ঝিনাইদহে হত্যার দায়ে আট আসামির মৃত্যুদন্ড, রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি পরিবারের
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ- ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামে চাঞ্চল্যকর সেনা সদস্য সাইফুল ইসলাম সাইফ হত্যা মামলায় আট আসামির মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নজরুল ইসলাম হাওলাদার এ রায় দেন। এদিকে এই রায় দ্রæত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন নিহত সেনাসদস্য মো. সাইফুল ইসলাম সাইফের পরিবারের সদস্যরা। নিহতের স্ত্রী শাম্মি আক্তার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মার্শাল আর্টে স্বর্ণপদকজয়ী।
তিনি বলেন, ছোট ছেলে আবু হামজার বয়স এখন ৪ বছর। সে এখনো তার বাবা আসবে বলে অপেক্ষায় থাকে। বড় ছেলে আবু হুরাইরার বয়স ৮ বছর। সে তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র। আমার স্বামী হত্যার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড হওয়ায় স্বস্থি ফিরেছে মনে। তবে এই রায় দ্রæত কার্যকরের দাবি জানাই। নিহতের চাচা আফিজ উদ্দীন বিশ্বাস বলেন, খুনিদের সবাই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। ডাকাতি করতে গিয়েই তারা সাইফুলকে নির্মম ভাবে খুন করে। এই খুনের বিচার পেয়ে আমরা একটু হলেও স্বস্থি পেয়েছি। এই রায় দ্রæত কার্যকরের দাবি জানাই।
নিহত সাইফুল ইসলাম সাইফের মা মোছা. বুলবুলিও একই দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, খুনিরা আমার সন্তানকে মেরে ফেলেছে। আমি সন্তানহারা হয়েছি। আমার ছেলের দুই ছেলে তার বাবাকে হারিয়েছে। এমন নির্মম হত্যার রায় যদি খুব দ্রæত সময়ের মধ্যে কার্যকর করা হয় তবেই সাইফুলের আত্মা শান্তি পাবে। মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে মোটর সাইকেলে করে পাশের চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বদরগঞ্জ বাজার (দশমাইল) থেকে ছোট ভাই নৌবাহিনীর করপোরাল মনিরুল ইসলাম ও শ্বশুর শামসুল মোল্লাকে সঙ্গে নিয়ে নিজ বাড়ি উপজেলার বংকিরা (পশ্চিমপাড়া) ফিরছিলেন সাইফুল ইসলাম সাইফ।
বংকিরা ও জীবনা গ্রামের পথে বেলতলা দাড়ির মাঠ নামক স্থানে ডাকাত দল তাদের ওপর হামলা করে। সাইফ তাদেরকে চিনে ফেলায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করে ডাকাতরা। নিহত সাইফুল ইসলাম সাইফ টাঙ্গাইলের শহীদ সালাউদ্দিন সেনানিবাসের মেডিকেল ট্রেনিং সেন্টারে সেনিক পদে কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনার একদিন আগে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসেন তিনি। ঘটনার পর তার বাবা মো. হাফিজ উদ্দিন বিশ্বাস বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। পরবর্তীতে এ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে আটক করা হয়।
২০১৯ সালের ৩০ জুন ঝিনাইদহ সদর থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) মো. মহসীন হোসেন আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেন। আদালত এ মামলার রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে পাঁচ আসামি উপস্থিত ছিলেন। অন্য তিনজন পলাতক রয়েছেন।
মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তরা হলেন-সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের আকিমুল ইসলাম, একই উপজেলার বোড়াই গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, চুয়াডাঙ্গার ভুলটিয়া গ্রামের মৃত সবেদ আলী মোল্লার ছেলে ডালিম মোল্লা, সদর উপজেলার আসাননগর গ্রামের নবী মোল্লার ছেলে আব্বাস আলী, একই গ্রামের মৃত রমজান মন্ডলের ছেলে. আবুল কাশেম, মৃত সাহেব আলীর ছেলে মো. ফারুক হোসেন, বংকিরা গ্রামের ইয়াকুব্বর মন্ডলের ছেলে মতিয়ার রহমান ওরফে ফনে এবং সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের দাউদ মন্ডলের ছেলে মুক্তার হোসেন ওরফে মুক্তার।
পলাতক তিনজন হলেন- মতিয়ার রহমান ওরফে ফনে, মুক্তার হোসেন ওরফে মুক্তার এবং ডালিম মোল্লা। ডালিম উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে সৌদি আরবে পালিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল আহদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।