১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গার ভূমিদস্যূ হিরোর নিকট থেকে জমি উদ্ধার করে শহীদ মিনারের প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪
77
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

" জেগেছে রে জেগেছে ছাত্র সমাজ জেগেছে।
লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে।।"
"ভূমি দস্যুর দুই গালে জুতা মারো তালে তালে।
হিরোর দুই গালে জুতা মারো তালে তালে।।"
"আমাদের ব্যায়ামাগার ফিরিয়ে দাও ফিরিয়ে দাও।
আলমডাঙ্গার ব্যামায়াগার ফিরিয়ে দাও ফিরিয়ে দাও।।"


গতকাল ১ সেপ্টেম্বর আলমডাঙ্গার কেন্দ্রীয় শহীদমিনারের জমি দখলদার ভূমিদস্যু হিরোর কাছ থেকে জমি উদ্ধারের লক্ষ্যে বিক্ষোভকালে ছাত্র-জনতা উপরোক্ত শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত করে তোলে শহর।
একই সময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে জাকারিয়া হিরো ও আলমডাঙ্গা সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার।


পরে সিদ্ধান্ত মোতাবেক পূণরায় জমি মাপজোক করে সীমানা চিহ্নিত করা হয়। হিরো অবৈধভাবে যতটুকু জমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন তা লাল রঙ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। একই সাথে উত্তর দিকের সীমানা চিহ্নিত করতে গিয়ে দেখা গেছে এদিকের প্রত্যেক ভবন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জমি দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে। যা অত্যন্ত দু:খজনক বলে মন্তব্য করেছেন সবাই।


ভূমিদস্যুর কালো থাবা থেকে শহীদমিনার মাঠের জমি উদ্ধার করতে গিয়ে বার বার হোচট খেতে হচ্ছে আন্দোলনকারীদের। দফায় দফায় ষড়যন্ত্রকারিদের জলদ গম্ভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হচ্ছে। দেদার অর্থ ছড়ানো হচ্ছে।


গত বুধবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশনা মোতাবেক ছাত্র-জনতা শহীদ মিনার মাঠের প্রকৃত সীমানা পুণরুদ্ধার করে প্রাচীর নির্মানের কাজ শুরু করলেও গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ভূমিকা ছিল দখলদারের পক্ষে। গতকাল দুপুরে তিনি আকস্মিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দখলদারের চাহিদামাফিক কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে ছাত্র-, জনতার তোপের মুখে পড়েন। দ্রæত স্থান ত্যাগ করলেও পরে সেনাবাহিনী গিয়ে কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। গত ২৮ আগস্ট দুপুরে মাঠের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে গেলে বাঁধা দেন দখলদার জাকারিয়া হিরো। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়ে শহরের ছাত্র-জনতা। তোপের মুখে পিছু হটেন দখলদার। দখলদারের পক্ষাবলম্বন করার অভিযোগ তুলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে ফুঁসছে আলমডাঙ্গার ছাত্র-জনতা।


জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের জাকারিয়া হিরো। সন্ত্রাসী সিরাজ বাহিনীর রাজত্বকালে তাদের পরিবারের অবিশ্বাস্য উত্থান। এক পর্যায়ে জাকারিয়া হিরো আলমডাঙ্গায় শহীদ মিনারের পাশে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এক খন্ড জমি লিজ নেন। সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করেন। সেই বিল্ডিংয়ে পরিচালিত হচ্ছে তার নিজস্ব ব্রাইট মডেল স্কুল। পরবর্তীতে নানা কৌশলে খুলনা বিভাগের সবচেয়ে প্রশিদ্ধ ব্যামায়াগার করায়ত্ত করে সেখানেও গড়ে তোলেন বহুতল ভবন। এমনকি ব্যায়ামাগারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মরহুম ইসলাম খানের বাড়ি ছিল পাশে। ইসলাম খানের বিধবা স্ত্রীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে অসহায় পরিবারটির মাথা গোজার ঠাঁইটুকু কেড়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।


কয়েক মাস আগে জাকারিয়া হিরো আলমডাঙ্গা কলেজের অভ্যন্তরে থাকা খাস জমি দখল করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন। সর্বস্তরের মানুষ ফুসে উঠে।


