আলমডাঙ্গায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পক্সি দিতে গিয়ে কারাগারে যুবতী
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ/বিএসএস পরীক্ষায় আলমডাঙ্গা উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মারজাহান নিতুর হয়ে পক্সি দিতে গিয়ে জেলখানায় গেলেন সালমা খাতুন নামের অনার্স পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী। শনিবার (১০ ফেব্রæয়ারি) আলমডাঙ্গা মহিলা ডিগ্রী কলেজে চলমান উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ/বিএসএস পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমান্য আদালত পরিচালনা করে তাকে ১ বছরের কারাদন্ড ও ২শ টাকা জরিমানা করা হয়।
আটক সালমা খাতুন আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ও পৌর এলাকার রাধিকাগঞ্জের জহুরুল ইসলামের মেয়ে।
জানাগেছে, ডিগ্রী পাশ করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ উন্মক্ত বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন আলমডাঙ্গা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মারজাহান নিতু। তার শিক্ষার্থী আইডি নং ২০-০-২৩-৪০৬-০৮৪। কিন্তু মারজাহান নিতু কোন পরীক্ষাতে অংশ গ্রহণ করেন না। তার পরিবর্তে পরীক্ষাগুলোতে প্রক্সি দিয়ে আসছিলেন সালমা।
১০ ফেব্রুয়ারি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে বিএ / বিএসএস ' সমাজতত্ব বিষয়ের ৪র্থ সেমিস্টারের ৩য় পর্বের পরীক্ষায় কাজী মারজাহান নিতুর পরিবর্তে আগের মতই অংশ গ্রহণ করেন সালমা। সে সময় প্রবেশপত্রের ছবির সাথে চেহারায় মিল না থাকায় কক্ষ পরিদর্শকের সন্দেহ হয়। এরপর প্রক্সি দেওয়ার ঘটনা রেবিয়ে আসে। এসময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজওয়ানা নাহিদ উপস্থিত হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে ১ বছরের কারাদন্ড ও আর্থিক জরিমানা করেন।
জানা যায়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএ/ বিএসএস 'র ৪র্থ সেমিস্টারর পরীক্ষা চলছে। আলমডাঙ্গা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মারজাহান নিতু পরীক্ষার্ত্থি ছিলেন। তার শিক্ষার্থী আইডি নং ২০-০-২৩-৪০৬-০৮৪ । ইতোমধ্যে দুটি পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে।
১০ ফেব্রুয়ারি ছিল ৩য় পর্বের সমাজতন্ত্র পরীক্ষা। গত ২ দিনের মত পরীক্ষা দিতে যাননি কাজী মারজাহান নিতু। তার পরিবর্তে যথাসময়ে আলমডাঙ্গা মহিলা ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষায় অংশ নেন সালমা খাতুন। বিপত্তি বাধে কক্ষ পরিদর্শক কর্তৃক উত্তরপত্র স্বাক্ষরের সময়। কক্ষ পরিদর্শক প্রবেশপত্রের ছবির সাথে সালমা খাতুনের কোন মিল পাননি। ফলে জিজ্ঞাসাবাদে ফেঁসে যান সালমা খাতুন। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্র সচিবের কক্ষে। বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সহকারী কমিশনার ( ভূমি) রেজওয়ানা নাহিদ। তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সালমা খাতুনকে ১ বছরের কারাদন্ড ও ২ শ' টাকা জরিমানা করেন।
অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে পাবলিক পরীক্ষা আইন ১৯৮০ সালের ৩ এর খ ধারায় এই শাস্তি প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সহকারী কমিশনার রেজওয়ানা নাহিদ।
আলমডাঙ্গা মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আশুরা খাতুন বলেন, ডিগ্রি ৪র্থ সেমিস্টারের সমাজতত্বের ৩য় পত্রের পরীক্ষা ছিল। প্রবেশপত্রের ছবির সঙ্গে পরীক্ষার্থির চেহারার মিল না থাকার কারণে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সে সময় তিনি নিজের অপকর্মে স্বীকার করে লিখিতভাবে ক্ষমাও চেয়েছেন। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় আলমডাঙ্গা থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হচ্ছে।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ গণি মিয়া বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতে সালমার বছরের জেল হয়েছে। এ ঘটনায় কলেজের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। তাকে চুয়াডাঙ্গা জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, গত দুটি পরীক্ষা কাজী মারজানা নিতুর হয়ে কীভাবে সালমা খাতুন নিরাপদে অংশ নিতে পারল? কেন বহিস্কার করা হয়নি? এমন প্রশ্ন তুলছেন আলমডাঙ্গার অনেকেই। তাদের দাবি -- মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মারজানা নিতু খুব পরিচিত। তাকে খুব ভালোভাবেই কলেজের সকল শিক্ষক চেনেন। অন্যকেউ তার হয়ে বার বার পরীক্ষা দিয়ে চলে যায়। অথচ, পরীক্ষা গ্রহণের সাথে জড়িতরা বুঝতে পারেন না, এটা মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনা বছরের পর বছর ধরে ঘটে আসছে বলেও অনেকে জোর মন্তব্য করছেন। টাকার বিনিময়ে অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে এসে সালমা ধরা পড়ল আর ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে গেল কাজী নিতু।
প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিকট থেকে টাকা নিয়ে মহিলা ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্র নকলের সুযোগ করে দেওয়া হয় বলে অনেকে মন্তব্য করছেন। তাদের দাবি উন্মুক্তের পরীক্ষা মানেই উন্মুক্ত নকলের পরীক্ষা। এ ব্যাপারে তারা কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান।