২৩শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হরিনাকুন্ডু মকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
সেপ্টেম্বর ৯, ২০২১
223
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 


জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ- ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু মকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় চাকুরি প্রত্যাশী আবেদনকারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, মকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একজন নৈশ প্রহরী একজন দিনের প্রহরী ও একজন আয়া নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি দেখে তিনটি পদে ১২ জন আবেদন করে।

লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য নিয়োগের একদিন আগে প্রার্থীদের হাতে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়। তাদেরকে বলা হয় মঙ্গলবার সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হবে। হঠাৎ তারা পরীক্ষার কেন্দ্র করেন হরিনাকুন্ডু সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে। সেখানে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় বেলা ১২টায়। অনুষ্ঠিত পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন আবেদনকারীদের মধ্যে ৬জন। নিয়োগ বোর্ডে ডিজির প্রতিনিধি হিসাবে নিয়োগ করা হয় বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ডেইজি খাতুনকে। বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আঃ আজিজ, উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার মোঃ ফজলুল হক ও সভাপতির নিজের ভাতিজা মকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন।

ভুক্তভোগী আবেদনকারীদের অভিযোগ প্রত্যেকের কাছ ৯লাখ টাকা করে নিয়ে কৌশলে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগের সময় স্থানীয় সাংবাদিক প্রশ্ন করলে ডিজির প্রতিনিধি জানান, এই নিয়োগের কাগজপত্রে ঝামেলা আছে। পরীক্ষা আমরা নাও নিতে পারি। ওই কথা শুনার পর সাংবাদিকরা চলে আসেন। পরে তাড়াহুড়া করে পাশের কম্পিউটারের দোকান থেকে কিছু কাগজ সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন বিদ্যালয়ের সভাপতি। এরপর নিয়োগ প্রক্রিয়া গোপনে সম্পন্ন করা হয়। বিষয়টি তদন্ত করে অবৈধ নিয়োগ বাতিলের দাবী জানান ভুক্তভোগীরা।

এর আগেও ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কাম-কম্পিউটার পদে নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সে সময়েও ১০ জন প্রার্থী আবেদন করেছিল। পরে সভাপতি ও তার ভাতিজা প্রধান শিক্ষক যোগসাজস করে কখন পরীক্ষা বা নিয়োগ দিয়েছে তা আবেদনকারীরা কেউ জানেনা বলে অভিযোগ করেন তারা। এঘটনায় আবেদনকারী প্রার্থীর স্বজন এলাকার ডাবলু নামে এক ভুক্তভোগী জানান, আমার ভাতিজা মকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। আমি আমার ভাতিজার জন্য কাম কম্পিউটারে আবেদন করি। এরপর ঝিনাইদহ পোস্ট অফিস থেকে ৫০০/= টাকা পোষ্টার অর্ডার করে সমস্ত কাগজ জমা দেই।

পরে বিদ্যালয়ে সভাপতি আঃ আজিজ সাহেব আমাকে তার নিজের বাসায় ডেকে পাঠায়। আমি গ্রামের মাতব্বর লাল্টু কে সাথে নিয়ে সভাপতির বাসায় যায়। তখন সভাপতি আঃ আজিজ সাহেব আমাকে বলে কত টাকা দিতে পারবা! আমি বললাম কাকা আমরা তো গরীব মানুষ, আর আমার ভাতিজা এতিম ওর সমস্ত খরচ আমি নিজে বহন করে লেখা পড়া শিখিয়েছি। যদি টাকা দিতে হয় তাহলে আমার বাড়ির পাশে একটু জমি আছে বিক্রি করে টাকা দিতে হবে। তখন সভাপতি বলেন ১০ লাখ টাকা লাগবে। তিনি বলেন কোন কম টাকা নেওয়া যাবে না। পরবর্তীতে আমি ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়। কিচুক্ষন পর সে আমাকে বলেন তোমাকে পরে জানাবো।

এরই কিছুদিন পর জানতে পারলাম কুলচারা গ্রামের সিমা খাতুন নামের এক মহিলাকে নিয়োগ দিয়েছে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী জানান, আমরা একসময় এই বিদ্যালয় থেকে লেখা পড়া শেষ করে বাহিরে পড়াশোনা করি। হঠাৎ একদিন প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন স্যার বলেন তোমরা কাম-কম্পিউটারে লোক নিয়োগ করা হবে তোমরা আবেদন করো। আমরা বললাম স্যার আমাদের কি চাকরি হবে। প্রধান শিক্ষক বলেন পোস্ট অর্ডারের টাকা আমি দিবো তোমারা শুধু আবেদন করো।

তখন আমরা বুঝতে পারলাম সবই প্রতারণা। এব্যাপারে হরিনাকুন্ডু উপজেলার মকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও চাঁদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আঃ আজিজ জানান, বিধি অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখানে কারও কাছ থেকে কোন টাকা নেওয়া হয়নি। বিষয়টি সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক দেলোয়ারের হোসেন জানান, টাকা নিয়েছে কি নেয়নি সেটি বলতে পারবো না। বিদ্যালয়ের সভাপতির নির্দেশনার বাইরে তো আমরা কিছুই করতে পারি না। এব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ফজলুল হক বলেন, আমি একজন সরকারি প্রতিনিধি। স্বস্ব বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি আমাদের চিঠি দিয়ে জানান। সেসময় আমরা নিয়োগ বোর্ডে গিয়ে হাজির হয়। তখন আমরা ফাস্ট,সেকেন্ড ও থার্ড বাচাই করি। তাছাড়া সব বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করে থাকে।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram