মানুষকে লোভ দেখিয়ে প্রতারনা চক্রের ৩ সদস্য গ্রেফতার
শরিফুল ইসলাম রোকন: মানুষকে লোভ দেখিয়ে প্রতারনা করাই তাদের পেশা। প্রতারক চক্রের সদস্যদের টার্গেট বিশেষ করে মধ্যবয়সী নারী। তারা মোটা অংকের টাকার লোভ দেখিয়ে নগদ টাকা, সোনার গহনা নিয়ে পালিয়ে যায়। এমনই এক প্রতারক চক্রের সদস্যকে আটক করেছে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ।
আটক প্রতারক চক্রের সদস্য রানা (৩১) নারায়নগঞ্জ জেলা রুপপুর উপজেলার চানপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে। পালাতক তার সহযোগী একই গ্রামের রনি ও শাকিল।
জানা যায়, ঘটনা ঘটেছে গত প্রায় ১ মাস পূর্বে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সামনে। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বটিয়াপাড়া গ্রামের কামিনী খাতুন তার মেয়েকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে যায়। ডাক্তার কিছু পরীক্ষা নিরিক্ষা করার জন্য বলে। কামিনী তার মেয়েকে হাসপাতালে রেখে বাইরে দোকানে আসে। এসময় প্রতারক চক্রের এক সদস্য কামিনীর সাথে আলাপচারিতা করে। মোটা অংকের টাকার লোভ দেখিয়ে স্বর্ণের চেন, লকেট ও কানের দুল এবং নগদ ১০ হাজার টাকা নিয়ে সটকে পড়ে প্রতারক চক্র। ২৮ নভেম্বর সকাল ১১ টার দিকে কামিনী তার বোনের সাথে আলমডাঙ্গা শহরে আসে। এসময় দেখতে পায় ওই প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে। তাদের দুজনকে ধাওয়া করে স্থানীয়দের সহযোগীতার আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
প্রতারিত কামিনী জানান, আমার মেয়েকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডাক্তারের নিকট দেখানোর পর কয়েকটি পরীক্ষা করতে বলে। এসময় প্রতারক চক্রের সদস্যরা আমার নিকট এসে পরিচয় করে। বিভিন্ন কৌশলে আমার নিকট থেকে গলার চেন ও লকেট এবং কানের দুল খুলে নেয়। এরপর তারা আমার ভ্যাগ থেকে ১০ হাজার টাকাও নিয়ে নেয়। এরপর আমি অসুন্থ হয়ে পড়ি। পরে জানতে পারি আমার টাকা ও গহণা প্রতারকেরা নিয়ে গেছে।
প্রতারক চক্রের সদস্য রানা জানায়, তারা চারজন এই প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা বিশেষ করে নারীদের টার্গেট করে। পরে তাদেরকে বিভিন্ন দামী জিনিসের লোভ দেখিয়ে নগদ টাকা, সোনার গহনা নিয়ে সটকে পড়ে। তারা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সামনে থেকে কামিনীকে টার্গেট করে তার সাথে এক প্রতারক পরিচয় হয়। তাকে বলে খালা আমার কাছে প্রায় দেড় লাখ টাকার মেডিসিন আছে। আমি বিক্রয় করতে গেলে পুলিশে ধরতে পারে। আরেক সদস্য বলে আপনি সহযোগীতা করলে আপনাকে টাকা দেব। পরে প্রতারক চক্রের এক সদস্য কামিনীকে নিয়ে যায় আরেক প্রতারকের কাছে। সে ওই জিনিসের দাম বলে দেড় লাখ টাকা। সেখান থেকে একটু আড়ালে গিয়ে প্রতারক কামিনীকে বলে আমরা ওকে ৭০ হাজার টাকা দাম বলবো। আর বাকী টাকা আমরা দুজন ভাগ করে নিব। তাহলে আপনি বিক্রয় করে নিয়ে আসে। তবে এত টাকার জিনিস নিয়ে যাবেন, আপনিকে তো আমরা চিনি না। আপনি আপনার চেন, কানের দুল ও কিছু টাকা আমার কাছে রেখে যান। কামিনীর টাকার লোভে চেন, কাদের দুল ও নগত ১০ হাজার টাকা দিয়ে ওই জিনিসটা বিক্রয় করতে যায়। প্রতারক চক্রের সদস্যরা চেন, কানের দুল ও টাকা নিয়ে সটকে পড়ে। পড়ে দেখতে পায় ওই প্যাকেটে এক কেজি সুজি।
তারা আলমডাঙ্গা শহরে প্রতারণা করার জন্য রাতে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর রেলগেটের পাশে হোটেল আল- হায়াত আবাসিকে উঠে। সেখান থেকে সকালে আলমডাঙ্গা শহরে আসে। এরই মধ্যে কামিনী চিনে ফেলায় দুজন পালিয়ে যায় আর আমাকে আটক করে। সে আরও জানায়, যখন সামনে যা পায় সেটা দিয়েই প্রতারনা করি। এমনকি ইটও দিই। দুপুরে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ হোটেলে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের বাকী দুই সদস্য রনি ও শাকিলকে গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে। এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, প্রতারিত নারী ও তার বোন স্থায়ীদের সহায়তায় এক প্রতারক চক্রের সদস্যকে আটক করে থানায় সংবাদ দেয়। পরে পুলিশ ওই প্রতারক চক্রের সদস্যকে থানায় করে নিয়ে আসে। ঘটনাস্থল চুয়াডাঙ্গা সদর থানায়। সেকারণে প্রতারক চক্রের সদস্যকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের নিয়ে গেছে এবং প্রতারক চক্রের বাকী দুই সদস্যকে কুষ্টিয়া সদর থানা এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে।