আমি একজন সাবরেজিস্টার। আমার একটা পাওয়ার আছে
"আমি একজন সাবরেজিস্টার। আমার একটা পাওয়ার আছে। আমার কিছু দাবি-দাওয়া ও চাহিদা থাকবে না? উপরোক্ত বক্তব্য আলমডাঙ্গা সাব রেজিস্টার নূরে তোজাম্মেল হোসেনের। সম্প্রতি তিনি উৎকোচের নতুন খাত আবিষ্কার(?) করে দলিল প্রতি মোটা অংকের টাকা নিচ্ছেন। দলিল লেখকরা দাবিকৃত টাকার পরিমাণ কমানোর জন্য সাব রেজিস্টারের সাথে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় সাবরেজিস্টার দলিল লেখকদের নানা অনুনয়-বিনয় সত্বেও পূর্বের ধার্যকৃত দলিলপ্রতি ৫ হাজার থেকে কমিয়ে ৪ হাজারে নিয়ে আসেন। দলিল লেখকরা ৩ হাজারে নামাতে অনেক কাকুতিমিনতি করেন। এক পর্যায়ে সাড়ে ৩ হাজারে রাজি করানোর চেষ্টা করেন দলিল লেখকরা। কিন্ত সাবরেজিস্টার তার ৪ হাজারে অনড় থাকেন। পরদিন ৪ হাজার করেই নিতে থাকেন। গতকালও এই হিসাবেই নিয়েছেন।
জানা গেছে, সিআর না থাকলে দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে সাব রেজিস্টার ৫ হাজার করে দলিল প্রতি টাকা নিতেন। এ বিষয়ে তাদের সাব রেজিস্টারের সাথে এক মিটিং হয়। দলিল লেখকরা দলিল প্রতি সাড়ে তিন হাজার করে নিতে খুব অনুনয় বিনয় করলেও মন গলেনি সাব রেজিস্টারের। তিনি ৪ হাজার টাকা করে উৎকোচ পুণর্নিধারণ করেন। ওই মিটিং-এ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি গোপনে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড ধারণ করেন।সেই অডিও রেকর্ডে সাব রেজিস্টারের উপরোক্ত বক্তব্য রয়েছে।
একাধিক দলিল লেখকসূত্রে জানা যায়, সাব রেজিস্টার নূরে তোজাম্মেলের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ওয়ারেশসূত্রে প্রাপ্য জমি বিক্রির দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে খতিয়ান প্রতি ৪ হাজার টাকা করে উৎকোচ নেন তিনি। ক্রেতা উপস্থিত না থাকলে কিংবা বিদেশে অবস্থান করলে দলিল প্রতি নেন ১ হাজার টাকা করে।
বেলা ৩ টার পর দলিল রেজিস্ট্রি করতে দলিল প্রতি ৫ শ থেকে ২ হাজার টাকা অতিরিক্ত উৎকোচ নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দলিলের নকল উঠাতে সরকারি ফির ৩ গুণের অধিক অর্থ নেন এমন অভিযোগও রয়েছে। এমনকি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এমন কারণ দেখিয়ে তিনি হায়ার ভ্যালু নামের উৎকোচের খাতের অংক বাড়িয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এ সব অনিয়মের তথ্য দিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দলিল লেখকরা জানান, ইতোপূর্বে এক দলিল লেখক সাংবাদিকদের তথ্য দিয়েছিলেন এমন অভিযোগ তুলে বেশ কয়েক মাস তার কোন দলিল সাব রেজিস্টার রেজিস্ট্রি করেন নি। বড় অসহায় জীবনযাপন করেছিলেন সেই দলিল লেখক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা সাব রেজিস্টার নূরে তোজ্জামেল হোসেন। তিনি আইন ও বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন নিবন্ধন অধিদফতরের অধীনে জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫-এর নবম গ্রেডে বেতন পান। তিনি সাকুল্যে বেতন উত্তোলন করেন প্রায় ৩৭ হাজার টাকা। তিনি সপ্তাহে ৪ দিন অর্থাৎ রবি, সোম, মঙ্গল ও বুধবার অফিসে আসেন বাকী দিনে দামুড়হুদা উপজেলা সাব রেজিস্টারের দায়িত্ব পালন করেন।আলমডাঙ্গা উপজেলা সাব রেজিস্টার হিসেবে কর্মরত থাকলেও তিনি চুয়াডাঙ্গা শহরে বাড়িভাড়া করে অবস্থান করেন। অফিস ডে -তে নোহা মাইক্রোবাসযোগে ( ঢাকা মেট্টো -গ- ১৪-৬২৯৩) চুয়াডাঙ্গা থেকে আলমডাঙ্গা অফিসে যাতায়াত করেন। প্রতিদিন মাইক্রোবাস ভাড়া দিতে হয় তিন হাজার টাকা। মাসে ১৬ দিন যাতায়াত বাবদ ৪৮ হাজার টাকা গুণতে হয়।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, সাব রেজিস্টারের দুর্নীতি সংক্রান্ত সংবাদ গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়েছে। তা সত্বেও গতকালও তিনি ওয়ারেশসূত্রে প্রাপ্য জমি বিক্রির দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে খতিয়ান প্রতি একই পরিমাণ অর্থাৎ, ৪ হাজার টাকা করে উৎকোচ নিয়েছেন তিনি।