১৮ দিন পর কুষ্টিয়ার ইজিবাইক চালক সবুজের লাশের কঙ্কাল চুয়াডাঙ্গায় উদ্ধার
কুষ্টিয়া শহর থেকে নিখোঁজের ১৮দিন পর ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চালক সবুজের লাশের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে। ৭ সেপ্টেম্বর বিকালে চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের ঘোরামারা মাঠ থেকে কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে ইজিবাইক চালক সবুজের লাশের কঙ্কাল উদ্ধার করে হয়। গ্রেফতারকৃত এ্যাম্বুলেন্স চালক ও ইজিবাইক চালককে হত্যাকারী ২ আসামীর স্বীকারোক্তীতে লাশের কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ।
জানাগেছে, গত ১৯ আগস্ট কুষ্টিয়া শহর থেকে পৌরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বারাদী এলাকার মৃত বাচ্চু মন্ডলের ছেলে ও ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চালক সবুজ(৩০)কে ভাড়া করে। তাকে ভাড়া নিয়ে একই ওয়ার্ডের শফিকুল ইসলামের ছেলে তুষার (২৫) ও ত্রিমহণীর নজরুল ইসলামের ছেলে জনি(২৮) রেইনউইক বাধে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে হত্যা করে। পরে লাশ পূর্ব মজমপুর একটি বাড়িতে রেখে পাবনায় ইজিবাইক বিক্রয় করতে যায়।
সেখানে ইজিবাইক বিক্রয় করে এসে এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে চুয়াডাঙ্গায় রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য। এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার মিরপুর উপজেলার চারুলিয়া গ্রামের সরোয়ার পরামানিকের ছেলে বাচ্চু। তুষার রোগী সেজে এ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে ছিল। তাদের সাথে ছিল মহিলা ও বাচ্চা। যাতে কেউ দেখলে মনে করে তারা রোগী নিয়ে যাচ্ছে। এরপর তারা লাশ নিয়ে চুয়াডাঙ্গা ঘোরামারা ব্রিজের নিকট একটি ঝোপের মধ্যে ফেলে দেয়।
সবুজের সন্ধান না পেয়ে তার মা রেহেনা খাতুন কুষ্টিয়া মডেল থানায় ছেলে নিখোঁজ মর্মে জিডি করে। পুলিশ ও সবুজের পরিবার তাকে খোঁজ করতে থাকে।
এরআগে ৪ আগস্ট নিখোঁজ হয় কুষ্টিয়া জগতির উত্তরপাড়ার ইজিবাইক চালক হিরু। হিরুর পরিবার কুষ্টিয়া মডেল থানায় জিডি করে। কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ ইজিবাইকে ছিনতায়ের সিসি ফুটেজ দেখে জনিকে আটক করে। তাকের আটকের পর তার স্বীকারোক্তীতে আটক করা হয় তুষারকে। তারা জানায় হিরুকে হত্যা করে পূর্বমজমপুর একটি আমবাগানে লাশ পুতে রাখা হয়েছে। গত ২৫ আটক হিরুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
গত কয়েকদিন আগে জনি ও তুষারকে রিমান্ডে নিয়ে আসে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ। রিমান্ডে নিয়ে আসার পর জানায় তারা সবুজের ইজিবাইক ছিনতাই করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তার লাশ এ্যাম্বুলেন্স যোগে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা শহরের আগে মাঠে বস্তায় ভরে ফেলে দিয়েছি। জনি ও তুষারের স্বীকারোক্তিতে গ্রেফতার করা হয় এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার বাচ্চুকে। বাচ্চু জানায় জনি ও তুষার আমাকে ভাড়া করে নিয়ে যায়। তাদের সাথে মহিলাও বাচ্চা ছিল। আমাকে চুয়াডাঙ্গা শহরের আগে একটি মাঠে দাঁড় করিয়ে একটি বস্তা মাঠের ঝোপের মধ্যে ফেলে দেয়।
৭ সেপ্টেম্বর মিরপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে কুষ্টিয়া ডিবি পুলিশের এসআই সুলতান, মডেল থানা পুলিশের এসআই মনিরুজ্জামানসহ সঙ্গীয় অফিসার ফোর্স আটক ৩ আসামীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ঘোড়া মারা ব্রিজ নিকট কয়েক ঘন্টা ব্যাপী অভিযান চালায়। সন্ধ্যার ঠিক আগ মূহূর্তে ঘোরামারা ব্রিজ ও ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটির মাঝামাঝি চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের পাশের রাস্তা ও কলাবাগানের মাঝে একটি নালা থেকে এ কঙ্কাল উদ্ধার করে।
সবুজের চাচা রাশিদুল জানান, ঘটনার দিন রাত ১১টার দিকে ইজিবাইকের গ্যারেজ মালিক মোবাইল ফোনে জানায় সবুজ এখনো গাড়ি নিয়ে আসেনি। সারারাত আমরা তাকে খোঁজাখুঁজি করে। না পেয়ে সকালে সবুজের মা মডেল মডেল থানায় জিডি করে। সবুজ নিখোঁজ হওয়ার দিন লাল গেঞ্জি ও পরনে লুঙ্গি ছিল। লাল গেঞ্জি ও লুঙ্গি দেখে সবুজের লাশের কঙ্কাল বলে সনাক্ত করেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাব্বুর রহমান কাজল ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে একটি লাশের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে জানাগেছে কঙ্কালটি কুষ্টিয়া থেকে নিখোঁজ ইজিবাইক চালক সবুজের লাশের। ইজিবাইক চালকের চাচা রাশিদুল ইসলাম গেঞ্জি ও লুঙ্গি দেখে সনাক্ত করেন। লাশের হাড়গুলোর সুরতাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কুস্টিয়ার মিরপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক বলেন, কুষ্টিয়া থেকে ১৯ আগস্ট ইজিবাইক ছিনতাই করে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তার লাশ এ্যাম্বলেন্স যোগে নিয়ে এসে চুয়াডাঙ্গা কুৃষ্টিয়া সড়কের ঘোরামারা মাঠের গভীর রাতে ফেলে দিয়ে যায়। আটক ৩ আসামীর স্বীকারোক্তিতে চুয়াডাঙ্গা ঘোরামারা মাঠ থেকে ইজিবাইক চালক সবুজের লাশের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে।