হাটবোয়ালিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের রাস্তায় বাঁশের বেড়া দেওয়ায় বিপাকে ১২টি ভূমিহীন পরিবার
আলমডাঙ্গা ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের হাটবোয়ালিয়া মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে নির্মিত আশ্রয়ন প্রকল্পের যাতায়াতের মূল প্রবেশ পথটি বাঁশের বেড়া দিয়ে আটকিয়ে দিয়েছেন আশরাফুজ্জামান। রাস্তাটি তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি দাবি তুলে আশ্রায়নের পথে ওই প্রতিবন্ধকতা তুলেছেন। গত সোমবার সকালে হঠাৎ করে রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়ার ফলে চরম বিপাকে পড়েছে ১২টি পরিবার।
আশ্রায়নে বসবাসরত সব কটি পরিবার ভূমিহীন ছিন্নমূল। আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মিত হলে এ ভূমিহীন গৃহহীন ১২ টি পরিবার মাথা গোজার ঠাই পেয়েছেন। পেয়েছেন নিজেদের ঠিকানা। কিন্তু হঠাৎ করে আশ্রায়নে যাতায়াতের পথ বেড়া দিয়ে রুদ্ধ করে দেওয়ার ফলে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন ১২ টি পরিবারের সদস্যরা। অনেকের জীবিকা চরম হুমকির সম্মুখিন। অনিশ্চয়তা আর অচলাবস্থায় শঙ্কিত তারা। এ দুরাবস্থা নিরসনে তারা দ্রæত প্রশাসনিক পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেছেন।
আশ্রয়নে বসবাসরত ভুক্তভোগী খলিলুর রহমান জানান, "রাস্তাটি আটকে দেবার ফলে আমরা চরম বিপদে পড়েছি। এখানে বসবাসরতদের মধ্যে তিনজন ভ্যানচালক রয়েছে। তাদের জীবিকা সংকটাপন্ন। যাতায়াতের পথে বেড়া দেওয়ার ফলে সরাসরি রাস্তায় ভ্যান উঠাতে পারছে না । অন্তত একটা ভ্যান যাবার মত জায়গা করে রাস্তাটি চালু করা হলেও আপাতত চলতো।"
আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারী ভ্যানচালক রমজান আলী জানান, " আমি ভ্যান চালাই। আমার তিন ছেলে তিন মেয়ে, নাতি নাতকুন নিয়ে থাকি। রাস্তা ঘিরে দেওয়াতে আমাদের কষ্টের সীমা নেই। আশ্রয়নের পথের জমি নিজের দাবি করে আশরাফুল ঘিরে নিয়েছে। কিন্তু আশ্রয়নের পাশেই তার পান বোরোজ। বোরোজের ভেতর খাস জমি আছে। আশ্রায়ন প্রকল্প নির্মাণের সময় অফিসাররা আশরাফুলকে বলেছিলেন যে তোমার সামান্য জমির পরিবর্তে খাসজমি ( তার পান বোরোজের ভেতর) তোমার দখলে থাকবে। এখন আশরাফুল রাস্তাও দখল করছে, আবার খাসজমিও দখলে রেখেছে।"
আশ্রয়নে বসবাস করেন বাদাম বিক্রেতা খলিল। তিনি বলেন, " আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলে ভ্যান চালাই। রাস্তা ঘিরে দেওয়ার ফলে আমাদের কষ্ট খুব। ছেলে ভ্যান নিয়ে বাইরে যেতে পারছে না। আগে পরের জাগায় থাকতাম। কত কথা হজম করে, গালমন্দ শুনেছি। ভাবছিলাম আশ্রয়নে গিয়ে সুখে থাকবো। এতদিন অসুবিধা হয়নি। কিন্তু আশরাফুল তার জমির শ্রমিক আলিহীমকে দিয়ে রাস্তা ঘিরে দিলে আবার কষ্টের দিন শুরু হয়েছে।"
আশরাফুজ্জামান মাথাভাঙ্গাকে জানান, ২০২৩ সালে প্রকল্পটি নির্মাণের পর তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরে আলম নূর, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজওয়ানা নাহিদ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগিতায জোর করে আমার জমির উপর দিয়ে রাস্তাটি নির্মাণ করেন। তখন আমি প্রতিবাদ করি। কোন প্রতিকার না পেয়ে আদালতে মামলা করি (যার নং৯/২৩)। যা এখনও চলমান।
জানা গেছে, আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে এক নম্বর খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত সরকারি জমির ২৪ শতাংশ জায়গায় আশ্রয়ন প্রকল্পের ১২ টি বসত ঘর নির্মাণ করা হয়। সেখানে ১৩/ ১৪ বছর ধরে ১২টি ভূমিহীন -গৃহহীন হতদরিদ্র পরিবার বসবাস করে আসছে।