তিন দিন নিখোঁজের পর লাশ উদ্ধার, আর কেউ শুনবে না তরিকুলের মোহন বাঁশির ইন্দ্রজাল
গত তিন দিন ধরে গ্রামের কেউ তরিকুলের মোহন বাঁশির হৃদয়হরণ সুর শুনতে পাইনি। তিন দিন নিখোঁজ থাকার পর ৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভাটুই নদীর অপর পাড়ে তেতুল গাছের নীচে গলায় পাটের রশি বাঁধা অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সদ্য বিয়ে করা বউ স্বামীর কাছে আসতে অস্বীকার করাতে অভিমান -ক্ষোভে তরিকুল ইসলাম আত্মহত্যা করেছেন।
জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলার তিওরবিলা গ্রামের শাহজাহান আলী ওরফে সাহেব আলীর ছোট ছেলে তরিকুল ইসলাম (২৫)। গত বুধবার বিকেলে তিনি ঘোলদাড়ি ফুটবল খেলার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। রাতে বাড়ি না ফিরলে সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ নেন পরিবারের লোকজন। ৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে গ্রামের এক কৃযক গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভাটুই নদীর অপর পাড়ে এক তেতুল গাছের নীচে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। লাশের গলায় পাটের আঁশের রশি ছিল। ধারণা করা হচ্ছে যে, গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় রশি ছিড়ে তিনি নীচে পড়ে গিয়েছিলেন।
প্রায় এক মাস আগে তরিকুল ইসলাম চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শম্ভুনগর গ্রামে বিয়ে করেছেন। স্ত্রীর অন্যত্র প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। তাকে অমতে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন দাবী তুলে স্ত্রী প্রথম থেকেই স্বামীগৃহে যেতে অনীহা প্রকাশ করে আসছিলেন। এসব তথ্য জানিয়ে তরিকুল ইসলামের মামা রেজাউল হক জানান, সম্প্রতি তরিকুলের দুলাভাই তার শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলেন শ্যালকের বউকে নিয়ে যেতে। কিন্তু বউ যেতে রাজি হননি। সেই অভিমান -ক্ষোভে তরিকুল আত্মহত্যা করতে পারেন।
সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ সন্ধায় ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন, আলমডাঙ্গা থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত মোহাম্মদ আব্দুল আলীম, পুলিশ পরিদর্শক অপারেশন একরামুল হোসাইন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। রাত ১০ টায় গ্রামের গোরস্তানে লাশ দাফন করা হয়েছে।
সাহেব আলীর ৩ সন্তানের মধ্যে তরিকুল ইসলাম ছিলেন ছোট। গ্রামে সরলসোজা ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কৃষি কাজের পাশাপাশি রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। খুব ভালো বাঁশি বাজাতেন। তার বাঁশির সুরের ইন্দ্রজাল সকলকে মুগ্ধ করতো। ফলে, মা-বাবা, ভাই-বোনসহ আত্মীয় পরিজনের পাশাপাশি গ্রামবাসীও প্রচন্ড শোকাহত।