২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

‌শিশু বি‌য়ের ঠিকাদার তারা

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
নভেম্বর ১৭, ২০২০
29
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

রী‌তিমত দরদাম করে চুক্তিতে বাল্যবিয়ে দেওয়া পেশা চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার কেশবপুর গ্রামের মঞ্জিল হোসেন ও সেলিম হোসেনের। কনের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান অনিরাপদ হলে গোপনে অন্যত্র বিয়ের আয়োজন, তাদের মনোনীত ভুয়া নিকাহ রেজিস্ট্রারকে দিয়ে বিয়ে পড়ানো থেকে শুরু করে সকলকে ম্যানেজ করাও তাদের চুক্তির আওতায়।


কেশবপুর গ্রাম ঘুরে জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলার প্রান্তিক গ্রাম কেশবপুর। এই গ্রামের মৃত মওলা বক্সের ছেলে মঞ্জিল হোসেন (৫৫) ও মৃত দেলবার হোসেনের ছেলে সেলিম হোসেন (৪৪)। তারা এলাকায় বাল্যবিয়ের ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ প্রায় ৮/১০ বছর ধরে তারা নিজ গ্রামসহ আশপাশের গ্রামে বাল্যবিয়ের ব্যবস্থা করে থাকেন। দরদাম করে চুক্তিবদ্ধ হয়ে অগ্রিম টাকা নিয়ে তারা বাল্যবিয়ের ব্যবস্থা করেন। বাল্যবিয়ের সংবাদ স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে পৌঁছে গেলে ঘটে বিপত্তি! পুলিশ বাল্যবিয়ের কনের বাপের বাড়িতে উপস্থিত হয়। বিয়ে বন্ধের ব্যবস্থা করে। অনেক সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে শাস্তির ব্যবস্থা করে।


কেশবপুর জামে মসজিদের সভাপতি আমিরুল ইসলাম বলেন, এ সব হাঙ্গামা থেকে নিরাপদ থাকতে বাল্যবিয়ের ঠিকাদার দুজন এখন কনের অভিভাবকের বাড়ির বাইরে অন্যত্র গোপনে বিয়ের ব্যবস্থা করেন। শুধু তাই না – ইউনিয়নের নির্ধারিত নিকাহ রেজিস্ট্রারকে দিয়ে বাল্যবিয়ে পড়ানো প্রায় অসম্ভব। সে জন্য নিকাহ রেজিস্ট্রার না, অথচ, বিয়ে পড়াতে পারেন এমন একজনকে দিয়ে বাল্যবিয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করেন।

পার্শ্ববর্তি হাটবোয়ালিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা আব্দুর রহমান নিকাহ রেজিস্ট্রার না হয়েও এ সব বাল্যবিয়ে পড়ান বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, মাওলানা আব্দুর রহমান মাস্টার দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নিজ গ্রাম কেশবপুর জামে মসজিদের ঈমাম ছিলেন। সম্প্রতি বাল্যবিয়ে পড়ানোর অপরাধে মসজিদ কমিটি তাকে ঈমামতি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।


গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেশবপুর গ্রামের হাসিবুল জোয়ার্দ্দারের ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুকন্যা রিম্পা, আব্দুল কালামের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া শিশুকন্যারুবিনা, একই গ্রামের জাবেদ আলী মালিথার ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুকন্যা প্রিয়া, ইনতাদুল আলীর ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুকন্যা ইরানী, মাজেদ আলীর ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুকন্যা শ্যামলী, নিয়াত আলীর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুকন্যা চাঁদনী, শাহীন আলীর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুকন্যা মিতু, লোকমান আলীর ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুকন্যা রিয়ার বাল্যবিয়ে দিয়েছেন তারা। এছাড়াও একই গ্রামের রেজাউল ইসলাম, কামাল হোসেন, বাবলুর রহমান ও আবু সাঈদের ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুকন্যা, মন্টু মিয়ার ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুকন্যা, লিটন আলীর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুকন্যাসহ প্রায় ৪৫জন শিশুকন্যার বাল্যবিয়ের তথ্য গ্রামের অনেকে এক নাগাড়ে বলে যান। সম্প্রতি তারা ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া বৃষ্টির নামের এক শিশুকন্যাকে বাল্যবিয়ে দিয়ে প্রশাসনের রোষানলে পড়েছেন।


এলাকাসূত্র জানা যায়, অতীতেও মঞ্জিল হোসেন ও সেলিম হোসেনের স্থায়ী কোন পেশা ছিল না। গ্রামে কোন দ্বন্দ্ব হলে কিংবা মারামারি হলে একপক্ষকে ফুঁসলিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করানো, টাকার বিনিময়ে সেই মামলায় সহযোগিতা করা ছিল প্রধানতম পেশা। এখন বাল্যবিয়ের ঠিকাদারীই প্রধান পেশা হয়েছে। এই অপকর্মের জন্য দরকার রাজনৈতিক ছত্রছায়া। তাই পূর্বে তারা দুজন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও এখন আওয়ামীলীগে যোগ দিয়েছেন। আওয়ামীলীগের অনুপ্রবেশকারি এই দু বাল্যবিয়ের ঠিকাদারের রাজনৈতিক দাপটে গ্রামের সহজ সরল মানুষ থাকেন তটস্থ।


আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীর জানান, কেশবপুর গ্রামের মঞ্জিল ও সেলিম এলাকায় টাকার বিনিময়ে বাল্যবিয়ে দেয় – মৌখিকভাবে এমন অভিযোগ পেয়েছি। এ অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে তারা দুজনই গা-ঢাকা দিয়েছে।


আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী জানান, বর্তমানে বাল্যবিয়ে ও মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর ভূমিকা নিয়েছে। মঞ্জিল হোসেন ও সেলিম হোসেনের বিরুদ্ধে বাল্যবিয়ের ঠিকাদারীর অভিযোগ পেয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে তদন্ত সাপেক্ষে মামলা করতে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram