আলমডাঙ্গা নওদাদূর্গাপুরে কুকুরের সাথে নয় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নিহত হন পিন্টু
আলমডাঙ্গার নওদাদূর্গাপুরে কুকুরের সাথে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেল চালক পিন্টু মারা যাননি। একই গ্রামের তিন যুবকের দ্রæতগতির মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পড়ে গিয়ে পিন্টু মারা যান বলে পরিবারসহ গ্রামের অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন।
গ্রামের কয়েকটি সূত্র জানায়,ওই তিন যুবককে আড়ালে রাখতে গ্রামের একটি চক্র দুর্ঘটনাস্থলে কল্পিত কুকুর এনে হাজির করে নাটক সাজিয়েছে। দূর্ঘটনার পরপরই তারা গ্রামে প্রচার চালায়, মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরা পিন্টু কুকুরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মারা গেছে। মাতৃপিতৃহীন নিহত পিন্টুর অতি অসহায় পরিবারটি মৃত্যুশোকে পাথর হয়ে অপ্রচারটি মেনে নিতে বাধ্য হলেও নিভৃতে অবিরত চোখের জল ফেলছেন।
একাধিকসূত্র জানায়, পিন্টু যখন মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তখন একই গ্রামের সজীব, সায়েম ও জাহিদ নামের তিন যুবক দ্রæতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এই তিন যুবকের মোটরসাইকেলের সাথে পিন্টুর মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। পিন্টু সড়কে পড়ে গেলে তিন যুবকের মোটরসাইকেল তাকে পিষে দিয়ে চলে যায়। ঘটনার পরপর তারা তিনজনই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়।
সূত্র জানায়, ওই তিন যুবকের গ্রাম্য প্রতিনিধি গ্রামে প্রচার করতে থাকে পিন্টু কুকুরের সাথে ধাক্কা লেগে দূর্ঘটনায় পতিত হয়ে মারা গেছেন। তারা দুর্ঘটনাস্থল গ্রামে ঢোকার মুখে পানবরোজের নির্জনতাকে কাজে লাগায়। এতে কাজও হয়। সবাই মোটামুটি বিশ্বাসও করে। কিন্ত দূর্ঘটনায় পড়ে ওই তিন যুবকের হাতে পিঠে আঘাতের পাওয়ার ঘটনায় মূল সত্য বেরিয়ে আসে।
তিন যুবকের মধ্যে মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসেছিলেন নওদাদুর্গাপুর গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে সায়েম। তিনি জানান,"পিন্টু মোটরসাইকেল চালিয়ে আসার সময় পানবরজের কাছে এলে আমাদের মোটরসাইকেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে সড়কে পড়ে যায়।"
এসময় তাদের মোটরসাইকেল পিন্টুর মাথার ওপর দিয়ে গেছিল কিনা এ বিষয়ে সায়েম বলেন, "সে সময় আমি কিছু খেয়াল করিনি। আমার হাতে ও পিঠে আঘাত লাগায় আমি কাতর ছিলাম।"
নিহত পিন্টুর মেয়ে মাদ্রাসা ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন বলেন, "আমার মা আট বছর আগে মারা গেছেন। আব্বা ছিলেন একমাত্র ভরসা। আমার মাথার ওপর এখন কেউ নেই। গ্রামের লোকের কারসাজির প্রতিবাদ করার মত মানসিক শক্তি নেই বলে জানান সুমাইয়া। পিতৃ-মাতৃহীন আমাদের কী হবে এই ভেবে কুল পাচ্ছি না। এই মিথ্যা নাটকের প্রতিবাদ করার ক্ষমতা আমাদের নেই। সব আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছি।"
গত ১ মার্চ শুক্রবার দুপুরে নওদাদূর্গাপুর গ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় পিন্টু নিহত হন। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হারদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন।
নিহত পিন্টু আলী(৪৫) উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের নওদাদূর্গাপুর গ্রামের রবগুল ইসলাম মেম্বারের ছেলে।
ঘটনার দিন নওদাদূর্গাপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আয়নাল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, পিন্টু তার ভগ্নিগতিকে বন্ডবিল মন্ডলপাড়া জামে মসজিদে রেখে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। তিনি জানিয়েছিলেন, কুকুরের সাথে ধাক্কা খেয়ে পিন্টু সড়কের ওপর ছিটকে পড়ে মারাত্মক আহত হন। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন।
গ্রামের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আয়নাল মেম্বারের সাথে কুকুরের অপপ্রচারে যোগ দেন নওদাদুর্গাপুরের আসাদুল হক আশু ও একই গ্রামের কাজি আব্দুস সালাম।
এ সংক্রান্ত অভিযোগের সত্যতা তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন অনেকেই।