ঝিনাইদহে হত্যা মামলার বাদীর বাড়ি উপহার নিয়ে হাজির পুলিশ!

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ- হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা দিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা সাগর সিকদার ছুটে গেলেন খুন হওয়া যুবক শাহিন আলমের বাড়িতে। নিয়ে যান পরিবারের সকলের জন্য জামা-কাপড়। নিহতের রেখে যাওয়া ১১ মাস বয়সের শিশু মরিয়মকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করেন তিনি। হাতে তুলে দিলেন উপহার। এমনকী দ্রæততম সময়ে হত্যাকারীদের শনাক্ত, গ্রেফতার ও অভিযোগপত্র দেওয়ায় পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে পাওয়া উপহারের ৫ হাজার টাকাও তিনি পরিবারটির হাতে তুলে দিয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে তদন্তকারী কর্মকর্তা সাগর সিকদার নিহত শাহিন আলমের বাড়ি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে যান। মামলার বাদি চাঁদ আলী জানান, তার ছেলে চলে গেছে। এরপর মামলাসূত্রে পরিচয় হয় পুলিশ কর্মকর্তা সাগর সিদকারের সঙ্গে। তার কর্মকা- ও আলাপ-ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে নিজের ছেলের জায়গায় তাকে স্থান দিয়েছেন। গত ৬ জুন সকালে কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা বাজারের পাশে একটি কলার ক্ষেতে ব্যবসায়ী শাহিন আলমের লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
শাহিন আলমের বালিয়াডাঙ্গা বাজারে লেদ মেশিনের ব্যবসা ছিল। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ থানার এসআই সাগর সিকদার জানান, হত্যাকান্ডটি ছিল সকলের অজানা। যাকে হত্যা করা হয়েছে তার কোনো শত্রæ ছিল না। তাছাড়া হত্যাকারীরা মোটিভ ঘোরাতে নিহত শাহিন আলমকে (২৮) উলঙ্গ করে ফেলে রেখে যায়। এতে তারাও প্রথমে ধারণা করে- নারীঘটিত কোনো ঘটনায় এই হত্যাকান্ড।
তবে টাকার উপর রক্তের দাগ থেকেই মাত্র ৭ দিনের মধ্যে তিনি এই আলোচিত হত্যাকান্ডের মূল কারণ বের করে জড়িত দুই জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। যার মধ্যে একজন একই এলাকার মমিন উল্লাহর ছেলে জসিম উদ্দিন বাবু (২৫) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ঘটনা স্বীকার করেছেন। অন্য আসামি হচ্ছেন সিরাজুল ইসলামের ছেলে মিজানুর রহমান বাবুল (৩৫)। টাকা ছিনতাই করতে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। তদন্তে অভিযোগ প্রাথমিক ভাবে প্রমানিত হওয়ায় ৩১ আগস্ট ওই ২ জনকে অভিযুক্ত করে মামলার চার্জশিট জমা দেন।
সাগর সিকদার বলেন, একটি হত্যাকান্ডে একটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তাদের আশা থাকে, পুলিশের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা পাবার। পরিবারটিকে সহযোগিতার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি নিজের দায়িত্বের জায়গা থেকে দ্রæত সময়ে হত্যার কারণ উদ্ধার ও জড়িতদের গ্রেফতার করেছি। সাধারণ মানুষ যেন হয়রানি না হয়, সেটিও খেয়াল করেছি।পরিবারটির যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তবে চার্জশিট জমা দিয়ে তাদের সান্তনা দিতে বাড়িতে উপহার নিয়ে যাই। পুলিশ সুপারের কাছ থেকে পাওয়া পুরস্কার ওই পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরে খুশি হয়েছি।