উত্ত্যক্তের কারণে কামালপুরের রূপবতী গৃহবধুর আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার প্রধান আসামী শাকিল মাস্টার সাময়িক বরখাস্ত
উত্ত্যক্তের কারণে আলমডাঙ্গার কামালপুর গ্রামের রূপবতী গৃহবধুর আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার প্রধান আসামী শাকিল মাস্টারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শাকিল মাস্টারকে ইতোমধ্যেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এদিকে, রূপবতী গৃহবধুকে পিটিয়ে হত্যা করে নিজ ঘরে আটকে রাখার গুঞ্জন গ্রামে ক্রমেই উচ্চকিত হচ্ছে।
জানা যায়, কামালপুর গ্রামের প্রবাসী নাজমুল ইসলামের রূপবতী স্ত্রী সোনিয়া খাতুন (২২) উত্ত্যক্তকারীদের অত্যাচারে গত ২৫ ফেব্রæয়ারি আত্মহত্যা করেন। ওই দিন সকালে গৃহবধুর শ্বশুর শাশুড়ি তাকে হারদী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ সংবাদ জানাজানি হলে সকালেই গৃহবধুর স্বজনরা উপস্থিত হন। তারা ঘটনা পুলিশকে অবহিত করে লাশ থানায় নেওয়ার ব্যবস্থা করে। সে সময় গৃহবধুর শ্বশুরের পরিবার দাবি করেন যে তাদের গৃহবধু আত্মহত্যা করেছ। তবে আত্মহত্যার নির্দিষ্ট কারণ বলতে পারেননি।
অভিযোগ উঠে - কামালপুর গ্রামের শাকিল হোসেনের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। একই গ্রামের মঙ্গল আলীর ছেলে শাকিল হোসেন (৪৫) আঠারোখাদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। স্বামী বিদেশ চলে যাওয়ার পর থেকেই শাকিল হোসেন প্রতিবেশির স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। এমনকি তার সাথে সোনিয়ার পরোকীয়ার সম্পর্ক আছে বলে গ্রামে প্রচার করতেন। শাকিল মাস্টার গ্রামে প্রচার করতেন যে গত রাত সোনিয়া খাতুনের সাথে কাটিয়েছেন। পরে শাকিলের সাথে একই গ্রামের মৃত খবিরের ছেলে বয়স্ক কলিম উদ্দীন, ফনির ছেলে রনি, আবুল কাশেমের ছেলে উজ্জ্বল, সোনিয়াকে উত্ত্যক্ত করতো। এ সব কথা শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে বললেও তারা কোন পদক্ষেপ নেননি। শাকিল হোসেনের পরিবার এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদ করার সাহস ছিল না সোনিয়ার শ্বশুরের পরিবারের।
এরই এক পর্যায়ে ২৫ ফেব্রæয়ারি সকালে দরিদ্র শ্বশুর ঘরের আড়াই গলায় ওড়নায় ফাঁস লাগিয়ে সোনিয়া আত্মহত্যা করেন বলে প্রচার করেন।
সোনিয়ার ফুফাত ভাই মোমিন হোসেন জানান, শাকিলের অত্যাচারে গৃহবধু সোনিয়ার ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় ছিল না। শাকিলদের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলত না। সোনিয়া যে কত মোবাইলের সিম পরিবর্তন করেছে তার ইয়ত্তা নেই। মোবাইলে ফ্লেক্সি লোড দিতে গেলেই শাকিলের চর কলিম উদ্দীন, উজ্জ্বল বা রনি গোপনে তা জেনে ফেলতো। শুরু হত মোবাইলফোনে উত্ত্যক্ত করা ও হুমকি। মোমিন আরও দাবি করেছেন যে, শাকিল মাস্টার সোনিয়াকে বেশ কয়েকবার হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, “ আমার বউ আছে তাই কি, তুমি চলে এসো তোমাকেও বিয়ে করবো। আমার তো টাকার অভাব নেই। যদি না আসো তাহলে তোমাকে না হয় তোমার মেয়েকে মেরে ফেলবো।ে কথা সোনিয়া তার আত্মীয় স্বজনকে জানিয়েছিল। তারা এঘটনার দু/তিন দিন আগে সোনিয়ার শ্বশুর বাড়ি গিয়ে তাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শ্বশুর যেতে দেননি।”
মোমিন হোসেনের দাবি ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ঝড় হয়েছিল। ঝড়ের পর বেল কুড়াতে রাতে ঘর থেকে বের হয়েছিল সোনিয়া। সে সময় ঘাপটি মেরে থাকা ঘাটকরা তাকে ধরে প্রচন্ড মারধর করে তার নিজের ঘরে নিয়ে আটকে রেখেছিল। লাশের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। তার কোমর ভেঙ্গে দেও্যা হয়েছিল।
এ আত্মহত্যার পর পর অভিযুক্ত শিক্ষক শাকিলসহ উক্ত ৮ ব্যক্তিই কিছুদিন নিরুদ্দেশ ছিলেন।
এ ঘটনায় সোনিয়া খাতুনের বাপ সকির উদ্দীন বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার প্রধান আসামী শাকিল মাস্টারকে ৭ মার্চ পুলিশ আঠারোখাদা বাজার থেকে আলমডাঙ্গা থানার এস আই আমিনুল হক সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তাকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস শাকিলকে (স্মারক ২৩৫/৭) সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দেন ।
আলমডাঙ্গা উপজেলা শিক্ষা অফিসার শামসুজ্জোহা জানান, শাকিল মাস্টার গ্রেফতারের পরই তাকে সাময়িক বরখাস্তের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট লিখিত নির্দেশনা চেয়ে পাঠানো হয়। পরে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দেন।