম্পাদক জিল্লুর রহমান ওল্টু, এরশাদপুর একাডেমির প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক শামীম, ব্যায়ামাগারের জমি উদ্ধার কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আতিয়ার রহমান মুকুল, হাজী খোঃ এ কে. আজাদ, হাবিবুল করিম চলচল, কবি ও সাহিত্যিক পিন্টু রহমান, এমদাদ হোসেন, মঞ্জু রশীদ, জেলা যুবদলের সহসভাপতি মাগরিবুর রহমান, উপজেলা যুবদলের (ভারপ্রাপ্ত) আহবায়ক মীর আসাদুজ্জামান উজ্জল, পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাহমুদুল হক তন্ময়, ব্যায়ামাগারের সদস্য খন্দকার রকিবুল ইসলাম রিয়েল, ব্যায়ামাগারের প্রতিষ্ঠাতা ইসলাম খানের ছেলে আব্রাহাম খান ডন, সাদ্দাম খান, সুলতানুল আরেফিন তাইফু, বিএনপি নেতা রেজাউল হকসহ কয়েকশতাধিক ছাত্র-জনতা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আলমডাঙ্গা শহরের ভুমিদস্যু নামে পরিচিত মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া থেকে উঠে আসা জাকারিয়া ইসলাম হিরো। ৪৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত আলমডাঙ্গা ব্যায়ামাগারের জমিটি হিরো ভুয়া কাগজ পত্র তৈরী করে দখল করে নেয়। তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের এমপি ও আলমডাঙ্গার কিছু দালালদের মাধ্যমে তিনি এ জমি দখল করেছে। শুধু ব্যায়ামাগারই নয় জাকারিয়া ইসলাম হিরো দখল করেছিল আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের জমি, আলমডাঙ্গা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জমি। আলমডাঙ্গাবাসী রুখে দাড়ানোর কারণে সরকারি কলেজ ও শহীদ মিনারের জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে হিরো। হিরো আলমডাঙ্গার অ্যাডভোকেট রঞ্জিত কুমার, সার্ভেয়ার সুধাংশু কুমার ও কৃষ্ণ নামের কয়েকজন দালালের মাধ্যমে ব্যায়ামাগারের জমি দখল করে নেয়। জমিটিতে তৈরী করেছে ৬ তলা বিল্ডিং। ২০১৪ সালে সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ব্যায়ামাগারের নতুন বিল্ডিংএর ভিত্তি প্রস্তুর উদ্বোধন করেন। তারপরই জাকারিয়া হিরো ব্যায়ামাগার তার দখলে নিয়ে নেয়।
বক্তারা আরও বলেন, ব্যায়ামাগারের জমি না ছাড়লে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। মানববন্ধন থেকে ব্যায়ামাগারের জমি উদ্ধারে প্রশাসনের প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।