আলমডাঙ্গা-মিরপুর উপজেলার ওসমানপুর ও পাগলা গ্রামের সংযোগ ব্রীজটি হুমকির মুখে
মরা কুমার নদ থেকে অবৈধভাবে যথেচ্ছা বালু তোলার ফলে আলমডাঙ্গা উপজেলা -মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়নে সংযোজক ব্রীজটি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ইতোমধ্যে বসে গেছে ব্রীজের মিরপুর উপজেলার দিকের সংযোগ সড়কের অংশবিশেষ। বেশ কয়েক বছর ধরে ব্রীজের পাশে অবৈধভাবে বালু তোলার মহ্যৎসব চললেও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে এলাকা বাসির অভিযোগ।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে হুমকিতে পড়েছে আলমডাঙ্গা উপজেলা ও মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়নের সংযোগ সড়কের মরা কুমার নদের উপর নির্মিত ব্রীজটি। ব্রীজটির একাংশে আলমডাঙ্গা উপজেলার ওসমানপুর গ্রাম। অন্যপ্রান্তে, মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়নের গোপীনাথপুর -পাগলা গ্রাম। দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় কুমার নদ প্রবাহিত। যেটি ফাঁরাক্কার অভিশাপে এখন মরা নদী নামে পরিচিত। ওই নদের উপর নির্মিত ব্রীজটি।
গত ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে আলমডাঙ্গা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় ৩১ লাখ ১৭ হাজার ৪৮২ টাকা ব্যয়ে ব্রীজটি নির্মাণ করা হয়। আলমডাঙ্গার হারদীতে অবস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিস ( হাসপাতাল) যাতায়াতের সুবিধার জন্য এটি নির্মিত হয়। অর্থাৎ, মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়নসহ আশপাশের গ্রামের মানুষ আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদী হাসপাতালের উপর চিকিৎসার জন্য নির্ভরশীল। এই হাসপাতালে সহজে যাতায়াত ও হারদী কলেজ, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, মেডিকেল টেকনোলজি ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া পার্শ্ববর্তী মিরপুর উপজেলার শিক্ষার্থিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ব্রিজটি তৎকালীন হাদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের প্রচেষ্টায় নির্মিত হয়।
বেশ কয়েক বছর ধরে ব্রীজের নিকট থেকে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালি তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। ব্রীজের মিরপুরের প্রান্তের অংশ বিশেষ ইতোমধ্যে বসে গেছে। ওই প্রান্তে সংযোগ সড়কের অংশবিশেষ ধ্বসে গেছে। অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, যে কোন সময় ব্রীজটি সম্পূর্ণ ধ্বসে যেতে পারে।
অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু ট্রাক্টর দিয়ে পরিবহন করায় নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি ও গ্রামীণ রাস্তা। দুই উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বছরের পর বছর ধরে ন থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে শক্তিশালী একটি চক্র। এ কারণে স্থানীয়রা প্রকাশ্যে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। মিরপুর উপজেলার গোপীনাথপুরের আব্দুল হামিদ অবৈধভাবে বালি তুলে বিক্রি করেন। আব্দুল হামিদ মুলত জাসদের রাজনীতির সাথে জড়িত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। কিন্তু ইউপি নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেলে আবার জাসদে ফিরে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরপুর উপজেলা প্রশাসন একাধিকবার ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে বালি উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আবার বালি উত্তোলন শুরু করেন। সম্প্রতি মিরপুর উপজেলা প্রশাসন আবারও বালি উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ- এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন অজ্ঞাত কারণে গ্রহণ করেন না কঠোর কোনো আইনি ব্যবস্থা।
মিরপুর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কুমার নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী হচ্ছেন জাসদ নেতা আব্দুল হামিদ। মুলত সরকারি দলের নেতাদের আশ্রয়ে থেকে অপকর্ম করে থাকেন তিনি। এই বালিখোরদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
মিরপুর মালিহাদ ইউনিয়নের গোপিনাথপুর পাগলা গ্রামের জাইদুল ইসলাম জানান, কুমার নদের এই ব্রীজের আশপাশ থেকে দীর্ঘদিন ধরে পাগলার হামিদুল বালি তুলে বিক্রি করছিল। হঠাৎ পানি ছাড়ায় ব্রীজের একপাশ ধসে পড়েছে।
মালিহাদ ইউপি সদস্য গোপিনাথপুর পাগলা গ্রামের আবেদ আলী জানান, আগে থেকেই ওখানে বালি তোলা হচ্ছিল। এরপর কুমার নদে হঠাৎ পানি ছাড়ায় ব্রীজের নিচের মাটি সরে যাওয়ায় ব্রীজ ধসে পড়েছে একথা সবাই বলছে।
আলমডাঙ্গার হারদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশিকুজ্জামান ওল্টু বলেন, ব্রীজটি ধসে পড়ায় আলমডাঙ্গা ও মিরপুরের হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। ব্রীজটি দ্রুত পূণঃনির্মানের উদ্যোগ নিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।