আলমডাঙ্গায় এনজিও'র কিস্তির বোঝা সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা
আলমডাঙ্গায় বিভিন্ন এনজিও'র কিস্তির বোঝা সহ্য করতে না পেরে তাসলিমা খাতুন নামের এক বিধবা গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সোমবার ৮ জুলাই দুপুরে বাড়িতে তার ঘরের আড়াই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। তিনি ব্র্যাক, আশা, দিশা ও পদক্ষেপসহ বেশ কয়েকটি এনজিও থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা ঋণ নেন।
আত্মহত্যাকারী বিধবা তাসলিমা খাতুন(৫৫) আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার মিয়াপাড়ার মৃত মতিয়ার রহমানের স্ত্রী। বিধবা তাসলিমা খাতুনের ৫ ছেলে রয়েছে। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দুই ছেলেকে সৌদি ও মালেশিয়াতে পাঠান। বিদেশে গেলেও তারা টাকা পাঠানোর মত পরিস্থিতিতে না থাকায় তাসলিমা খাতুন ঋণের ভারে দিশেহারা হয়ে পড়েন। বাড়িতে ৩ ছেলের এক ছেলে রাজ-মিস্ত্রী, এক ছেলে পাখিভ্যান চালায় ও ছোট ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে লেখাপড়া করে। রাজমিস্ত্রী ও পাখিভ্যানের আয়ে সংসার চালিয়ে ঋণের কিস্তি শোধ করা সম্ভব হচ্ছিল তাসলিমা খাতুনের।
জানাগেছে, তাসলিমা খাতুনের স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে একাধিক এনজিও থেকে ঋণ নেন তিনি। দুই ছেলেকে বিদেশেও পাঠান। কিন্ত ছেলে দুটি বিদেশে গিয়ে সুবিধা করতে না পারায় বিপাকে পড়েন তাসলিমা। এদিকে প্রায় প্রতিদিনই কিস্তির টাকা নিতে আসে বিভিন্ন এনজিও। বিভিন্ন এনজিও'র কিস্তি পরিশোধ ও সবশেষে ঝুঁকি নিয়ে আরেক ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর জন্য গত রবিবার ব্রাক থেকে আবারও ৩ লাখ টাকা ঋণ নেন তাসলিমা।
প্রতিবেশিরা জানান, তাসলিমা খাতুন ৫ ছেলে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দুই ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছেন। বাড়িতে ৩ ছেলে ও মেজো ছেলের স্ত্রী এবং একটি নাতিছেলে রয়েছে। একাধিক এনজিও'র ঋণের চাপ সইতে না পেরে তাসলিমা খাতুন তার ঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে বলে প্রতিবেশীরা জানান।
আলমডাঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র খন্দকার মজিবুল ইসলাম জানান, তাসলিমা খাতুনের স্বামী মারা যাওয়ার পর ছেলেদেরকে কষ্ট করে বড় করেছেন। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দুই ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছেন। আরেক ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর জন্য ব্রাক থেকে ঋণ নিয়েছেন। ঋণের টাকার বোঝা সইতে না পেরে তাসলিমা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
আলমডাঙ্গা থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত সাঈদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, তাসলিমা খাতুন নামের এক নারী গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এবিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ লাশের সুরতাহাল রিপোর্ট সম্পন্ন করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য উদ্ধার করে নিয়ে আসে । আজ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে।