আলমডাঙ্গার ভাংবাড়িয়ায় বৃদ্ধাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ছেলে, ছেলের বঊ ও নাতিছেলে গ্রেফতার
আলমডাঙ্গার ভাংবাড়িয়া গ্রাম নিজ ঘর থেকে রাহিলা খাতুন নামে এক অশীতিপর বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার প্রতিবেশিদের নিকট থেকে সংবাদ পেয়ে পুলিশ বৃদ্ধার লাশ ঘর থেকে উদ্ধার করেছে। বৃদ্ধার শরীরে বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। রাতে ছেলের বউ ও নাতিছেলে বৃদ্ধাকে নির্মমভাবে পেটায়। পরদিন সকালে বৃদ্ধার মৃত্যু ঘটে। পুলিশ বৃদ্ধার ছেলে, ছেলের বউ ও নাতিছেলেকে গ্রেফতার করেছে। এঘটনায় বৃদ্ধার ছোট মেয়ে তিনজনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
নিহত রাহিলাা খাতুন ভাংবাড়িয়া গ্রামের মৃত হুর আলীর স্ত্রী। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি ছেলে সেলিম হোসেনের (৫৫) পরিবারের সাথে বসবাস করতেন। অত্যন্ত বয়সের কারণে বৃদ্ধা স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারতেন না। বয়সজনিত নানা রোগে ভূগছিলেন। অনেক সময় প্রস্রাব পায়খানা বিছানায় করতেন। এ নিয়ে ছেলের বউসহ পরিবারের অনেকেই বৃদ্ধার প্রতি ক্ষুদ্ধ ছিলেন।
প্রতিবেশিরা জানান, বিছানায় প্রস্রাব পায়খানা করে ফেলবেন এই আশঙ্কায় রাতে তাকে ভাত না দিয়ে শুকনো পাউরুটি দেওয়া হতো। মাঝে মাঝে ভাত দিতে গেলে বৃদ্ধার ছেলে বউ আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতো।
বৃদ্ধা রাহিলা খাতুনের ছেলের ঘর থেকে দূরে বাহিরে একটি টিনের চালায় চৌকি পেতে তাকে সেখানে রাখত। রাতে বৃদ্ধার ঘরে আলোর কোন ব্যবস্থা ছিল না। অন্ধকারেই রাত কাটাতো বৃদ্ধা রাহিলা খাতুন।
গত মঙ্গলবার গভীর রাতে বৃদ্ধা কেঁদে কেঁদে ছেলেকে ডাকছিল। এতে পরিবারের অনেকের কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যায়। ছেলের বউ রিনা খাতুন (৪৫) উঠে গিয়ে বৃদ্ধ শাশুড়িকে গালমন্দ করেন। কিছু কথার জবাব দেন বৃদ্ধা। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ছেলে ও নাতিছেলে নির্মমভাবে বৃদ্ধাকে পেটায়। পিটিয়ে ঘরবন্দী করে রাখেন।
সকালে প্রতিবেশী নাসিমা খাতুন বৃদ্ধাকে ভাত খাওয়াতে গিয়ে দেখেন বৃদ্ধা গুরুতর অসুস্থ। তার এক হাত ভেঙ্গে গেছে। মাথায় ও কপালে আঘাতের চিহ্ন। কপাল দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। নাসিমা খাতুন ওই অবস্থায় বৃদ্ধাকে খাওয়ায়ে রেখে আসেন। বেলা ১১ টার দিকে তিনি আবার বৃদ্ধাকে দেখতে যান। গিয়ে দেখেন বৃদ্ধা মারা গেছেন। এ বিষয়টি অন্যান্যদের জানালে প্রতিবেশিদের অনেকে ছুটে যান। তারা বৃদ্ধার ছেলে সেলিম, ছেলের বউ রিনা খাতুন ও নাতি সম্রাটকে ঘরে আটকে রেখে পুলিশকে সংবাদ দেন। পরে পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আনেন। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছেন। প্রতিবেশিরা জানান, ছেলে ও নাতিছেলে বাইলধারা দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে মেরেছে বৃদ্ধাকে। কে মেরে হাত ভেঙ্গে দিয়েছে তা জিজ্ঞাসা করলে বৃদ্ধা সম্রাট মেরেছে বলে নাসিমা খাতুনকে জানিয়েছিলেন।
এঘটনায় রাতেই বৃদ্ধা রাহিলা খাতুনের ছোট মেয়ে সবুরন খাতুন বাদী হয়ে ভাই সেলিম, ভাবী রিনা ও ভায়ের ছেলে স¤্রাটকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম জানান, বৃদ্ধা নানা ধরনের অসুখে ভুগছিলেন। রাতে শারিরিক অসুবিধার কারণে ডাকাডাকিতে পরিবারের সবাই বিরক্ত হত। ঘটনার রাতে বৃদ্ধা ডাকাডাকি করলে তার ছেলে, ছেলে বউ ও নাতী ছেলে তাকে মারধর করে। সকালে বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। এঘটনায় বৃদ্ধার ছোট মেয়ে বাদী হয়ে ৩ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আসামী ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।