ঝিনাইদহে বাড়ির ছাদে নার্সারী, প্রতিমাসে আয় ২০ হাজার টাকা
জাহিদুর রহমান তারিক, স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ- ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমন ধরা পড়ার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ঘরবন্ধি দিন চলতে থাকে। ঘরবন্ধি হয়ে হাফিয়ে উঠা সময়ে কিছু একটা করার পরিকল্পনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। এরইমধ্যে একদিন দুইটি দার্জিলিং জাতের কমলা লেবুর চারা কিনে আমার ছোট্ট ছাদে রাখা টবে রোপন করি। এমনিতেই ছোটবেলা থেকে গাছের প্রতি আমার একটা দুর্বলতা ছিল। সেই দুর্বলতা থেকে সখ চেপে বসে। শুরু করি আমার বাড়ির ছাদে দেশি বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ফল ও ফুলের চারা রোপন।
এরই মধ্যে মরু অঞ্চলের সুস্বাদু ত্বীন ফলসহ বেশ কয়েক প্রকারের গাছে ফল ধরা শুরু করে, আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। এক সময় সখের বাগান ছাদ পেরিয়ে বাড়ির আশে পাশের জমিতে বানিজ্যিক নার্সারিতে রুপ নেয়। যেখান থেকে প্রতিমাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার আয় হচ্ছে। সাথে আরো দুইজন বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে আমার নার্সারিতে। করোনাকালে অবসর সময় কাজে লাগিয়ে কিভাবে বাড়তি আয় সম্ভব তা দেখিয়ে দিয়েছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভাধীন কাশিপুর গ্রামের শিক্ষক হাফিজুর রহমান মাসুদ। তিনি একই উপজেলার মনোহরপুর পুখুরিয়া দাখিল মাদরাসার আইসিটি শিক্ষক। প্রতিদিন তার ছাদ বাগান দেখতে দূরদূরান্ত থেকে সৌখিন মানুষরা আসছেন।
ফেরার সময় অনেকে পছন্দের ফুল ফলের চারা নিয়ে যাচ্ছেন। এরমধ্যে শুধুমাত্র ত্বীন ফলের চারা বিক্রি করেছেন ৫ লক্ষাধিক টাকার। শিক্ষক হাফিজুর রহমান জানান, গত বছর মার্চে দেশে করোনা ধরা পড়া পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। সময় কাটাতে ছাদে প্রথমে দুইটি লেবুর চারা লাগান। এসময় ঘরবন্ধি হয়ে বসে না থেকে কিছু একটা করার পরিকল্পনা করি। শুরু করি আমার ছোট্ট ছাদে দুস্প্রাপ্ত ফুল ও ফলের ছাদ বাগান। কিছুদিন যেতে না যেতইে সেই সখের ছাদা বাগান এখন আমার আয়ের আরেকটি উৎসে পরিনত হয়েছে। এরপর ধীরে ধীরে ধীরে সংগ্রহ করেন আরও দেশি বিদেশি ফলের চারা। অনলাইনে যাচাই করে দেশের বিভিন্ন নার্সারী থেকে নানান জাতের ফল ও ফুলের চারার সংগ্রশালা তৈরী করেন। তার
নার্সারীতে ১৭০ প্রজাতির বিভিন্ন ফল ও ফুলের চারা আছে। এগুলোর মধ্যে পার্সিমন, লং মালবেরি ও ইনসুলিন প্লান্ট। এছাড়া রয়েছে কিউজাই, কিং অপ চাকাপাতা, ব্রæনাই কিংসহ বিভিন্ন জাতের আম। হাজারি কাঁঠাল, থাই বারমাসি কাঁঠাল, ভিয়েতনামের লাল কাঁঠাল, ভিয়েতনামের গোলাপি কাঠাল। কমলার মধ্যে রয়েছে দার্জেলিং কমলা, নাগপুরি কমলা, ছাতকি কমলা, মেন্ডারিন কমলা ও কেনু কমলা। এছাড়া চায়না-৩ কাগুজে লেবু, এলাচি কাগুজে লেবু, সিডলেচ কাগুজে লেবু, থাই কাগুজে লেবু। ভিয়েতনামি ও কেরালা নারিকেল।
বিদেশি ফল ত্বীন, যয়তুন, রামবুটান, ডুরিয়ান, অ্যাভোকাডোসহ ঔষধি গাছ করসল, টুরুপ চান্ডাল ও সাদা লজ্জাপতি। মাসুদ জানান, তিনি পরিচিত জন ও এলাকার চাষীদের উদ্বুদ্ধ করছেন বিদেশি ফল চাষে। তার প্রেরণায় অনেকে বানিজ্যিকভাবে ত্বীন ফলের চাষ শুরু করেছেন। তার ছাদ বাগান ও বাড়ির আঙ্গিনায় নার্সারী দেখে এখন অনেকে তাদের নিজ বাড়ির পতিত জমিতে বিভিন্ন ফলের চারা রোপন করছেন বলেও তিনি জানান। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস অফিসার শিকদার মোঃ মোহায়মেন আক্তার শিক্ষক মাসুদের ছাদ বাগান প্রসঙ্গে বলেন, আমরা একটু চেষ্টা করলেই আমাদের ছাদে সবুজ বাগান গড়ে তুলতে পারি। ছাদ বাগান আমাদের একদিকে অবসর সময় কাটাতে সাহায্য করবে, অন্যদিকে পরিবারের সবজি ও ফলের চাহিদা পুরনে সহযোগীতা করবে।