আলমডাঙ্গায় অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করছেন আমেরিকা প্রবাসী গবেষক
সেই জন সেবিছে ঈশ্বর
প্রখ্যাত ইংরেজ কবি-সাহিত্যিক জন মিল্টন বলেছেন, মানুষের তিনটি দায়িত্ব। " ডিউটি টু ওয়াল্ড গড, ডিউটি টু ওয়াল্ড প্যারেন্ট এন্ড ডিউটি টু ওয়াল্ড ম্যানকাইন্ড।"
তিনটা দায়িত্বের মধ্যে আবার ম্যানকাইন্ড বা মানবসেবাই সবচে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মানবসেবার দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে প্রথম দায়িত্ব অর্থাৎ স্রোস্টার প্রতি দায়িত্বও পালন করা হয়ে যায়।
তাই বুঝি স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, "জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর!"
জীবের আত্মারূপে স্রষ্টা স্বয়ং জীবের মধ্যেই অবস্থান করেন। তাই জীবের সেবা করলেই আসলে স্রষ্টারই সেবা করা হয়। বস্তুত জীবের প্রতি আন্তরিক না হলে স্রষ্টার নৈকট্য লাভ করা সম্ভব নয়। স্বয়ং স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালোবাসার মাধ্যমেই কেবল স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করা সম্ভব।
মহৎপ্রাণ মানুষেরা সেটাই করেন। যুগে যুগে উদাহরণ হয়ে আছেন। তেমনই এক উদ্যোগ নিয়েছেন আমেরিকা প্রবাসী গবেষক ও আলমডাঙ্গার কৃতি সন্তান শেখ আব্দুল কাদির। তিনি নিজ উদ্যোগে আলমডাঙ্গায় একটা অত্যাধুনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা করছেন (প্রাথমিক কাজ চলমান)।
আলমডাঙ্গার ইতিহাসে গঙ্গাধর জালান ও যুক্তফ্রন্টের অবিসংবাদী নেতা ডাক্তার রিয়াজ উদ্দীন আহমেদ এলাকার জনসাধারণের জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অধুনালুপ্ত গাঙ্গবাড়ি ছাত্রবাস ছিল তৎকালীন দাতব্য হাসপাতাল। হাসপাতালের ফ্রি চিকিৎসক ছিলেন এই অঞ্চলের প্রথম এমবিবিএস পাশ ডাক্তার রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি অবশ্য নিজ এলাকায় কালাজ্বরের বিশেষায়িত হাসপাতালও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই প্রথম এবং সেই শেষ উদ্যোগ। জনসেবার এই মহান পথে আর কেউ সচেতনভাবে পা বাড়ায়নি।
লিও টলস্টয় বলেছেন, "জীবনের মূল মানেটা হলো নিজের সব কিছু দিয়ে মানবতার সেবা করা।"
ডাক্তার রিয়াজ উদ্দীন আহমেদ সেই ধরণের ব্যক্তিত্ব ছিলেন। স্ত্রীর গহনা বন্ধক রেখে স্কুল কলেজ, মসজিদ, হাসপাতাল নির্মাণ করেছেন। এমনকি আলমডাঙ্গার এ টিম বি টিম মাঠও তার অবদান।
পরবর্তীতে আর কেউ ওই পথরেখা অনুসরণ করেন নি। আলমডাঙ্গা ছিল মূলত মাড়োয়াড়ী প্রধান ব্যবসা সফল মফস্বল। এখানে লাভ ব্যতিত ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কেউ তেমন কিছু করেন না। দীর্ঘকাল পরে আরেক মনিষীকে পাশে পেতে চলেছেন আলমডাঙ্গাবাসী। তিনি শেখ আব্দুল কাদির।
আগামী ১৪ এপ্রিল তাঁর স্বপ্নের নীলা-শুকতারা ফাউন্ডেশন হাসপাতাল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। জন্মস্থানের মানুষের জন্য তিনি যে অপরিসীম ঋণ অনুভব করেন, সেই ঋণের কিছুটা দায়মুক্তি হিসেবে তিনি এখানে অত্যাধুনিক হাসপাতালে করতে উদ্যোগ নিয়েছেন।
কে এই শেখ আব্দুল কাদির? আলমডাঙ্গা শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মিয়াপাড়ার বাসিন্দা মরহুম শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের দ্বিতীয় পুত্র শেখ আব্দুল কাদির।
তিনি আমেরিকা প্রবাসী গবেষক ও সমাজসেবক। শিক্ষা জীবন কৃতিত্বের সাথে সমাপ্তির পর
