শিশুদের মসজিদে আগমন; বড়দের করণীয়
মাওলানা ইমদাদুল হক
স্নেহ-করুণা ও কোমলতা মহৎ গুণ: কুরআন-হাদীনের অগণিত বক্তব্য থেকে জানা যায়, স্নেহ -করুণা ও কোমলতা মহৎ গুণ। এ গুণের অধিকারী আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া ও কল্যাণ পাওয়ার উপযুক্ত বলে গণ্য হয়। আর যে এ গুণ থেকে বঞ্চিত সে হতভাগা ও দয়া-বঞ্চিত বলে গণ্য। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, যে কোমলতার অংশ পেয়েছে সে কল্যাণের অংশ পেয়েছে। আর যে কোমলতা থেকে বঞ্চিত সে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। মুমিনের মিযানের পাল্লায় সবচেয়ে ওজনদার হচ্ছে উত্তম ব্যবহার (বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং৪৬৪)। অন্য হাদীসে আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হতভাগাই শুধু দয়ার গুণ থেকে বঞ্চিত হয় (সুনান তিরমিযি, হাদীস নং-১৯২৩)।
বিশেষ করে শিশুদের সাথে দয়াপূর্ণ কোমল আচরণ করা তো সুন্নাতে নববির গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। শিশুর সাথে যে মমতাপূর্ণ আচরণ করে না তার সম্পর্কে নবীজি (সা.) বলেন, যে দয়া করে না তাকেও (আল্লাহর পক্ষ থেকে) দয়া করা হবে না (সহীহ বুখারি, হাদীস নং-৫৯৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস-২৩১৮)। অন্য হাদীসে তিনি বলেন, ওই ব্যক্তি আমার উম্মাতের অন্তভুক্ত নয় যে ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের মর্যাদা বোঝে না (সুনান তিরমিযি-১৯২০)।
শিশুদের সাথে নবীজি (সা.): শিশুদের হৃদয় কোমল; তারা কোমল ব্যবহার ভালোবাসে। কর্কশ ব্যবহারের কোনো ব্যক্তির তারা পাশ ঘেঁষতে চায় না। তেমনি অপরিচিত ব্যক্তিকেও তারা এড়িয়ে চলে। একাধিক হাদীস থেকে জানা যায়, নবীজি (সা.) কোথাও গেলে শিশুরা তাঁকে ঘিরে ধরত। এ থেকে বোঝা যায়, তিনি শিশুদেরকে আদর করতেন। কোথাও শিশু দেখলে কাছে ডেকে নিতেন। কোমল ব্যবহার ও স্নেহ-মমতার পরশ দিয়ে তাদের হৃদয় জয় করে নিতেন। তিনি শিশুদের সাথে হাসি-কৌতুক করতেন। এ কারণে শিশুদের তাঁর কাছে আসতে অপরিচয় জনিত কোনো দ্বিধা ও জড়তা কাজ করত না।
জাবির ইবন সামুরা (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে ফজরের নামায আদায় করলাম। নামাযের পর তিনি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলেন, আমিও তাঁর সাথে বের হলাম। এ সময় কিছু শিশু তাঁর সামনে এল। তিনি প্রত্যেকের উভয় গ-দেশে কোমল স্পর্র্শ দিয়ে আদর করলেন। আমার গালেও তিনি আদর করে দিলেন (সহীহ মুসলিম, হাদীস-২৩২৯)। অন্য হাদীসে আনাস (রা.) বলেন, নবী কারীম (সা.) আনসারদের দেখতে যেতেন। আনসারদের মহল্লায় পৌঁছালে আনসারি শিশুরা নবীজির চারদিকে ভিড় করত। তিনি সেই শিশুদের সালাম দিতেন, মাথায় হাত বুলিয়ে আদর দিতেন এবং তাদের জন্য দুআ করতেন (মুসনাদ বাযযার, হাদীস-৬৮৭২)।
