রাতে ব্যাধ ও সুইপারসহ পিছিয়পড়া জনগোষ্ঠীর বাড়ি গিয়ে কম্বল দিলেন আলমডাঙ্গার ইউএনও
‘অনেক রেতে (রাতে) আমাদের এখানে টিএনও স্যার এছিলো (এসেছিল)। উনি আমাগের দুখ সুক্কের কতা শুনলো। খুবই কষ্ট পাইছে। পরে জাড়ের ( শীতের) জন্য আমাদের একখান কম্বল দিয়ে চলে গ্যালো। এখন আর জাড় লাগবে না। "
কথাগুলো আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার রেললাইনের পাশের ঝুপড়িতে বসবাসকারী এক ব্যাধ পরিবারের বৃদ্ধা লক্ষী রানীর।
প্রচন্ড শীতের রাতে এলাকার, হত দরিদ্র,অবহেলিত, গরিব মানুষগুলোর কষ্ট নিজের চোখে দেখতে নিয়মিত বের হচ্ছেন চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্নিগ্ধা দাস। সঙ্গে নিয়ে যান ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া কম্বল ও শুকনো খাবার। প্রয়োজনে নিজের টাকায় কিনে নিয়ে যান কিছু।
গতকাল বুধবার রাতেও তিনি বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে অসহায় মানুষদের হাতে কম্বল ও শুকনো খাবার তুলে দেন। পরে রেললাইনের ঢালে বসবাসকারী সুইপার ও ব্যাধ সম্প্রদায়ের ঝুপড়িতে উপস্থিত হন।
পারকুলা, ও নতিডাঙ্গা, গড়গড়ি ও নারায়ণপুর আবাসনে বসবাসকারী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে কম্বল বিতরণ করেন। এছাড়ার উপজেলার বিভিন্ন লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানায় শিশুদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন। গাড়িতে যাওয়ার পথে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে অসহায় দরিদ্র ভ্যানচালকদেরও কম্বল করেন তিনি। উপজেলার বিভিন্ন বাজারের পাহারাদারদের মাঝেও কম্বল বিতরণ করেন। গ্রামে ঘুরে তিনি প্রকৃত গরিব মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা শোনেন। আর যাদের বেশি প্রয়োজন এমন গরিব দুস্থদের কম্বল দেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, এ পর্যন্ত ১২ শ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
গতকাল রাতে ইউএনও স্নিগ্ধা দাস তাঁর সাথে গাড়িচালক মোস্তাফিজ ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এনামুল হককে সঙ্গে নিয়ে রওনা হন। কখনো গাড়িতে, কখনো হেঁটে তিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দরিদ্র মানুষদের ঘরে গিয়ে কথা বলেন।
বাঁশ ও পলিথিন দিয়ে তৈরি ছাপড়া খাসকররা এলাকার রহিম আলীর। তিনি বলেন, ‘প্রচÐ জাড়ে খুব কষ্ট হচ্ছিলো। এখন একখান কম্বল পাইছি। জাড় আর কাবু করতি পারবে নানে। আল্লাহ ওনার ভালো করুক।’
হাটখোলা পাঁচলিয়ার ভিক্ষুক অহিদ আলী বলেন, ‘জাড়ের জ্বালায় ঘুমাতাম না। এখন ভালোই আছি।’
ইউএনও স্নিগ্ধা দাস বলেন, " পরিষদ চত্ত্বর থেকে কম্বল বিতরণ করলে মুহুর্তেই শ শ কম্বল শেষ হয়ে যায়। দেখা যায়, একই পরিবারের সকলে পেয়েছেন। কিন্তু গ্রামের সবচে অসহায় মানুষটি বঞ্চিত থেকে গেলেন। এই সমস্যা যাতে আমাদের উদ্দেশ্য ব্যাহত করতে না পারে এবং গ্রামের গরিব মানুষের শীত-কষ্ট নিজের চোখে দেখে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কম্বল দিয়েছি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সত্যিকার যাদের প্রয়োজন, তাদের পাপ্যতা নিশ্চিত করতে চেয়েছি।"