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলো হিসেবে (১৯৮২-৮৪), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে জ্বালানী গবেষণা ও উন্নয়ন ইন্সটিটিউট (Bangladesh Council of scientific & Industrial Rrsarch (BCSIR), ঢাকা'র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৮৪-৯৫ সাল অব্দি কর্মরত ছিলেন।তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানী শক্তি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নালে তাঁর অনেক গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তি প্রযুক্তি সংক্রান্ত বেশ কিছু পেটেন্ট ও তাঁর করায়ত্ত। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয় জাপানের সৌজন্যে Indian Institute of Technology (IIT) দিল্লি ভারতে ফেলোশিপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৈজ্ঞানিক সমাবেশে উপস্থিত থেকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা উপস্থাপনা করেছেন।
১৯৯৫ সাল থেকে অভিবাসী হিসেবে আমেরিকায় বসবাস করছেন এবং ২০১৮ সাল পর্যন্ত সেখানকার একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে "কোয়ালিটি কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ার ও ল্যাবরেটরি ইনচার্জ" হিসেবে চাকুরি করেছেন। বর্তমানে
"ফাউন্ডেশন অফ চ্যারিটেবল এক্টিভিটিস বাংলাদেশ" (এফসিএবি) নামক একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কান্ট্রি ডিরেক্টর। সংস্থাটি ফ্রি হেলথ ক্লিনিক, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন, ফ্রি প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা, গর্ভবতী ও দুগ্ধপ্রদানকারী মায়েদের পুষ্টিকর খাবার বিতরণ ও গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যকর পায়খানা বিতরণ কর্মসূচি পরিচালনা করে।
ছাত্রজীবন থেকেই তিনি জনসেবামূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। তিনি শিক্ষার্থিদের বৃত্তি প্রদান,দরিদ্রদের এককালীন অনুদানসহ নানা সেবামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন।
১৯৮৮ সাল থেকে আজোবধি এলাকায় বিনামূল্যে চক্ষু শিবিরের আয়োজন, অপারেশন ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছেন।
তিনি নিজ এলাকায় অত্যাধুনিক হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছেন ( নীলা-শুকতারা ফাউন্ডেশন হাসপাতাল)। আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাসপুর এলাকায় জমি ক্রয়ের পাশাপাশি বিদ্যুৎ লাইন সরবরাহের ব্যাবস্থা করে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোপূর্বে হাসপাতালের আার্কিটেকচারাল ডিজাইন ও প্ল্যানের কাজ শেষ করেই নির্মাণ কাজ আরম্ভ করা হয়েছে। ১৪ এপ্রিল বহু কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের প্রস্তাবিত " নীলা-শুকতারা ফাউন্ডেশন হাসপাতাল" নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন চুয়াডাঙ্গা -১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। নির্মাণ কাজের দেখভাল করছেন তাঁর সহোদর ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব শেখ আব্দুল জব্বার। এ বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মিত হলে এলাকায় স্বাস্থযসেবার মান অনেকাংশে উন্নত হবে। এমনটাই বিশ্বাস করেন এলাকার সচেতন সমাজ। অত্যাধুনিক এ হাসপাতালটি ঘিরে আলমডাঙ্গাবাসীর স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়ন হবে। এমনটা সকলের প্রত্যাশা।
রহমান মুকুল