৩০ ঘন্টায়ও কুমার নদ থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি পরোপকারী আবুল কালামের মরাদেহ
গত ৩০ ঘন্টায়ও কুমার নদ থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি পরোপকারী আবুল কালামের লাশ। গতকাল কুমার নদে লাফ দেওয়া নারীর জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন বিপন্নকারী মধ্য বয়সী আবুল কালামের লাশ উদ্ধার করতে গত ২৪ ঘন্টারও বেশি খুলনার একটি নাবিক দল ও স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস অভিযান অব্যাহত রখেছেন। ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোবিন্দপুরের স্বামী পরিত্যক্ত এক নারী আত্মহত্যা করার জন্য কুমার নদের সাদাব্রীজ থেকে লাফ দেন। তাকে বাঁচাতে মধ্য বয়সী আবুল কালাম নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নারীকে উদ্ধার করলেও নিজে পানির স্রোতে ভেসে যান। গভীর রাত অবধি তার লাশের হদিস মেলেনি। নিখোঁজ আবুল কালাম ( ৫৮ ) আলমডাঙ্গা পৌর শহরের কাছারি বাজারের মৃত আব্দুল মজিদ মিয়ার ছেলে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার গোবিন্দপুর গ্রামের হাশোর আলীর মেয়ে স্বামী পরিত্যক্ত মেয়ে সুমি খাতুন (৩২)। তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আত্মহত্যা করতে সাদাব্রীজ থেকে কুমার নদে লাফ দেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ তাকে বাঁচাতে চেষ্টা না করলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত মধ্যবয়স্ক আবুল কালাম পানিতে লাফ দেন। এক পর্যায়ে সুমিকে জীবন্ত উদ্ধার করতে পারলে নিজে জীবন নিয়ে ডাঙ্গায় উঠতে পারেন নি। নদের প্রচন্ড স্রোতের তোড়ে হারিয়ে যান। এলাকাবাসীসহ আলমডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম গভীর রাত অবধি চেষ্টা করলেও লাশের সন্ধ্যান পাননি।
প্রত্যক্ষদর্শি শিবলী জানান, বৃহস্পতিবার আলমডাঙ্গার সপ্তাহিক হাট ছিল। কুমার নদের সাদাব্রিজের উপর বাজারের অনেক মানুষ বসে থাকেন। ফারাক্কা বাঁধের সব গেট খুলে দেওয়ায় কুমার নদ কানায় কানায় পানিতে পরিপূর্ণ । নদীতে প্রচন্ড স্রোত। সন্ধ্যা ৬ টার দিকে সুমি খাতুন সাদা ব্রিজের উপর থেকে নদে লাফ দেন। এসময় অনেকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলেও কেউ বাঁচাতে চেষ্টা করেনি। অগত্যা মধ্যবয়েসী আবুল কালাম দৌড়ে এসে নদীতে লাফ দেন। ব্রিজের সাথে বেশ কয়েকটি দড়ি বাঁধা ছিল। সুমিকে উদ্ধার করে প্রায় ২০ মিনিট দড়ির সাথে ঝুলে ছিলেন আবু কালাম। এক পর্যায়ে তিনি ক্লান্ত হয়ে যান। রকিবুল নামের এক ব্যবসায়ী নদীতে লাফ দিয়ে সুমিকে উপরে উঠানোর সহযোগিতা করেন। সে সময় ক্লান্ত অবসন্ন আবুল কালাম সাঁতার কেটে কিনারায় উঠতে গিয়ে পানির প্রবল স্রোতে হারিয়ে যান। চোখের সামনে আবুল কালামকে ডুবে যেতে দেখলেও কেউ উদ্ধার করতে যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। যিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে অপরের জীবন বাঁচালেন তাঁর জীবন বাঁচাতে নূন্যতম চেষ্টা করেননি কেউ। বরং তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছেন অনেক স্বার্থান্ধ যুবক।
উপস্থিত অনেকে জানান, আবুল কালাম পানিতে ডুবে গেলে আলমডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসকে সংবাদ দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এক পর্যায়ে নদে নেমে লাশ খুঁজতে শুরু করেন। পরে খুলনা থেকে নাবিকদের একটি টিম উদ্ধার কাজে যোগ দেন। গতকাল বিকেল পর্যন্ত নাবিক দল উদ্ধার অভিযান চালায়। সন্ধ্যায় বেনাপোল টার্ন আউটে চলে যায়। গতকাল রাত অবধি অভিযান চালালেও লাশের সন্ধান মেলেনি। নাবিকদের সাথে সাথে স্থানীয় অনেকে লাশ উদ্ধার করতে নদে নামেন। আলমডাঙ্গার রেসকিউ টিমও কুমার নদের নেমে বিকাল থেকে রাত অবদি পরোপকারি আবুল কালামের লাশের সন্ধান করেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, গতকাল বিকেল অবধি উদ্ধার কাজ চালিয়েও লাশের সন্ধান মেলেনি। বিকেলে উদ্ধার অভিযান শেষ করা হয়েছে।