৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গার খামারপাড়া-মধুপুর জি‌কে সেচ প্রক‌ল্পের খা‌লে গাছ কাটার ম‌হোৎসব চল‌ছে

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
জানুয়ারি ৯, ২০২৩
73
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

সকাল থেকেই কুড়াল-করাত দিয়ে একের পর এক সরকারি ক্যানেলের বড় বড় গাছ কাটছিল ১০/১২ জন লোক। আরও কয়েক জন অপেক্ষায় ছিলেন। গাছ মাটিতে পড়তেই করাত দিয়ে তা খন্ড খন্ড করে ট্রলিতে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছোট ছোট ডাল-পালাগুলো পাশের বাড়ির নারীরা টেনে টেনে বাড়িতে নিচ্ছেন। এ কাজে অংশ নিয়েছে বাড়ির ছেলে-মেয়েরাও। ক'দিন ধরেই ক্যানেলের ওপর ও পাশে মাথা উচু করে দাড়িয়ে থাকা বড় বড় গাছ কাটতে শুরু করে ওই এলাকার চিহ্নিত কয়েকজন।

অতি গুরুত্বপূর্ণ গাছগুলো কাটা হচ্ছে আলমডাঙ্গার জামজামির খামারপাড়ার জিকে প্রকল্পের দুটি সেচ খালের পাড় থেকে।
রবিবার দুপুরে এ প্রতিনিধি জামজামির মূল জিকে ক্যানেল থেকে বের হওয়া ইরিগেশন খালের আঁকাবাঁকা পথ ধরে গাছ নিধনের মহোৎসবস্থলে হাজির হন। গাছ খেকোরা কোন ভ্রুক্ষেপ না করেই করাত চালিয়ে একেকটি গাছ মাটিতে ফেলে দিচ্ছিল।


খামারপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিনটি মেহগনি গাছ কাটতে পেরেছেন। রীতিমত লেবার নিয়ে গাছ কাটছে তিনি।


সামনে এগোতেই চোখে পড়লো মধুপুর গ্রামের হুমায়ুন নামের একজন একটি বড় বেল গাছ কেটে মাটিতে ফেলে ডালপালা ঝুড়ছেন। হুমায়ুনের সাথে অংশ নিয়েছেন তার স্ত্রী ও ছেলেরা। হুমায়ন থেকে আর একটু দূরে কয়েকজনকে সাথে নিয়ে বড়সড় একটি গাছ কাটছে সেকেন্দার আলী। সেকেন্দার আলী এর একদিন আগে আরো দুটি গাছ কেটে নিয়েছে।


তার একটু পরেই আরো একটি মেহগনি গাছ কেটে খন্ড খন্ড করছে একই গ্রামের মন্টু মিয়া। মন্টু মিয়াও লেবার নিয়ে আটঘাট বেঁধে গাছ কাটছেন। এ সময় সাংবাদিক দেখে বেশকিছু লোকও ভিড় জমিয়েছেন। স্থানীয়রা জানালো, বেশ কয়েকদিন ধরে মধুপুর গ্রামের সোহরাব আলী প্রায় অর্ধ শতাধিক গাছ কেটে নেওয়ার পর অনেকেই গাছ কাটতে উৎসাহিত হয়।


গাছ কাটতে কে নির্দেশ দিয়েছে জানতে চাইলে মন্টু মিয়া রাখঢাক না রেখেই জানালো, ওয়াপদার গেটম্যান জামিরুল গাছ কেটে নিতে বলেছেন।


এ সময় পাশের জঙ্গলের ওপাশ থেকে জামিরুল বেরিয়ে আসেন সামনের জটলায়। তার সাথে বেরিয়ে আসেন আরেক হুকুমদাতা ওয়াপদার পানি ব্যবস্থাপনার স্থানীয় সভাপতি মধুপরের গোলাপ হোসেন । বখরা নিয়ে গাছ কাটতে এ দু'জনই নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয়দের। এ সময়ও ক্যানেলের এপাড় ওপাড়ে করাতের ধারে গাছ কাটা চলছিল।


ঠিক সে সময়ই পাশের ঝোঁপ থেকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ওয়াপদার ওভারসিয়ার হাফিজুর রহমান। গাছ কাটা দেখে তিনি কিছুটা বিব্রত হওয়ার ভান করলেন সাংবাদিকদের সামনে। তবে গাছ কাটা অন্যায় হচ্ছে বলে তিনি এক পর্যায়ে স্বীকার করলেও স্থানীয়রা জানান, হাফিজুর সকাল ১০টার পর থেকেই এলাকায় ঘুরাঘুরি করছেন। তার সামনেই গাছ গাছ কাটার মহোৎসব চলছে।


গেটম্যান জামিরুল ইসমলাম ও সেচ খালের পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির স্থানীয় সভাপতি গোলাপ হোসেন সরাসরি বললেন, ওয়াপদার উপসহারী প্রকৌশলী বকুল আহমেদ গাছ কাটার নির্দেশ দিয়েছেন।


এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে বকুল আহমেদের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ক্যানেলের পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে ক্যানেলের ভেতর পাশের আগাছা পরিস্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গাছ কাটার কথা বলা হয়নি। তিনি আরো জানান, গাছ কাটার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করা হবে।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram