আলমডাঙ্গায় ঈমাম পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে ২২ মন্ডলের বিভেদে একই গ্রামে ৬ টি ঈদের জামায়াত
আলমডাঙ্গার ছোট্ট এক গ্রাম পাইকপাড়ায় পৃথক ৬ স্থানে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হওয়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এক ইমামকে কেন্দ্র করে ২২ মন্ডলের বিভেদে এক গ্রামে ৬ জায়গায় ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মন্ডলদের এই অমার্জনীয় বিভেদ দূর করতে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। ফলে মন্ডলদের গ্রাম্য কুট রাজনীতি প্রশাসনের শুভ উদ্যোগকে ভেস্তে দিয়ে ছোট্ট গ্রামটিতে ৬টি ঈদের জামায়াত আয়োজন করে। এ ঘটনায় আশপাশের গ্রামগুলোতে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
গ্রামসূত্রে জানা গেছে,পাইকপাড়া গ্রামের একটি মাত্র ঈদগাহ ময়দানে আলহাজ্ব মাওলানা ইউনুস আলী গত বছরও ঈদের জামায়াতে ইমামতির দায়িত্ব পালন করেন। এবারও তাঁরই দায়িত্ব পালনের কথা ছিল। কিন্ত কোন এক শুক্রবারে মসজিদের বয়ানে আলহাজ্ব মাওলানা ইউনুস আলীর বক্তব্যে গ্রাম্য মন্ডলদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। মসজিদের সভাপতি হাজি মুরাদ আলীকে ঈঙ্গিত করে তিনি তাঁর ভাই শিল্পপতি নাসির উদ্দীন বিশ্বাসের স্বাক্ষর জাল করে সভাপতি হয়েছেন বলে উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন। ওই বক্তব্যকে পূঁজি করে গ্রামের কিছু মন্ডল মাওলানা ইউনুস আলীর পেছনে আর নামাজ পড়বেন না বলে ঘোষণা দেয়। গত ৩০ মার্চ ইমাম পরিবর্তন করতে মসজিদে আলোচনায় বসেন মন্ডলরা। এতে মন্ডলরা দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েন। এ ঘটনায় মন্ডলদের মাঝে ঈদের জামায়াত নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়।
এই উত্তেজনার গরম হাওয়া উপজেলা প্রশাসন পর্যন্ত গড়ায়। গত ৩ এপ্রিল উপজেলা প্রশাসন মন্ডলদের ডেকে দ্বন্দ্ব ভুলে একত্রে মিলেমিশে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠানের আহবান জানায়। এই আহবানে সুরাহা না হলে গত ৪ এপ্রিল থানায় ডাকা হয় মন্ডলদের। থানার ওসিও ঘাড় ত্যাড়া মন্ডলদের এক সুতোয় বাঁধতে পারেননি। ফলে ঈদের সকালে পাইকপাড়া গ্রামে পুলিশের ঘোরাফেরার মধ্যে ২২ মন্ডলের নেতৃত্বে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ৬ টি জামায়াতে নামাজ আদায় করেন গ্রামবাসী। কোন কোন জামায়াতে ২শ,১শ আবার ৫০ জনকেও নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।
গ্রামসূত্রে জানা গেছে, বিতর্ক ওঠা ইমাম আলহাজ্ব মাওলানা ইউনুস আলীর ইমামতিতে ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায় করেন সাহারুল মন্ডল, জহুরুল মোল্লা মন্ডল,সাহেদ আলী মন্ডল,হাসান আলী মন্ডল, শাহাজাহান মন্ডল,সাদ আহমেদ মন্ডল, মালেক মন্ডল ও আলতাফ মন্ডল,ঈদগাহ'র সাবেক সভাপতি আজিজুল হকসহ তাদের অনুসারীরা।
পাইকপাড়ার চরপাড়া মসজিদে একই সময়ে আরেকটি ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। এখানে ইমাম আল আমিনের ইমামতিতে কামাল মন্ডল, বজলু মন্ডল, বিশারত মন্ডল ও আনিছুর মন্ডলসহ তাদের কিছু অনুসারী নামাজ আদায় করেন।
গ্রামের হাজিপাড়ায় শাহাজাহান মন্ডল, রহমান মন্ডল, খয়রুল মন্ডল ও নোমাজ মন্ডলের নেতৃত্বে আরো একটি ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। এ জামায়াতে মাওলানা ওমর ফারুক ইমামতি করেন।
ঘোষপাড়া মক্তবে পলান শেখ,সেন্টু কাজির নেতৃত্বে ঈদের আরো একটি জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। এ জামায়াতে রাকিবুল হোসেন ইমামতি করেন।
ঘোষপাড়ায় রফিকুল মন্ডলের বাড়ির পাশে খোলা জায়গায় একই সময়ে আরো একটি জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। রফিকুল তার কিছু অনুসারীদের পেছনে রেখে নিজেই ইমামতি করেন।
অপর জামায়াত অনিষ্ঠিত হয় পাইকপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মাসজিদে। এ জামায়াতে সিরাজুল মন্ডল, কেরু মন্ডল, বাকের মন্ডল ও আইয়ুব মন্ডলের নেতৃত্বে তাদের অনুসারীরা অংশ নেয়। ইমামতি করেন আব্দুল মোমিন।
পাইকপাড়া ঈদগাহ ময়দানের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক জানান, আমি হজ্বে যাব বলে ঈদগাহ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। গ্রামে বেশ কয়েকটা ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হলেও ঈদগাহ ময়দানে তিনি মাওলানা ইউনুস আলীর পেছনেই নামাজ আদায় করেছেন বলে জানান।
পাইকপাড়া পুলিশ ক্যাম্পের টু-আইসি আব্দুল হাই জানায় ,অন্যান্য পুলিশ সদস্যকে সাথে নিয়ে তিনি ঈদগাহ ময়দানে ডিউটি পালন করেছেন। গ্রামে আরো কয়েক জায়গায় ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে তিনি জানান।