তৃপ্তি তরমুজ চাষে মেহেরপুরের জাহিরুরের সাফল্য কৃষি বিভাগকে মুগ্ধ করেছে
মেহেরপুর প্রতিনিধি। ইউটিউব থেকে দেখে মাচা পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন থাইল্যান্ড এর হাইব্রিড তরমুজ (তৃপ্তি) চাষে মেহেরপুরের জাহিরুল ইসলামের সাফল্য জেলা কৃষি বিভাগকে মুগ্ধ করেছে। এ প্রথম মেহেরপুরের মাটিতে মাচা পদ্ধতিতে ‘তৃপ্তি’ জাতের হলুদ রংয়ের তরমুজ চাষ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে সদর উপজেলার উজ্জলপুর গ্রামের মাঠে জাহিরুল ইসলাম তরমুজ চাষ করেন।
জাহিরুল উজ্জলপুর গ্রামের বাসিন্দা। সরেজমিনে দেখা যায়, মাচায় ঝুলছে তৃপ্তি (হাইব্রিড) জাতের হলুদ রঙের তরমুজ। উচ্চমূল্য লাভজনক ফসল ৬৫-৭০দিনে ফসল সংগ্রহ করা যায়। ফেব্রæয়ারি মাসে বীজ বপন করলে বৈশাখে রমজান মাসে ফসল উঠলে বিঘা প্রতি প্রায় ১লক্ষ টাকার বেশী লাভ হতে পারে। এছাড়া ও সেপ্টেম্বর মাসের শেষ অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে বীজ বপন করলে নভেম্বর মাসের শেষে ফসল পাওয়া যায়। তখন বাজারে ফল কম থাকে। ফলে তরমুজ আবাদ করে সহজেই লাভ করা যায়। এই হাইব্রীড তরমুজের ফুল আসার সময় তাপমাত্রা, বর্ষা কম থাকা ভালো। তাপদাহের মধ্যে এখন তরমুজের ব্যাপক চাহিদা। জমি থেকেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে তরমুজ। দেশি তরমুজ মাটিতে থাকে। এ তরমুজ মাচায় চাষ করতে হয়।
তরমুজ চাষি জাহিরুল ইসলাম জানান- মাচায় ঝুলে থাকার কারণে তরমুজের ওজন বাড়ার সাথে সাথে তরমুজ ছিঁড়ে পড়ে যাবে। এজন্য যখন তরমুজ ২শ গ্রাম ওজন হয় তখন প্রতিটি তরমুজ নেটের ব্যাগ দিয়ে মাচার সঙ্গে বেঁধে রেখেছি। তরমুজ রোপণের পর থেকে ৬০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ দিনের মধ্যে বাজারজাত করা যায়। তিনি ২৫ কাঠ জমিতে এ তরমুজ চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। ২ লাখ টাকার বেচাকেনা হবে বলে আশা করছেন। তিনি আরও জানান, নিরাপদ ফল উৎপাদন এবং সুষম সার ব্যবস্থাপনায় তৃপ্তি (হাইব্রিড) জাতের তরমুজ মারাত্মক সুস্বাদু। প্রাকৃতিক দূর্যোগ না থাকার কারণে ফলন হয়েছে ভালো। অসময়ের এ তরমুজের ব্যাপক চাহিদা বাজারে।
জমি থেকে প্রতিমণ তরমুজ ১৬’শ টাকা থেকে ১৮’শ টাকা দরে ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। খেদের আলীসহ এলাকার চাষীরা জানান, আমরা এই ধরনের তরমুজ আগে কখনো দেখিনি। জাহিরুল ইসলাম এই প্রথম হলুদ রংয়ের তরমুজের চাষ করেছে। এই ধরনের চাষী দেখে আমাদের ভালো লাগছে। ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ হলেও ১ লক্ষ টাকার বেশি দামে বিক্রয় হবে মনে হচ্ছে। এধরনের চাষ আমরা কৃষি বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে আগামী বছর করবো বলে ভাবছি। উপ-সহকারী কর্মকর্তা ও সুপাইভাইজার কামারুল ইসলাম জানান, জাহিরুল ইসলাম ইউটিউব থেকে দেখে আমাকে বলে এই জাতের তরমুজ চাষ করতে চাই। সেই অনুযায়ী আমিও ভালো করে দেখে কৃষি অফিসের সাথে কথা বলে এই খানে একটি প্রজেক্ট তৈরীতে সহযোগীতা করেছি। বর্তমান করোনাকালে যে বাজার মূল্য রয়েছে তাতে চাষী অনেক লাভবান হবে বলে আমি মনে করছি।
মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নাসরিন পারভিন জানান, অসময়ে তরমুজের চাষ করে জাহিরুল ইসলাম যে সাফল্য পেয়েছে আমরা এতে খুশি। সাধারণত তরমুজ বৃষ্টির মৌসুমের আগেই শেষ হয়ে যায়। ১ বিঘা জমিতে সবোর্চ্চ সাত থেকে আটটি বেড তৈরি করা যাবে। চারা রোপণের মাত্র ৩০ দিনেই পুরো মাচায় গাছ উঠে যাবে এবং ফুল ও ফল ধরা শুরু হবে। বাকি ৩০ দিনের মধ্যে তরমুজ তোলার উপযুক্ত হয়ে যাবে। সকাল বেলা স্ত্রী ও পুরুষ ফুল ফোটার সাথে সাথে স্ত্রী ফুলকে পুরুষ ফুল দিয়ে পরাগায়িত করে দিলে ফলন ভালো হয়। তবে জমিতে অবশ্যই পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে। এ তরমুজ অক্টোবর মাসে চাষ করা লাভজনক। কারণ ডিসেম্বরে সাধারণত দেশী ফল তেমন পাওয়া যায় না। এসময় বাজারজাত করতে পারলে আথিক লাভবান নিশ্চিত। তিনি আরও জানান, হাইব্রিড জাতের তরমুজ বীজ দেশের বাইরে থেকে আসায় বীজের দাম বেশি। বারি উদ্বাবিত দুইটি হাইব্রিড জাত লাল ও হলুদ এর বীজ রাখা যায়। এটা সম্প্রসারণ করা গেলে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কমে যাবে