আলমডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে স্টেশনে ফুটওভার ব্রীজ না থাকায় ঘটছে প্রাণহানি
রহমান মুকুলঃ স্টেশনের দিকে ধেয়ে আসছে ট্রেন। পরোয়া নেই কারও। দ্রæতগামী ট্রেনের সামনে দিয়েই দৌড়ে রেললাইন পার হচ্ছে অনেকে। তাদের অনেকে বয়স্ক ও নারী। স্টেশনে ট্রেন থামলে বিড়ম্বনা বাড়ছে আরও কয়েক গুণ।
আলমডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী দোতলা রেলস্টেশনে এই চিত্র প্রতিদিনের। চিরচেনা দৃশ্য। ডাবল লাইনের স্টেশনটিতে কোন ওভারব্রীজ না থাকায় প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রী সাধারণকে। মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটে খুব স্বাভাবিক কারণে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে আলমডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের ধাক্কায় অজ্ঞাত এক বৃদ্ধ (৭০) নিহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে খুলনার দিকে যাচ্ছিল ডাউন রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেন। এসময় অজ্ঞাত এক বৃদ্ধ আলমডাঙ্গা স্টেশনের রেললাইনের উপর দিয়ে ১ নং প্লাটফর্মের দিকে যাচ্ছিলেন। ট্রেনটি আলমডাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছলে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হন ওই বৃদ্ধ। ইতোপূর্বেও এমন প্রাণঘাতী ঘটনা ঘটেছে শুধুমাত্র ঐতিহ্যবাহী এই রেলওয়ে স্টেশনটিতে একটি ফুটওভার ব্রীজ না থাকার জন্য।
ফলে ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে স্টেশনে একটি পদচারী-সেতু (ফুটওভারব্রিজ) তৈরির দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন ও স্টেশনের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই স্টেশন হয়ে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫টি আন্তনগর এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেন ঢাকাসহ দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে যাওয়া-আসা করে। স্টেশনটি ব্যবহার করেন আলমডাঙ্গা উপজেলাসহ ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু, কুষ্টিয়ার মিরপুর ও ইবি, মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার প্রায় এক হাজার গ্রামের মানুষ। ফলে স্টেশনে সব সময় ভিড় লেগেই থাকে। তাছাড়া, আলমডাঙ্গা হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচে প্রসিদ্ধ কাঁচাবাজার। পাশেই কুষ্টিয়ার পোড়াদহ দেশের বৃহতম কাপড়ের পাইকারী বাজার। তার পাশেই দেশের বৃহত্তর চালের বাজার অবস্থিত। যার কারণে আলমডাঙ্গা স্টেশনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জ্বল খন্দকার বলেন, কয়েক দশক ধরেই ট্রেনের যাত্রী ও স্থানীয় লোকজন ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পার হচ্ছে। স্থানীয় ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার স্টেশনে একটি পদচারী-সেতু তৈরির দাবি জানানো হয়েছে। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। ফলে প্রাণহানির মত দুঃখজনক ঘটনা সত্বেও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল অব্যাহত রয়েছে।
আলমডাঙ্গা উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম বলেন, ‘জনগণের জীবনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা স্টেশনে একটি ওভারব্রিজ তৈরির দাবি জানাচ্ছি।’
স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রী রিতু ইসলাম বলেন, ‘ মাঝে মাঝেই এই স্টেশন দিয়ে চলাচল করি। পারাপারের জন্য মানুষ যেভাবে ট্রেনের সামনে দিয়ে দৌড়ায়, দেখে গা ছমছম করে। আমাদের বিশেষ করে নারীদের বেশি অসুবিধায় পড়তে হয়।"
জেলা সদর থেকে আসা স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রী স্যাল্টন রহমান বলেন, ‘সারা দেশে রেলের উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু দেশের ঐতিহ্যবাহী এ স্টেশনে হচ্ছে না। স্টেশনের গুরুত্ব বিবেচনায় এখানে একটি ওভারব্রিজ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’
আলমডাঙ্গা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. সালমুন আহমেদ ডন বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে বিষয়টি রেলওয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মহলকে অবহিত করেছি। সবাই স্টেশনে একটি ওভারব্রিজ করার জন্য আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন যে ওভারব্রিজটি হচ্ছে না বুঝে উঠতে পারছি না।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ( পশ্চিম) রাজশাহী অফিসের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক অজয় কুমার পোদ্দার বলেন, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ওভার ব্রীজের জন্য জিএম বরাবর লিখিত আবেদন করলে সুবিধা হবে।
বআংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক ( পশ্চিম) রাজশাহী মিহির কান্তি গুহ বলেন, বাজেট পাওয়া সাপেক্ষে আলমডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনটিতে ফুটওভার ব্রীজের ব্যবস্থা হতে পারে। তার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রির সুপারিশ থাকলে ভালো হয়।