করোনার উপসর্গ নিয়ে আলমডাঙ্গায় মুক্তিযোদ্ধাসহ আরও ৩ জনের মৃত্যু

একদিনে ৪ জনের মৃত্যুর পর গতকালও আলমডাঙ্গায় করোনার উপসর্গ নিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধাসহ ৩ জন জনের মৃত্যু হয়েছে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত ভোলা মন্ডলের ছেলে আরজেত আলী (৬৫) প্রায় ১৫ দিন আগে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। তিনি সর্দিজ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ছিলেন। বাড়িতেই করোনার চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গতকাল সোমবার সকালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বেলা ১১টায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাকে গোবিন্দপুরের জান্নাতুল মাওয়া কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, আলমডাঙ্গা উপজেলার প্রাগপুর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ গাইনের ছেলে গ্রাম্যচিকিৎসক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিম উদ্দীন (৬৭) করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল সোমবার দুপুরে মৃত্যুবরণ করেছেন। পরিবার ও গ্রামসূত্রে জানা গেছে, গত ৭/৮ দিন পূর্বে তিনি সর্দিজ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়েছিলেন। যেহেতু তিনি নিজেই গ্রাম্য চিকিৎসক ছিলেন, সে কারণে নিজ বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গতকাল সোমবার তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে হারদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে দুপুর ২টার দিকে তিনি মারা যান। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় লাশ দাফন করা হবে।
আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার গোবিন্দপুর গ্রামের মীর মিন্টুর স্ত্রী নাসরিন নাহার (৪০) করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন বলে জানা যায়। গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে আলমডাঙ্গার ফাতেমা ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
জানা গেছে, তিনি বেশ কিছুদিন ধরে সর্দিজ্বর ও পরিবর্তিতে টাইফাইডে ভূগছিলেন। তাছাড়া ডায়রিয়াও আক্রান্ত ছিলেন।
ফাতেমা ক্লিনিকের মালিক মঞ্জু আলী জানান, নাসরিন নাহারের করোনা পরীক্ষা করা হয়নি। তবে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেন বলেই মনে হচ্ছে।
এছাড়া, গত রবিবার করোনার উপসর্গ নিয়ে আলমডাঙ্গায় একই দিনে এক মহিলাসহ ৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার স্টেশনপাড়ার মৃত আজিজুল মেম্বরের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩০) গত ১ সপ্তাহ যাবত সর্দিজ্বরসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার শারিরীক অবস্থা শঙ্কটজনক হলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার উদ্দেশ্যে গত রবিবার তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল রবিবার দুপুর ২ টায় তিনি মারা গেছেন।
বেশ কয়েক দিন সর্দিজ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভূগছিলেন আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর ইউনিয়নের ডম্বলপুর গ্রামের খুশলালের ছেলে তাইজেল হোসেন (৫৫)। তিনি বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গত রবিবার সকালে তিনি করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
নগর বোয়ালিয়া গ্রামের মৃত সমীর উদ্দীনের ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৬০) সম্প্রতি সর্দিজ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন। বাড়িতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। অবশেষে গত রবিবার সকালে করোনার উপসর্গ নিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আলমডাঙ্গার নওদাপাড়ার প্রবাসী খোকন আহমেদের স্ত্রী রিনা আহমেদ (৩৬) সম্প্রতি সর্দিজ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন। বাড়িতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন কয়েক দিন। শেষে তার অবস্থা সঙ্কাপন্ন হলে গত শনিবার মেহেরপুরে বাপের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গত রবিবার সকালে করোনার উপসর্গ নিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তাছাড়া, আলমডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে শ শ মানুষ সর্দিজ্বরে আক্রান্ত। কিছু কিছু গ্রামে এ ধরণের সর্দিজ্বরের প্রবণতা রীতিমত হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আলমডাঙ্গা পৌর এলাকায়ও সর্দিজ্বরের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বন্ডবিল গ্রামে ৩/৪ মানুষ এ ধরণের সর্দিজ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বন্ডবিলের মুন্সিপাড়াসহ কয়েকটি পাড়ায় ঘরে ঘরে মানুষ অসুস্থ।