১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আরাফার ময়দানে হজের খুতবা দিচ্ছেন শায়খ বালিলাহ

প্রতিনিধি :
Masud Rana
আপডেট :
জুলাই ১৯, ২০২১
156
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানে উপস্থিত হওয়াই হজ। এ ময়দানে প্রতি হিজরি বছরের ৯ জিলহজ হজ পালনে উপস্থিত হতে হয়। আরাফার ময়দান সংলগ্ন মসজিদে নামিরা থেকে দেওয়া হয় হজে খুতবা। আজ এ ঐতিহাসিক ময়দানে হজের খুতবাহ দিচ্ছেন সৌদি আরবের বিশিষ্ট আলেম, সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ এবং গবেষণা-মুফতি বোর্ডের সদস্য, কাবা শরিফের ইমাম ও খতিব শায়খ ড. বন্দর বিন আবদুল আজিজ আল-বালিলা।

তিনি আজ শুরুতেই মহান আল্লাহ তাআলার প্রশংসা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়ার মাধ্যমে খুতবাহ শুরু করেন। এবারের হজে অংশগ্রহণকারী উপস্থিত হাজিদের সুস্থতা কামনায় দোয়াও করেন তিনি

খুতবার শুরুতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হজ সম্পর্কিত একটি হাদিস তুলে ধরেন এভাবে- ‘কোনো মুসলমান যদি হজ পালনে সক্ষম হয়, তবে জীবনে একবার হলেও তাকে অবশ্যই হজ করতে হবে।’

শায়খ ড. বন্দর আল-বালিলাহ বলেন, আল্লাহর একত্মবাদ তথা তাওহিদ এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবি ও রাসুল তথা খতমে নবুওয়তের সাক্ষী হলো ইসলামের মূল রোকন বা স্তম্ভ। তারপর নামাজ ও জাকাত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। জাকাতের মাধ্যমে গরিব অসহায়দের ব্যাপক কল্যাণ সাধিত হয়

হজের খুতবায় শায়খ বালিলাহ মুসলিম উম্মাহকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘উম্মতে মুসলিমদের উচিত পরস্পরের মাঝে সৌহার্দ্য ও সদ্ভাব বজায় রাখা।

তিনি আরও বলেন, উম্মতের পরস্পরের মাঝে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত। আল্লাহর রহমত থেকে সেই ব্যক্তিই নিরাশ হয় যে গোমরা হয়ে গেছে। দয়াময় আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমার রহমত আমার আজাবের ওপর প্রাধান্য পায়। নবীজি সা. বলেছেন জান্নাতে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না

খুতবায় উম্মাহর প্রতি মহান আল্লাহর নির্দেশ এভাবে তুলে ধরেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তোমরা আমি ছাড়া আর কারও ইবাদত করবে না এবং আমার সঙ্গে কাউকে শরিক মানবে না।

হাদিসে পাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন, তোমরা পৃথিবীতে বসবাসকারীদের ওপর দয়া করো, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের ওপর দয়া করবেন।

কাবার ইমাম খুতবায় আরও বলেন, আল্লাহ তাআলা যেভাবে তোমার ওপর অনুগ্রহ করেছেন তেমনি তুমিও অন্যের ওপর অনুগ্রহ করো। আল্লাহ তাআলার রহমত অনুগ্রহকারীদের কাছাকাছিই থাকে সবসময়।

আল্লাহ তাআলা পিতা-মাতার সাথে ভালো আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা নির্দেশ হলো পিতা-মাতার পরে আত্মীয়স্বজনের সাথে ভালো আচরণ কর।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিজের চাকর-বাকরদের সাথে ভালো আচরণ করো। নিজের অধীনস্থ চাকর-বাকরদের তাদের শক্তি-সামর্থ্যের ওপর বোঝা চাপিয়ে দেবে না। অন্যকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পুরা করারও নির্দেশনা দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা।

খুতবায় তিনি আরও বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তোমার জন্য কুরআন নাজিল করা হয়েছে যেন তুমি হেদায়েত পাও। আল্লাহ যাকে চান তাকে হেদায়েত দেন। নিজের আত্মশুদ্ধি কর এবং তাকওয়া অবলম্বন করো। নিজের রবের ইবাদত এমনভাবে কর; যেন তিনি তোমাকে দেখছেন।

শায়খ বালিলাহ আরও বলেন, আল্লাহ তাআলা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না। বরং কুরআনের নির্দেশ হলো- আল্লাহ তাআলার রজ্জুকে শক্তভাবে ধর এবং মতপার্থক্যে যেও না। পরস্পরের মাঝে সহযোগিতা ও সহমর্মিতা সম্পর্ক তৈরি কর। বিদ্বেষ ও শত্রুতা খতম কর। পৃথিবীতে ভারসাম্যতা তৈরি করা। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ক্ষমা করা।

খুতবায় তিনি আরও বলেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা নামাজ আদায় কর। নিজের নফসকে হেফাজত কর। আল্লাহর ওয়াস্তে তোমার প্রতিশ্রুতি পূরণ কর। আল্লাহ বললেন, ‘শয়তান আপনাকে বিপথগামী করার চেষ্টা করবে।’

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।

খুতবায় কাবার ইমাম আরও বলেন, যে ফজিলত হলো আপনি আল্লাহর ইবাদত করেন যেন আপনি তাকে দেখছেন। যদি এটি সম্ভব না হয় তবে ভাববেন যে তিনি আপনাকে দেখছেন। আল্লাহ বলেন, কোনো বান্দা যদি নিজের ওপর অন্যায় করে তবে তার জন্য তওবা করার দরজা উন্মুক্ত রয়েছে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি কোনো এলাকায় কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়ে তবে সেখানে যাবেন না।

অহংকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের সাথে সদয় আচরণ করেন। আল্লাহ বলেছেন, আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি। তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন সর্বশেষ নবী ও রাসুল। তোমরা তোমাদের নামাজ সংরক্ষণ কর, নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হও। আল্লাহ পরাক্রমশালী, তাকে ভয় কর এবং তাকওয়া অবলম্বন করুন। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সব মানুষের সঙ্গেই রয়েছেন। আল্লাহ তাআলা কারও আমলকে বিনষ্ট করেন না।

উল্লেখ্য, ১৪৪২ হিজরি সালে অনুষ্ঠিত আজকের হজের খুতবা দেওয়ার জন্য সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ এক রাজকীয় ফরমানে শায়েখ ড. বন্দর বিন আব্দুল আজিজ আল-বালিলাহকে নিযুক্ত করেছেন।

এখনও চলছে পবিত্র হজের আরবি ভাষায় দেওয়া শায়খ ড. বন্দর বিন আব্দুল আজিজ আল-বালিলাহ’র খুতবা। সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় আরবি ভাষায় দেওয়া এ খুতবা বিশ্বের ১০টি ভাষায় অনুবাদ করেও প্রচার করছেন। আরবি ও বাংলাসহ ইংরেজি, ফরাসি, তুর্কি, মালাইউ, চায়নিজ, উর্দু, ফার্সি, রাশিয়ান ও হাউসা ভাষায় প্রচারিত হচ্ছে হজের খুতবা।

উল্লেখ্য, হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতি হিজরি বছরের ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা অনুষ্ঠিত হয়। এই আরাফাতের ময়দানেই হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram