অসুস্থ জামাইকে নিয়ে যাচ্ছিলেন হাসপাতালে নেওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় শ্বাশুড়ি মৃত্যু
স্ট্রোকে আক্রান্ত জামাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় শ্বাশুড়ি মারা গেছেন। তাকে গুর”তর অবস্থায় উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দুপুরে চিকৎাধীন তিনি মারা যান। নিহত শ্বাশুড়ি বুলবুলি খাতুন (৭০) কুষ্টিয়া ইবি থানার ঝাউদিয়া মাঝপাড়া গ্রামের সুন্নত মন্ডলের স্ত্রী।
স্ট্রোকে আক্রান্ত মধুপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তিনি। এ সময় একই পরিবারের ৪ জনসহ আহত হয়েছেন ৬ জন। গাছের সাথে ধাক্কা লেগে দুমড়েমুচড়ে গেছে মাইক্রোবাসটি। শনিবার (৬ জুলাই) সকালে আলমডাঙ্গা জামজামি সড়কের যমুনার মাঠে ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে।
গুরুতর আহত স্ট্রোকে আক্রান্ত জামাই আব্দুল মান্নান (৪৫) উপজেলার মধুপুর গ্রামের আবু শামার ছেলে। আরও যারা আহত হয়েছেন তারা হলেন আব্দুল মান্নানের স্ত্রী রেশমা খাতুন(৩৮), ছেলে শিমুল (২০)।
আব্দুল মান্নানের শ্বাশুড়ি বুলবুলি খাতুন (৭০) কুষ্টিয়া ইবি থানার ঝাউদিয়া মাঝপাড়া গ্রামের সুন্নত মন্ডলের স্ত্রী। মাইক্রোবাসের চালক রিমেল(২৮) জামজামি গ্রামের আসির উদ্দিনের ছেলে ও হেলপার রাকিব (২৫) একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।
স্ট্রোকে আক্রান্ত আব্দুল মান্নানের শ্বাশ^ড়ি বুলবুলি খাতুন কয়েকদিন আগে মেয়ে জামাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। শনিবার সকালে জামাই আব্দুল মান্নান স্ট্রোক করলে হাসপাতালের নেওয়ার সময় সকলের সাথে তিনিও মাইক্রোবাসে উঠেন।
স্থানীয়রা জানায়, গতকাল সকালে আব্দুল মান্নান তার বাড়িতে স্ট্রোক করলে জামজামি গ্রামের মাইক্রোবাস চালক রিমেলকে দ্রæত ডেকে নেয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা রিমেলের মাইক্রোবাসে মান্নানকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে জামজামির যমুনার মাঠে পৌঁছলে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা লাগায়। গাড়ির সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। স্ট্রোকের রোগী আব্দুল মান্নানসহ তার পরিবারের চার সদস্য রক্তাক্ত জখম হন। চালক রিমেল ও রাকিবও গুর”তর জখম হন।
স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে আলমডাঙ্গার একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য বুলবুলি খাতুনকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুপুর পর কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুলবুলি খাতুন মারা যান। বিকেলে বুলবুলি খাতুনের মরাদেহ ঝাউদিয়া মাঝপাড়ায় নেওয়া হলে পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের কান্নায় গ্রামের বাতাস ভারি হয়ে উঠে।
এদিকে মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বুলবুলি খাতুনের মেয়ে রেশমা খাতুন, জামাই আব্দুল মান্নান ও নাতিছেলে শিমুল।
স্ট্রোকে আক্রান্ত আব্দুল মান্নানের ভাই শাহাজান আলী জানান, সন্ধ্যা ৬টায় বুলবুল খাতুনের মরাদেহ ঝাউদিয়া মাঝপাড়া গ্রামের দাফন করা হয়েছে। স্ট্রোকে আক্রান্ত আব্দুল মান্নান, স্ত্রী রেশমা খাতুন ও ছেলে শিমুল এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় আহত আব্দুল মান্নানের ছেলে শিমুল সম্প্রতি মাইক্রোবাস চালানো শিখছিল। দূর্ঘটনার কবলে পড়া মাইক্রোবাসের চালক রিমেল তাকে মাইক্রোবাস চালানো শিখাতো। বাবা আব্দুল মান্নান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তড়িঘড়ি করে রিমেলকে মাইক্রো নিয়ে আসতে বলেন শিমুল।
মাইক্রো চালক রিমেল জানান, স্ট্রোকে আক্রান্ত আব্দুল মান্নানকে নিয়ে তিনি একটি দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। জামজামি আলমডাঙ্গা সড়কের যমুনার মাঠের রাস্তা মাঝখানে উচু আর দুই পাশে ঢালু। একটি পাখি ভ্যান রাস্তার মাঝ দিয়ে জামজামির দিকে যাচ্ছিল। তিনি পাখি ভ্যানকে সাইড দিতেই একটি মোটরসাইকেল সামনে পড়ে। এসময় দ্রæত ব্রেক করলে মাইক্রোবাস গিয়ে একটি গাছের সাথে ধাক্কা লাগে।