আলমডাঙ্গা ভাংবাড়িয়ায় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট
হাটবোয়ালিয়া প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গা ভাংবাড়িয়ায় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে টোকন আলীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আরাফাত রহমান। বুধবার সকাল ১০টায় আলমডাঙ্গার ভাংবাড়িয়া কারিগর পাড়ায় বাঁশ বাগানে ঘটনাস্থলে এ তদন্ত কাজ শুরু করেন।
এসময় উপস্থিত সবাইকে উমুক্তভাবে কথা বলার সুযোগ দেন তদন্ত কর্মকর্তা। প্রথমে টোকন আলীর ভাই আকালী আলীর বক্তব্য নেন, তিনি বলেন, আমি দুই ঘন্টা পরে জেনেছি এবং ঘটনাস্থলে এসে সবকিছু জানতে পারি যে তাস খেলার কারণে পুলিশের দাবড় খেয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। পরেরদিন লাশ উদ্ধার করে খুলনার ডুবরী দল।
এসময় তদন্ত কর্মকর্তা প্রশ্ন করেন আপনার ভাই সাঁতার কাটতে জানতো কিনা। উত্তরে বলেন হ্যা আমার ভাই সাঁতার জানতো। তবে পুলিশের দাবড় খেয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে স্ট্রোক করে মারা যেতে পারে।
এরপর স্ত্রী মিতা খাতুনকে একই প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমার স্বামী পেশায় তামাক ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তাস খেলা বা জোয়া খেলা করে কি আমার জানা ছিল না। পুলিশ বলেছে যে আপনার স্বামী জুয়া খেলতে যেয়ে পুলিশের দাবড় খেয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়েছে। বাড়িতে এসেছে কি খোঁজ নিতে আসলাম। আমার কোন অভিযোগ নেই। তবে আমি একজন গৃহিণী। আমার ১০ বছর বয়সের মেয়ে ও ৫ মাস বয়সের ছেলে আছে । আপনার কাছে আকুল আবেদন আমার নাবালক দুই ছেলে মেয়েদের উপর খেয়াল রাখবেন।
তদন্ত কর্মকর্তা ভাংবাড়ীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান কে জিজ্ঞাসা করেন আপনি কি জানেন তখন চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান বলেন ঘটনার দিন আমি বিশেষ কাজে আলমডাঙ্গা থানায় ছিলাম এবং লোক মারফতে জানতে পারি টোকন পুলিশের দাবড় খেয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ। পরে ঘটনাস্থলে এসে দেখি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নদীর তীরে লাশের সন্ধান করছে।
পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলেন, ডুবুরী ছাড়া লাশ উদ্ধার করা সম্ভব নয়। তাই পরেরদিন সকালে খুলনা থেকে ডুবুরী দল এসে লাশ উদ্ধার করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা সহকারি কমিশনার ভ‚মি রেজওয়ানা নাহিদ, ভাংবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব তোফাজ্জেল হোসেন, ইউপি সদস্য আসমতুল্লা সুজন, ইউপি সদস্য বিল্লাল হোসেন, ইউপি সদস্য রিপন বিশ্বাস প্রমুখ।
উল্লেখ্য,
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর ভাংবাড়িয়া ফেরিঘাট পাড়ার আব্দুর রহমানের ছেলে আকছেদ আলী, ইয়াদুল ইসলামের ছেলে কবিরুল, সুন্নত আলীর ছেলে নাজিম ও ওসুমদ্দিনের ছেলে সবজি ব্যবসায়ী টোকন গাছের ছায়ায় বসে তাস খেলছিলেন। এ সময় পার্শবর্তি হাটবোয়ালিয়া ক্যাম্পের এএসআই জাহিদুল ইসলাম দু'জন পুলিশ নিয়ে তাসের আসরে হানা দেন। পুলিশ আকছেদ ও কবিরুলকে ধরে তাদের কাছ থেকে ২ হাজার ৮শ টাকা নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য সুজনের জিম্মায় ছেড়ে দেয়। ওই দিনই এএসআই জাহিদুল ও তার সঙ্গীয় ২ কনস্টেবলকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়।
এদিকে, পুলিশের তাড়া খেয়ে নাজিম ও টোকন পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মাথাভাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেন। নাজিম সাঁতরে ওপারে গিয়ে উঠলেও টোকন নদীর স্রোতে তলিয়ে যান। নদীর দীর্ঘ এলকাজুড়ে রাত অবধি অনেক খোঁজাখুঁজি করেও টোকনের আর সন্ধান মেলেনি। পরদিন ডুবুরি দল ভোর থেকে মাথাভাঙ্গা নদীতে টোকনের সন্ধান করতে থাকে। অবশেষে দুপুরের দিকে মাথাভাঙ্গা নদীর আঠারোখাদা এলাকা থেকে টোকনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
সে সময় নিহত টোকনের বড় ভাই আকালী ও স্থানীয়রা জানান, পুলিশের তাড়া খেয়ে টোকন নদীতে লাফ দিয়ে নিখোঁজ হয়। হাটবোয়ালিয়া ক্যাম্পের এএসআই জাহিদুল ২ হাজার ৮শ টাকা নিয়ে আটক দুজনকে ছেড়ে দেয়। কিন্ত টোকন নিখোঁজ থাকার খবরে ভয় পেয়ে দারোগা পরে ওই আটাশ শ টাকা ফেরৎ দিয়ে দেন।
টোকন আলীর স্ত্রী মিতা খাতুন (২৮)বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং বলতে থাকেন পুলিশই আমার স্বামীকে খেয়েছে, পুলিশ আমার জানকে স্বামীকে ফিরিয়ে দিক, এভাবেই কাঁদতে কাঁদতে বারবার মোর্ছা যাচ্ছিলেন।
অথচ,তদন্ত কর্মকর্তার নিকট আকালী বললেন ভিন্ন কথা। বিষটি গ্রামে সমালোচনার সৃষ্ট করেছে।