শিশুদের আদর-স্নেহ করাকে নবীজি (সা.) এত গুরুত্ব দিতেন যে, এজন্য অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতিও সহ্য করে নিতেন। আয়িশা (রা.) বলেন, তাহনীক করার জন্য একটি শিশুকে নবীজি (সা.) এর কাছে আনা হল। তিনি শিশুটিকে নিজের কোলে বসালেন। শিশুটি তাঁর কোলে পেশাব করে দিল। (এতে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করলেন না। বরং) পানি আনিয়ে পেশাব ধুয়ে ফেললেন (মুসনাদ আহমাদ, হাদীস-২৪২৫৬)। অন্য হাদীসে আবু লায়লা (রা.) বলেন, আমি নবীজির কাছে ছিলাম। হাসান বা হুসাইন নবীজি (সা.) এর বুকের উপর বসা ছিল। হঠাৎ সে ফিনকি দিয়ে পেশাব করা শুরু করল। আমরা তাকে সরানোর জন্য উঠতে গেলাম। নবীজি বললেন, তাকে এভাবেই পেশাব শেষ করতে দাও। তাকে আতঙ্কিত কোরো না (মুসনাদ আহমাদ-১৯০৫৯)।
উম্মে খালিদ (রা.) শিশু বয়সে তাঁর বাবার সাথে নবীজির কাছে গিয়েছিলেন। তখন তার গায়ে ছিল একটি হলুদ রঙের পোশাক। নবীজি (সা.) তাকে দেখে বললেন, সুন্দর, সুন্দর। উম্মে খালিদ (রা.) বলেন, আমি নবীজির মোহরে নবুওয়াত নিয়ে খেলা শুরু করলাম। এতে আমার পিতা আমাকে ধমক দিলেন। তখন নবীজি (সা.) বললেন, ওকে খেলতে দাও। তারপর তিনি আমার জন্য দীর্ঘ জীবিতার দুআ করলেন (সহীহ বুখারি, হাদীস-৩০৭১)। অন্য হাদীসে আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, একবার দেখলাম, রাসূলুল্লাহ (সা.) হুসাইনকে কাঁধে করে রেখেছেন আর তার মুখের লালা গড়িয়ে পড়ছে নবীজির শরীরে (সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস-৬৫৮)।
উল্লিখিত হাদীসগুলোর আলোকে আমরা বুঝতে পারছি, শিশুদের সাথে নবীজি (সা.) এর ব্যবহার কেমন ছিল, তিনি তাদের কেমন আদর-স্নেহ করতেন এবং তাদের পক্ষ থেকে আসা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ও তাদের দুষ্টমি কীভাবে সহ্য করতেন। তাছাড়া হাদীসে আরো বর্ণিত হয়েছে, তিনি শিশুদের ভুলভ্রান্তি ও স্বভাবসুলভ চঞ্চলতার কারণে কখনো বিরক্তি প্রকাশ করেন নি বা তাদেরকে ধমক দেন নি ও ভয়ভীতি দেখান নি। তিনি আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। উম্মাত হিসাবে আমাদের কর্তব্য, আমাদের কাজকর্ম, আচার-আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর আদর্শে গড়ে তোলা। আমাদের কোনো কর্ম, আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর বিপরীত হলে অবশ্যই তা সংশোধনযোগ্য। এ ধরনের কোনো কিছুকে সঠিক মনে করে গো ধরে থাকা চরম ঔদ্ধত্য, যা কোনো মুমিনের জন্য শোভনীয় নয়।
নবীজির সাথে মসজিদে শিশু: নবীজি (সা.) ছিলেন ইমাম। একাধিক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি নামাযের জন্য মসজিদে আসার সময় পরিবারের কোনো কোনো অবুঝ শিশুকে মসজিদে নিয়ে এসেছেন। ওই শিশু সাধারণ মুসল্লিদেরকে নয়, খোদ ইমাম সাহেবকেই নামাযে নানাভাবে অসুবিধা করেছে। কিন্তু এতে নবীজি নিজে বা কোনো মুসল্লি কখনোই বিরক্তি প্রকাশ করে নি। আবু কাতাদা (রা.) বলেন, একদিন নবীজি (সা.) যয়নাবের শিশু কন্যা উমামাকে কাঁধে করে মসজিদে এলেন এবং তাকে কাঁধে করেই ইমামতি শুরু করলেন। রুকু করার সময় তাকে নামিয়ে রাখলেন। সিজদা থেকে উঠে আবার তাকে কাঁধে তুলে নিলেন। এভাবেই পুরো নামায শেষ করেন (সহীহ বুখারি, হাদীস-৫৯৯৬; সুনান নাসায়ি, হাদীস-৭১১)।
শাদ্দাদ ইবনু হাদ (রা.) বলেন, একদিন নবীজি (সা.) হাসান বা হুসাইনকে কোলে নিয়ে মসজিদে এলেন এবং তাকে পাশে বসিয়ে রেখে তিনি নামাযের ইমামতি শুরু করলেন। নামাযের মাঝখানে একটা সিজদা তিনি খুব লম্বা করলেন।… নামায শেষে সাহাবিগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি একটা সিজদা খুব লম্বা করলেন, আমরা তো আশঙ্কায় পড়ে গিয়েছিলাম। নবীজি বললেন, ওই সময় আমার এই নাতিটা পিঠে চড়েছিল। ওর পিঠে চড়ার শখ মেটার আগেই ওকে নামিয়ে দিতে চাইলাম না বলে সিজদাটা দেরি করলাম (সুনান নাসায়ি, হাদীস-১১৪১)।
আমাদের মসজিদগুলোতে শিশুদের আগমন: যেসব শিশু মসজিদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পাকপবিত্রতা ও আদব-মর্যাদা বোঝে, তাদের মসজিদে আসার ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি নেই। আপত্তি অবুঝ শিশুদের নিয়ে। আমাদের মসজিদগুলোতে অবুঝ শিশুরা খুব বেশি আসে না। অভিভাবকরাও তাদেরকে মসজিদে আনতে চায় না। যারা আসে তারা দুইভাবে চলে আসে। ১. মসজিদের আশপাশে বাড়ি, আযান হলে নিজে নিজেই মসজিদে চলে আসে; অনেক সময় অভিভাবকরা এ ব্যাপারে অবগত থাকে না। ২. কোনো কোনো শিশু অভিভাবককে মসজিদে আসতে দেখলে তার সাথে মসজিদে আসার জন্য নাছোড়বান্দা হয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। এইসব অভিভাবকের সামনে তখন রাস্তা দুইটিÑ হয়তো ওই শিশুকে নিয়ে মসজিদে আসবে, নয়তো নিজেও আর মসজিদে আসবে না। এখন সে কোন বিকল্পটি গ্রহণ করবে? আসুন, আমরা একটা হাদীস দেখে নিই।
আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, আমি অনেক সময় দীর্ঘ সময় নিয়ে নামায আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে নামাযে দাঁড়াই। তারপর শিশুর কান্না শুনে নামায সংক্ষিপ্ত করি, কেননা দীর্ঘ করলে বাচ্চাটির মায়ের মনোকষ্ট বাড়বে (সহীহ বুখারি, হাদীস-৭০৭)। আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) নামাযে মায়ের সাথে আসা বাচ্চার কান্না শুনতে পেলে সংক্ষিপ্ত সূরা পাঠ করতেন (সহীহ মুসলিম, হাদীস-৪৭০)।
এখন কয়েকটি বিষয় লক্ষ করি, ১. পুরুষদের জন্য শরীআত-গ্রাহ্য কারণ ছাড়া মসজিদে এসে নামায আদায় করা অত্যাবশ্যক। মহিলাদের জন্য মসজিদে নামায আদায় করা আবশ্যক নয়, বরং সর্বাবস্থায় তাদের জন্য ঘরে নামায পড়া উত্তম। তবে নবীজির যুগে মহিলারা মসজিদে নামায আদায় করত। ২. বাচ্চারা বাবা-চাচা, দাদা-ভাই ইত্যাদি পুরুষ অভিভাবকের তুলনায় মা-বোন, ফুফু-খালা ইত্যাদি নারী অভিভাবিকাদের কাছে বেশি থাকে। তাই পুরুষ কোনো অভিভাবক বাইরে গেলে বাচ্চারা তার সাথে বাইরে যওয়ার জন্য যতটা আবদার করে মহিলা কোনো অভিভাবিকা গেলে তার চেয়ে বেশি আবদার করে। আর মা গেলে তো তার সাথে যাবেই। এখন আমাদের মসজিদগুলোতে মহিলারা সাধারণত নামাযের জন্য আসে না। সুতরাং নবী-যুগে যখন মেয়েরা মসজিদে যেত তখন অবশ্যই শিশুরা আমাদের সময়ের তুলনায় অনেক বেশি মসজিদে আসত। ৩. এযুগের শিশুদের মতো সেযুগের শিশুরাও স্বভাবতই ছিল চঞ্চল ও দুষ্টুমতি। যেটা আমরা পূর্বের তিনটি হাদীসে দেখেছি। ৪. বাচ্চারা মসজিদে এসে এমন অনেক কাজ করত যা বড়দের নামাযে ব্যাঘাত সৃষ্টি করত। এক শিশু তা সিজদায় ইমামের কাঁধে পর্যন্ত চড়ে বসেছে। আমরা জানি, জামাআতের নামাযে মূল কাজ থাকে ইমামের। ইমামের ভুল হলে মুকতাদি বা একাকী নামায আদায়কারীর ভুলের তুলনায় সমস্যা অনেক বেশি। তা সত্ত্বেও নবীজি বা সাহাবায়ে কিরাম বাচ্চাদের এসব দুষ্টুমিতে কোনো ধরনের বিরক্তি প্রকাশ করেন নি। ৫. বাচ্চারা দুষ্টুমি করে সাধারণত জামাআতের সময়। এতে সমস্যা যা হয় মূলত ইমামের হয়। তবুও মুকতাদিরা কোনো বাচ্চা দুষ্টুমি করলে নামাযের মধ্যেই ক্রোধে জ্বলতে থাকে। সালাম ফেরানোর সাথে সাথে হৈচৈ, চিৎকার, চিল্লাচিল্লিতে মসজিদ মাথায় তুলে নেয়। অথচ নবী কারীম (সা.) কোনো বাচ্চার কান্না শুনতে পেলে মায়ের প্রতি সহানুভূতিশীল হতেন, মায়ের কষ্ট হবে বলে নামায সংক্ষিপ্ত করে দিতেন। আর আমরা সম্মিলিতভাবে নামায শেষে বাচ্চার অভিভাবককে তুলোধুনা করতে থাকি। আমাদের এ আচরণ কিছুতেই নববি আচরণের সাথে মিলে না। তাছাড়া মসজিদে চিৎকার করা, মাসবুক নামাযিদের অসুবিধা করা, বাচ্চার অভিভাবককে লজ্জিত-অপমানিত করা, বাচ্চাটাকে ধমক দেওয়াÑ কোনোটাই ইসলামে বৈধ নয়। আমরা বড়রাই যদি আল্লাহর ঘর মসজিদে এসে ইসলামের এসব বিধানকে অমান্য করি, তবে অবুঝ শিশুদের দোষ দেওয়া যায় কীভাবে? শিশুদের শিশুসুলভ চঞ্চলতা ও দুষ্টমিকে ইসলামসহ কোনো কালে পৃথিবীর কোনো সমাজ-সভ্যতায়ই অপরাধ বলে গণ্য করা হয় নি।
যে অভিভাবক মসজিদে আসতে গেলে তার অবুঝ শিশু এমনভাবে জাপটে ধরে যে, তাকে না নিয়ে আর মসজিদে আসা সম্ভব নয়, সে কী করবে? সে কি বাচ্চাসহই আসবে, নাকি বাচ্চাকে রেখে আসতে না পরলে নিজেও আর আসবে না। আমরা কি তাকে মসজিদে আসতে নিষেধ করতে পারি? আবু কাতাদা ও আনাস (রা.) বর্ণিত হাদীসে আমরা দেখেছি, নবীজির মসজিদে মায়েদের সাথে অবুঝ বাচ্চারাও আসত। তারা এসে নামাযের সময় কান্নাকাটি করত। যা ইমামের কান পর্যন্ত যেত। সে কারণে ইমামের নামায সংক্ষিপ্ত করতে হত। এই মায়েদের মসজিদে এসে নামায পড়া আবশ্যক ছিল না। তবুও নবীজি (সা.) তাদেরকে বলেন নি যে, তোমাদের যেহেতু মসজিদে এসে নামায পড়া বাধ্যতামূলক নয়, সুতরাং তোমরা অন্তত বাচ্চা নিয়ে আর মসজিদে এসো না। বরং তিনি মায়ের কষ্টের কথা চিন্তা করে নামায সংক্ষিপ্ত করে দিয়েছেন। তাহলে আমরা কীভাবে বাচ্চার কারণে পুরুষদেরকে মসজিদে নামাযে আসতে নিষেধ করব, যাদের জন্য মসজিদে এসে নামায পড়া আবশ্যক!
মসজিদের পবিত্রতা ও পরিবেশ রক্ষা: মসজিদের পবিত্রতা ও মর্যাদা রক্ষা করা অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং যে সকল অবুঝ শিশু মসজিদের পবিত্রতা ও মর্যাদার বিষয় বোঝে না, আমরা স্বেচ্ছায় তাদেরকে মসজিদে আনব না। কিন্তু কোনো শিশু যদি অভিভাবক ছাড়াই মসজিদে চলে আসে অথবা নাছোড়বান্দা হয়ে অভিভাবকের সাথে আসে, তাদের কোনো অবুঝ আচরণের কারণে তাদেরকে কোনো ধনের শাস্তি দেওয়া বা ধমক দেওয়া, তার অভিভাবককে লজ্জিত করা, মসজিদে উচ্চ আওয়াজে চিৎকার করা বড়দের জন্য কোনোভাবেই বৈধ নয়, বরং বড়দের কর্তব্য কোমল ব্যবহারের সাথে তাদেরকে যতটুকু সম্ভব সংযত ও নিয়ন্ত্রিত করা। তারপরেও তারা কিছু এলোমেলো করে ফেললে ধৈর্য ধারণ করা। তাদের শিশুসুলভ আচরণের প্রতিবাদে আমরা যেন এমন কিছু না করি, যা মসজিদের মর্যাদা ও পরিবেশ পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়। অবুঝ শিশু তো বে-গোনাহ, মাসুম। কিন্তু তার অবুঝ আচরণের প্রতিবাদে অসহিষ্ণু আচরণ করে আমরা বড়রা যেন মহা গোনাহগার না হয়ে যাই। আসুন, আমরা নিচের হাদীস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি। এর থেকেও জটিল পরিস্থিতিতে নবীজি কেমন সংযমের শিক্ষা দিয়েছে দেখুন। এবং এর আলোকে নিজেদেরকে সংশোধন করি।
আবু হুরাইরা ও আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) সাহাবিদেরকে নিয়ে মসজিদে নববিতে বসে আছেন। এমন সময় এক গ্রাম্য ব্যক্তি এসে মসজিদে পেশাব করা শুরু করল। কিছু মানুষ তাকে বাধা দেবার জন্য উঠতে গেল। নবীজি বললেন, তাকে ওই অবস্থায় ছেড়ে দাও, বাধা দিয়ো না। তোমাদেরকে কোমল-সুন্দর ব্যবহারের জন্য পাঠানো হয়েছে, কঠোর-কর্কশ ব্যবহারের জন্য পাঠানো হয় নি। পেশাব করা শেষ হলে লোকটিকে ডেকে বুঝিয়ে বললেন, শোনো, মসজিদ হচ্ছে ইবাদতের জায়গা, এখানে পেশাব করা বা ময়লা-আবর্জনা ফেলা যায় না। তারপর সাহাবিদেরকে বললেন, এই পেশাবের উপর পানি ঢেলে দাও (সহীহ বুখারি, হাদীস-২২০; সহীহ মুসলিম, হাদীস-২৮৫)।
আমরা আল্লাহর গোলাম, বিশেষ করে আল্লাহর ঘর মসজিদে। এখানে তো আমরা আল্লাহর কাছে কৃত নিজের অপরাধের চিন্তায় তটস্থ, অনুতপ্ত। এখানেও যদি নিজের গোলামির কথা না ভেবে, অন্যে ত্রুটি-বিচ্যুতিতে অহংবোধে ক্রোধে অগ্নিশর্মা হই, তবে আমাদের মুক্তি কোথায়! আসুন, ছোটদের অবুঝ ভুলের কথা বাদ দিয়ে নিজেদের এই মহাদুর্দশা নিয়ে চিন্তিত হই। আমাদের সকল আচরণ কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষা অনুযায়ী পরিশোধন করি। যার নিজের আখিরাতের চিন্তা আছে, সে কি অন্যের ত্রুটি দেখে ক্রোধে অসংযত হতে পারে?
মাওলানা ইমদাদুল হক
দারুস সুন্নাহ
আলমডাঙ্গা, চুয়াডঙ্গা।