এদিকে, আলমডাঙ্গা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মাঠ ( আলমডাঙ্গা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জমি) উল্লেখযোগ্য পরিমান দখল করে ভোগ করে আসছিলেন জাকারিয়া হিরো। সেই অংশেও বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। অভিযোগ উঠে - হিরো তার বহুতল ভবনের পায়খানার টাংকি তৈরি করেছেন শহীদ মিনার স্থাপনার ভেতরে ( শহীদ মিনার স্থাপনার মাটির নীচে)। এমন অভিযোগের কারণে শহরের আম জনতা ফুঁসছিল দীর্ঘ বছর। জাকারিয়া হিরো প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে সাহস পেতো না। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ম্যানেজ করেই এতকাল তিনি এসব অপকর্ম করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এক সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়রকে ব্রাইট মডেল স্কুলের সভাপতিসহ প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের সভাপতি করে নির্বিঘ্নে ভূমি দস্যুতা অব্যাহত রেখেছিলেন।


সম্প্রতি রাজনৈতিক পট পরিনর্তনের পর আলমডাঙ্গা সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবারও মাঠটির চৌদিকে সীমানা প্রাচির নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করেই ইতোপূর্বে সীমানা প্রাচির নির্মাণ প্রক্রিয়া বার বার নস্যাৎ করেছিলেন হিরো। বর্তমানে বিদ্যালয়টির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা দাস। তিনি সীমানা প্রাচীর নির্মাণে অটল সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত বুধবার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু হলে জাকারিয়া হিরো বাঁধা দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে শহরের ছাত্র-জনতা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সে সময় জাকারিয়া হিরো ব্রাইট মডেল স্কুলের সকল শিক্ষক কর্মচারিকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যলয়ে চড়াও হন। ছাত্র-জনতাও বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা চত্বরে উপস্থিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রাচির নির্মাণের সিদ্ধান্তে অটল সিদ্ধান্তের কথা পূণর্ব্যক্ত করেন। ছাত্র-জনতার কাছে তেমনটাই প্রত্যাশা করেন। এমন পরিস্থিতে পিছু হটেন হিরো। সারাদিন ছাত্র-জনতা মাঠে উপস্থিত ছিল। তারা জাকারিয়া হিরোর অপতৎপরতা রুখে দিতে প্রত্যয় ব্যক্ত করে নানা শ্লোগানে শ্লোগানে মাতিয়ে রাখেন।


পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে যথারীতি প্রাচির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ছাত্র-জনতাও মাঠে উপস্থিত হয়ে প্রাচির নির্মাণ কাজ তত্বাবধান করছিল। বেলা পৌণে দুটোর দিকে হঠাৎ ভিন্ন মুর্তিতে আবির্ভুত হন উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা দাস। তিনি গিয়েই দখলদারের সুরে কথা বলা শুরু করেন। নিজের প্রতিশ্রæতি নিজেই ভঙ্গ করেন। এতে উপস্থিত ছাত্র-জনতা ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে। এমন প্রতিকুল পরিস্থিতিতে তিনি দ্রæত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। সে সময় ছাত্র-,জনতার পক্ষে ইউএনও -র বিরুদ্ধে শহরে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি নেওয়া হলেএ সিনিয়রদের হস্তক্ষেপে তা স্থগিত হয়। বিকেলে সেনাবাহিনী গিয়ে সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। পরে রবিবার নতুন করে মাপজোকের পর নির্মাণ কাজ শুরুর সিদ্ধান্তের কথা জানান। সারা শহর দখলদার জাকারিয়া হিরোর বিরুদ্ধে ফুঁসে ছিল। ছাত্র-জনতার স্পস্ট দাবি - শহীদ মিনার মাঠের পবিত্র মাটি এক ইঞ্চিও অবৈধ দখলদারদের নজরানা দেবো না, কাউকে দিতে দেবো না। কারও জমি এক ইঞ্চিও অবৈধভাবে নেবো না।


গতকাল রবিবার ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে নতুন করে মাপজোক করে সীমানা লাল রঙ দিয়ে চিহ্নিত করে।


এখন দখলদারের বহুতল ভবন ভেঙ্গে দিয়ে মাঠ উদ্ধার নিয়ে মশগুল সকলে। এ ব্যাপারে সকলে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন। এ ঘটনায় শহরজুড়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram