সেনাবাহিনীতে চাকুরী দেবার প্রতিশ্রুতি দিতে প্রাইভেট ভাড়া করে করে সেনা সদস্য রাজিব
৬ জেলার চাকরি প্রার্থিদের সাথে যোগাযোগ করে বাড়ি ফিরে মাইক্রোবাসের ড্রাইভারের সাথে ভাড়া নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন সেনা সদস্য রাজিব। পরে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেন। ১৪ মার্চ গভীর রাতে পুলিশের কাছ থেকে মুক্তি হন তিনি। আলমডাঙ্গা উপজেলার প্রাগপুরের তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে রাজিবুল ইসলাম রাজিব। তিনি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে চাকুরিরত। বর্তমানে কক্সবাজার রামুতে অস্থায়ী ক্যাম্পে কর্মরত রয়েছেন।
সেনাবাহিনীতে চাকুরী দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বেশ কিছুসংখ্যক যুবকের সাথে দেখা করতে আলমডাঙ্গা থেকে একটি প্রাইভেট কার ভাড়া করেন। ৪০ হাজার টাকায় মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে ৫ দিন ধরে তিনি দেশের ৬ জেলার ১০/১২ উপজেলায় গিয়ে বিভিন্ন চাকুরী প্রার্থিদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ৫ দিনের মিশন শেষে বাড়ি ফিরে মাইক্রোবাস ভাড়া কম দেওয়া নিয়ে মাইক্রো ড্রাইভারের সাথে বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন রাজিব। বিষয়টি পুলিশ পর্যন্ত গড়ালে পুলিশ সেনা সদস্য রাজিবকে ও ড্রাইভার মিলনকে থানায় নিয়ে যায়। পরে মুচলেকা দিয়ে তিনি থানা থেকে বাড়ি ফেরেন। এ সময় জানাজানি হয়ে যায় সেনাসদস্যের চাকুরি বাণিজ্যের নানা তথ্য। যদিও এ সকল অফিসের সেনাসদস্য অস্বীকার করেন, তবুও তার এ রহস্যজনক ভ্রমণ নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, রাজিবুল ইসলাম রাজিব গত ৯ মার্চ বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার জন্য ৪০ হাজার টাকায় মাইক্রোবাস ভাড়া করে ৫ দিনের ভ্রমণ শেষে ১৪ মার্চ ফিরে আসেন। ৫ দিন ধরে তিনি দেশের ৬ টি জেলার ১০/১২ টি উপজেলায় ভ্রমণ করেন। ভ্রমণকালে তিনি স্ত্রীকে সাথে নিলেও এক পর্যায়ে স্ত্রীকে একাই বাড়ি পাঠিয়ে দেন। পরে কয়েক দিনব্যাপী একাই ভ্রমণ করেন। মাইক্রোবাস চালক মিলন জানান, ৯ মার্চ তিনি পাবনায় যান। সেখান থেকে বেড়া উপজেলা, শাহজাদপুর উপজেলা, নগরবাড়িয়া যান। সেখান থেকে কাশিনাথপুর এক পরিচিতের বাড়ি রাত্রিযাপন করেন। পরদিন শাহজাদপুর থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে বগুড়া যান। সেখানে রাতে আবাসিক হোটেলে উঠেন। পরদিন সকালে গোবিন্দগঞ্জ, শম্ভুগঞ্জ হয়ে বিরামপুরের এক হোটেলে উঠেন। সকালে হিলি বর্ডার হয়ে নওগাঁ যান। সেখান থেকে চাপাই নামক স্থানে এক পরিচিতের বাড়ি রাত যাপন করেন। চাপাই থেকে বহু এলাকা ঘুরে পুণরায় নওগাঁ যান। পরে সেখান থেকে যান গাইবান্ধা। গাইবান্ধা থেকে যান রাজশাহী। রাজশাহী থেকে নাটোর ও ঈশ্বরদী হয়ে গভীর রাতে আলমডাঙ্গা ফেরেন। মোট ১৬২৪ কিলোমিটার ঘোরেন। আলমডাঙ্গায় নেমে ভাড়া পরিশোধ করতে গিয়ে বিতন্ডায় জড়ান সেনা সদস্য।
এদিকে, সেনাসদস্য রাজবের এ রহস্যজনক ভ্রমণ নানা আলোচনা ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। একজন সেনাসদস্য এত টাকা খরচ করে কেন দেশের বিভিন্ন জেলায় ৫ দিনব্যাপী ভ্রমণ করলেন? কেন তিনি কোন দর্শনীয় স্থানে যাননি? তাহলে কী এটা নিছক ভ্রমণ ছিল না? এমন নানা প্রশ্ন।
মিলন ড্রাইভার জানান, সেনাসদস্য রাজিব মূলত সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন চাকুরী প্রার্থীর সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। তিনি যে সব চাকুরী প্রার্থীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন, তাদেরকে মাইক্রোবাসের মধ্যে তুলে নিয়ে জানালা আটকে কথা বলেছেন। মিলন জানান, মাইক্রোবাসের ভেতর যেহেতু কথা হচ্ছিল। তাই বেশির ভাগ কথায় তিনি শুনেছেন। গাড়ির ভেতরে এ সব চাকুরী প্রার্থীর উচ্চতা মাপসহ পলিপাস ও শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা উৎরানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলেন তিনি। সেনাসদস্য রাজিব তাদের সাথে সাত লাখ করে টাকায় কন্ট্রাক্ট করেছেন। এ সব এলাকায় তিনি দালাল সেট করেছেন। প্রতি চাকুরী প্রার্থীর জন্য দালাল পাবেন ৫০ হাজার টাকা। মিলন আরও জানান, সবার কাছে সেনাসদস্য রাজিব নিজেকে আর্মি অফিসার শুভ নামে পরিচয় দিচ্ছিলেন।
তবে সেনাসদস্য এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত পরিচিত ব্যক্তিদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি।