আলমডাঙ্গার জিকে প্রজেক্টের ১৩ ভেক্টর জমির বোরোক্ষেতে পানি নেই।। কৃষকের আহাজারি
আলমডাঙ্গা উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর বোরো ধানের মাঠ ফেটে চৌচির। তীব্র দাবদহে ফসলি মাঠের পানি শুকিয়ে এই দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সন্তানস্নেহে লালিত ফসল চোখের সামনে বিবর্ণ হয়ে যেতে দেখে কৃষকদের মাঝে এখন কারবালার মাতম।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ইরিগেশন খালের আওতাধীন এসকল হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের আওতাধীন ইরিগেশন খালের পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় ফসলি জমি হয়েছে শুষ্ক। তার উপর এই জেলায় একাধারে চলছে অনলপ্রবাহ। এতে বিপাকে পড়েছে আলমডাঙ্গা উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান চাষীরা। কৃষকদের মাঝে এখন বুকভাঙ্গা আহাজারি।
বিকল্প হিসেবে শ্যালো মেশিনে পানি দিতে এক বিঘা জমিতে প্রতিদিন ৪/৫ লিটার তেল খরচ করতে হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয় কৃষকদের। বোরো মৌসুমে ধানের জমিতে নিয়োমিত সেচ দিতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।
জানাযায়, আলমডাঙ্গা উপজেলায় জিজে প্রকল্পের ইরিগেশন খালের অধিনে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হচ্ছে। জিকে প্রজেক্টের আওতাধীন মাঠে রোরো ধান চাষে কৃষকেরা সম্পূর্ণভাবে জিকে ক্যানেলের পানির উপর নির্ভরশীল। চলতি মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দু'টি মোটর অকেজো হয়ে আছে। এতে চাহিদামত পানিসরবরাহ দিতে পারছে না পাণি উন্নয়ন বোর্ড। কৃষকদের দাবি - ১০/১২ দিন পর পর পানি সরবরাহ করা হচ্ছে বাই রোটেশনে।
অথচ, এখন বোরো ধান ক্ষেতে প্রতিনিয়ত পানি প্রয়োজন। অধিকাংশ ধানক্ষেতে ধানের ছড়া বের হচ্ছে অথবা সদ্য বের হয়েছে।এমন পরিস্থিতিতে তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। জিকে প্রজেক্টের ইরিগেশন খালে পানি না থাকায় হাজার হাজার হেক্টর আবাদি জমির ধানের ক্ষেত ফেটে চৌঁচির হয়ে গেছে। দিশেহারা কৃষকরা ফসল বাঁচাতে প্রতিদিন শ্যালোইঞ্জিন চালিত টিউবওয়েলের মাধ্যমে সেচ দিচ্ছেন। বিঘাপ্রতি ৪/৫ লিটার করে ডিজেল লাগছে বলে জানা যায়। ফলে উৎপাদন খরচ অত্যাধিক হতে চলেছে।
আলমডাঙ্গা উপজেলার জামজামি মধুপুর এলাকার ধান চাষি আজিমউদ্দিন জানান, "এবছর খাল মাঠে দুই বিঘা বোরো ধানের আবাদ করেছি। জিকে সেচ প্রকল্পের পানির সুবিধার কারণে এই মাঠে সেচ পাম্প নেই। কারণ জিকে সেচ প্রকল্পের পানিতেই সেচ চলে। এবার আমরা বিপদে পড়েছি। মাঠে পানি দেওয়া হচ্ছে না ঠিকমত। ক্যানেলে পানি যদি না আসে তাহলে ধান নষ্ট হয়ে যাবে।"
কৃষক মিলন হোসেন জানান, "হুট করে ক্যানেলে পানি বন্ধ করে দিল। এখন তো মেশিন দিয়ে পানিও নিতে পারবো না। আমার সবুজ নকনকে ধান। কেবল শীষ বেরাচ্ছে। আর একন পানি নেই। জমি একদম ফেটে গিয়েচে। পানি দিতি না পারলি আগেই বলে দিত। আমরা ধান লাগাতাম না। না হলি শ্যালো কিনতাম। চোকির সামনে কষ্টের ধান নষ্ট হচ্চে। সহ্য হয় না। বুক ফাটে যায়।"
কাশিপুর গ্রামের কৃষক হোসেন আলী জানান, ধান ফুলছে। এখন জমিতে পানি না থাকলি তো ধান চিটে হয়ে যাবে। যে রোদ পড়ছে এমনিতেই ধানের মাথা পুড়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে মাটি একদম শুকিয়ে ফেটে গিয়েছে।"
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী জানান, "এই অঞ্চলে বোরো ধান যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন। হঠাৎ জিকে ক্যানেলে পানি কমে যাওয়ায় কৃষকেরা অনেকটা ঝামেলার সম্মূখিন হয়েছেন। যাতে দ্রূত জিকে ক্যানেলে পানি সরবরাহ করা হয়,সে বিষয়ে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলেছি।"
চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ আহমেদ বলেন, " পানি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে কুষ্টিয়া অফিস। আমরা ইরিগেশন খাল মেইনটেইন্স করি। সেচখালগুলি পানি সরবরাহের উপযুক্ত করে রাখি।"
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার সেচ সম্প্রসারণের প্রধান প্রকৌশলী আয়ুব হোসেন জানান, "পদ্মা নদীরে পানি সঙ্কটের কারণে আমরা শুধু একটা পাপম চালাতে পারছি। তাও পরিপূর্ণভাবে না। এক পাম্পে ১২ কিউসেক পানি তুলতে পারলেও বর্তমানে তার অর্ধেক পানি তোলা সম্ভব হচ্ছে।"
তিনি আরিও বলেন, "ফারাক্কা থেকে ১০ দিন অন্তর অন্তর বাংলাদেশে পানি ছাড়া হয়। ফলে নিরবচ্ছিন্নভাবে পদ্মায় পানির স্রোত থাজে না। সোমবার সন্ধ্যা থেকে আলমডাঙ্গা -চুয়াডাঙ্গা অঞ্চল পানি পাবে। অসুবিধা হয়ে যাবে কুষ্টিয়া অঞ্চলের কৃষকদের। তারা পানি পাবেন পরবর্তী ১০ দিন পর।"