হাটবোয়ালিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াকুব আলীর বিরুদ্ধে মানববন্ধন
সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম ঘোষণা করে গতকাল ৩ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের সামনে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ এ মানববন্ধন রচনা করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, অযোগ্য ইয়াকুব আলীকে এমপি ছেলুন দীর্ঘ বছর অবৈধভাবে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রেখেছিলেন। পরে আবার তাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতেন না। সব দায়িত্ব সহকারী প্রধান শিক্ষকের উপর ন্যস্ত করে তিনি রাজনীতির অজুহাতে অনুপস্থিত থাকতেন। সপ্তায় দু একদিন উপস্থিত হয়ে উপস্থিতপত্রে বিগত দিনের স্বাক্ষর করে অজুহাত দেখিয়ে বের হয়ে যেতেন।
বক্তাগণ আরও বলেন, ইয়াকুব আলী আপাদমস্তক দুর্নীতিবাজ ও বেয়াদব। শিক্ষক হিসেবেও একেবারেই অযোগ্য। তিনি বিদ্যালয়ের জমিতে মার্কেট নির্মাণ করে এক একটা দোকান বরাদ্ধ দিয়েছেন ১৫ লাখ করে টাকা উৎকোচ নিয়ে। দোকান বরাদ্ধের মোটা অংকের অর্থ তিনি আত্মসাৎ করেছেন। মসজিদের জমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিলেন। নিয়োগ বাণিজ্যের মধ্যে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিদ্যালয়ে সরকারিভাবে নির্মাণ কাজের ঠিকাদারের নিকট থেকে কাজ শুরুর আগেই মোটা অংকের উৎকোচ আদায় করেছেন। চরম অযোগ্য এমন অভিযোগ তুলে ইয়াকুব আলীকে ইতোপূর্বে হারদী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এক পর্যায়ে এমপি ছেলুন রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে অবৈধভাবে অযোগ্য ইয়াকুব আলীকে এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। তার নিয়োগ প্রক্রিয়াও ছিল অবৈধ। নিয়োগের পর থেকে তিনি রাজনৈতিক পরিচয়ের দম্ভে অভিভাবকসহ সাধারণ মানুষের সাথে বাজে আচরণ শুরু করেন।
বিদালয়ের রোড থেকে প্রতিষ্ঠাতা ও পূর্বের প্রধান শিক্ষকদের নাম মুছে ফেলেন। লিখে রাখেন শুধু নিজের ও বর্তমান সভাপতির নাম। প্রতিষ্ঠাতা যুক্তফ্রন্টের অবিসংবাদিত নেতা ও এমএলএ প্রয়াত ডাক্তার রিয়াজ উদ্দীন আহমেদের পরিবারসহ বিরুদ্ধে মতের মানুষদের প্রকাশ্যে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও অপমান করতেন। গাল মন্দ দিতেন। এ সব কারণে হাটবোয়ালিয়া এলাকার সাধারণ মানুষ তাকে বেয়াকুব" বলে ডাকেন। গত ৪ আগস্ট আলমডাঙ্গা বি-টিম মাঠে বৈষম্যবিরোধি শিক্ষার্থিরা উপস্থিত হলে ইয়াকুব আলীর নেতৃত্বে আওয়ামী গুন্ডা, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ হামলা চালিয়ে নিরীহ শিক্ষার্থিদের হাত পা ভেঙ্গে দেয়। পরবর্তীতে ওই মামলার প্রধান আসামী তিনি। বক্তারা আরও বলেন, এলাকার বহু নিরীহ মানুষের নামে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আটক করিয়ে অর্থের বিনিময়ে নিজেই ছাড়িয়ে নিয়ে আসতেন। থানার চিহ্নিত দালাল ছিলেন তিনি।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি ছুটি না নিয়ে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। গত তিন দিন পূর্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট তিনি ছুটির আবেদন দিয়েছেন বলে জানা গেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা দাসের সাথে রাজনৈতিকসূত্রে তার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। সেই সুবিধা কাজে লাগাতে চায় ধুরন্ধর ইয়াকুব আলী। কিন্তু আমরা আর তার কোন সুযোগ দিতে চায় না। আগামী ৭ দিনের মধ্যে তিনি পদত্যাগ না করলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ভাংবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক আতাউল হুদা, উপজেলা মৎস্যজীবি দলের সভাপতি জান মোহাম্মদ, ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর কামরুল ইসলাম সোহেল, বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ খোকন, সেলিম রেজা, ইসমাঈল হুদা, উসমান, তুহিন হুদা, জাকির হোসেন, রাসেল হুদা, আইয়ুব আলী, মহিদুল ইসলাম, থানা নায়েবে আমির সেলিম রেজা, ইউনিয়ন জামায়ায়ের সেক্রেটারি রাইতাল হক, জামায়াতের নেতা নুর মোহাম্মদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাজী হাসানুল ইকতেয়ার কিরন, আসিফ হুদা, সোহাগসহ বিভিন্ন কলেজ ও বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসি।