১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খাসকররা মাধ্য‌মিক বিদ্যাল‌য়ের ল্যাপটপ চু‌রি ক‌রে বিক্র‌য়ের ঘটনায় প্রধান শিক্ষক ও ক্রেতা তিন পুলিশের বিরু‌দ্ধে তদন্ত শুরু

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩
173
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

আলমডাঙ্গার খাসকররা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের ল্যাপটপ স্থানীয় ক্যাম্পের তিন পুলিশের কাছে বিক্রির ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। তোপের মুখে পড়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম সিদ্দিক ও তিন পুলিশ সদস্য। ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষক বিক্রিত ল্যাপটপ ফেরত নিয়ে বিদ্যালয়ের ল্যাবে জমা দিয়েছেন।


জানা যায়, গতকাল সোমবার আলমডাঙ্গার খাসকররা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ল্যাবের ল্যাপটপ বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম সিদ্দিক, আইসিটি শিক্ষক পাপিয়া সুলতানা ও ল্যাব সহকারী সজল হোসেনকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি আলম নূর ডেক পাঠান। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তিনি দুপুরে তাদের তলব করেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় প্রধান শিক্ষক অকপটে বিদ্যালয়ের ল্যাবের ল্যাপটপ বিক্রি করে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এ সময় তিনি কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান।


উপজেলা অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রগ্রামার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ের ল্যাবের ল্যাপটপ প্রধান শিক্ষক বিক্রি করেছেন পুলিশ সদস্যদের কাছে এ ঘটনাটি আমি পত্রিকা পড়ে জানতে পারি। পরে বিদ্যালয়ের ল্যাবে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে সবগুলি ল্যাপটপ দেখতে পেয়েছি। ফলে ভেবেছিলাম পত্রিকার সংবাদ ভিত্তিহীন। কিন্তু পরবর্তীতে জানতে পেরেছি যে, ঘটনাটি জানাজানি হলে বিক্রিত ল্যাপটপ ফেরত নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। বিষয়টি বিব্রতকরও।


অনেকের ধারণা, সুষ্ঠু তদন্ত হলে এ ন্যাক্কারজনক ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে প্রধান শিক্ষকের। এমনকি চাকুরিচ্যূতও হতে পারেন।


বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত প্রায় ৫ মাস বেতন বন্ধ অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম সিদ্দিকের। অবৈধ পন্থায় বিদ্যালয়ে জনবল নিয়োগের দায়ে বেতন ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিদ্যালয়ের ল্যাবের ল্যাপটপ বিক্রি করে দেবার মত অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।


অন্যদিকে, বিদ্যালয়ের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের ল্যাপটপ কিনেছিলেন যে তিন পুলিশ সদস্য তাদের বিরুদ্ধেও বম তদন্ত শুরু হয়েছে। সরকারি চাকুরত তিন পুলিশ সদস্যের বিদ্যালয়ের ল্যাবের ল্যাপটপ ক্রয়ের ঘটনা মুখরোচক কাহিনি হিসেবেও এলাকায় ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের এ অবৈধ ও অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে তিন পুলিশ সদস্য ক্রয় করেছেন ল্যাপটপগুলি।


এ ঘটনায় পৃথকভাবে আরেকটি তদন্ত শুরু হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান জানান, তিনি নিজেই ঘটনাটি তদন্ত করছেন। তদন্তের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে অভিযুক্ত তিন পুলিশ সদস্য ও প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেছেন।


প্রশঙ্গত, খাসকররা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবে মোট ১৭টি ল্যাপটপ রয়েছে। প্রধান শিক্ষক গোলাম সিদ্দিক ফেরৎ দেয়ার শর্তে নিজে ব্যবহার করবেন বলে ১টা, তার মেয়ের জন্য ১টা এবং বোনের মেয়ের জন্য ১টা মোট ৩টি ল্যাপটপ স্কুল থেকে নিয়ে যান। কয়েক মাস হয়ে গেলেও তিনি ল্যাপটপ তিনটি আর ফেরৎ দেননি। সম্প্রতি ফাঁস হয়ে যায় যে, ল্যাপটপ তিনটি তিনি স্থানীয় ক্যাম্পের তিন পুলিশ সদস্যের কাছে অল্প দামে বিক্রি করে দিয়েছেন।


প্রধান শিক্ষক যে ল্যাপটপগুলি বিক্রি করছেন, সেগুলি বিদ্যালয়ের। তিনি গোপনে বিক্রি করছেন। এটা ক্রেতা পুলিশরাও জানতেন। এই সুযোগ তারাও নিয়েছিলেন। তারা কিনলেও ল্যাপটপের প্রতিশ্রুত মূল্য দিচ্ছিলেন না। প্রধান শিক্ষকও প্রকাশ্যে টাকার জন্য চাপ দিতে পারছিলেন না। এরই মধ্যে ল্যাপটপ কেনা এক কনস্টেবল বদলী হয়ে অন্যত্র চলে যান। বেকায়দায় পড়েন প্রধান শিক্ষক। তিনি ক্যাম্পের আইসির কাছে গোপনে ঘটনা খুলে বলেন এবং এর একটা সুরাহার আবেদন জানান। এরপর এক কান থেকে দুই কান হয়ে ঘটনা এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়। ঘটনাটি দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকাসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram