আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের ৬ শিক্ষার্থি মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ অর্জন
আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এ বছর ৬ শিক্ষার্থি মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ অর্জন করে মফস্বল শহরবাসীকে চমকে দিয়েছে। দীর্ঘ করনার দু:সময়কে জয় করে এমন চমৎকার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থিদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও।
এই কলেজ ছাড়াও আলমডাঙ্গা উপজেলায় আরও ৬টি কলেজ রয়েছে। সেগুলি থেকে একজন শিক্ষার্থিও মেডিকেলে পড়ার সুযোগ অর্জন করতে পারেনি। ফলে এ কলেজের শিক্ষকরাও শিক্ষার্থিদের সাফল্যে ভীষণ আনন্দিত-উদ্বেলিত।
৫ এপ্রিল মেডিকেল অ্যাডমিশনের ফলাফল বের হয়। একই কলেজের ৬ সহপাঠী মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় তাদেরকে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে তাদের সহপাঠী বন্ধুদেরও।
দীর্ঘ করোনাকালীন লেখাপড়ার দুরাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন অভিভাবকরা। অথচ, সেই দুর্যোগ অতিক্রম করে বাবা-মায়ের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নকে স্পর্শ করতে পেরেছেন প্রিয় সন্তানেরা। এতে প্রচন্ড খুশি অভিভাবকরা।
তাসনিম জাহান সোহানী ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বন্ডবিল গ্রামের শিক্ষক আহাদ আলীর কন্যা। আহাদ আলী জানান, "করোনার জন্য দীর্ঘ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সন্তানের ভবিষত নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিলাম। কিন্তু আল্লাহ্ তায়ালার রহমতে শেষ হাদি হাসতে পেরেছি। আমি মনে করে কলেজের অনলাইন ক্লাস বেশ উপকারে এসেছে। এ জন্য প্রিন্সিপ্যালসহ কলেজের সকল শিক্ষকের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।"
এ বছর কলেজটি থেকে ফারদ্বীন নাইব সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সে আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম ছরোয়ার মিঠু ও মুর্শিদা পারভিনের সন্তান।
মিথিলা নাসরিন শানু নীলফামারী মেডিকেল কলেজে ভর্তি সুযোগ পেয়েছে। সে আলমডাঙ্গা মিয়াপাড়ার ব্যবসায়ী আছির উদ্দীন শাহ ও শিক্ষিকা নাজমা আক্তার বানুর সন্তান।
তাসনিম জাহান সোহানী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সে বন্ডবিল উত্তরপাড়ার শিক্ষক আহাদ আলী ও সাবিনা খাতুনের সন্তান।
নুরানী তাজমিরিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সে কুমারী গ্রামের শিক্ষক তহুরুজ্জামান ও নাজমা খাতুন দম্পতির সন্তান।
তাসনিন নূর মিথিলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। মিথিলা গোবিন্দপুরের ব্যবসায়ী মুনিয়ার হোসেন ও শিউলী খাতুন দম্পতির সন্তান।
হোসনে আরা রূপা যশোর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।
সে কালিদাসপুরের হাবিবুর রহমান ও নিলুফা ইয়াস্মিন দম্পতির মেয়ে।
গত বছর এই কলেজ থেকে পাসকৃত কোন শিক্ষার্থি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়নি। তবে ২০২০ সালে পাশকৃত এক শিক্ষার্থি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। ২০১৯ সালে কোন শিক্ষার্থি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পায়নি। তবে, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে একজন করে মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পায়।
আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম ছরোয়ার মিঠু জানান, “আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি শিক্ষার্থিদের মানসম্মত শিক্ষা দিতে। শিক্ষকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, অভিভাবকদের সহযোগিতা আর শিক্ষার্থিদের পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়ায় আজকের এ সাফল্যের কারণ।
করোনাকালীনও এই কলেজের শিক্ষার্থিরা এইচ এসসি-তে দারুণ ফলাফল করে জেলায় ২ অবস্থান অর্জন করেছে। ২০২১ সালে ১৫৫ জন এইচ এসসি-তে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এ বছর যারা মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ লাভ করেছে, তাদের প্রতি মানবিক চিকিৎসক হওয়ার আহ্বান থাকলো।“
আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি আলম নূর বলেন, “মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অন্যান্য বিষয়ে পড়াশোনা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য শিক্ষার্থিদের এইচএসসির পড়াশোনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এসময়ে ভালো ফলাফলের পাশাপাশি পড়াশোনায় সবিশেষ মনোযোগী হলে পরবর্তী সময়ে পছন্দ অনুযায়ী তারা উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনে সক্ষম হয়।“