২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সম্পূর্ণ করোনা জয়ে অপেক্ষা করতে হবে সাত বছর

প্রতিনিধি :
সাম্প্রতিকী ডেক্স
আপডেট :
ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২১
65
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

ভবিষ্যৎ দেখার আশ্চর্য ক্ষমতার জোরে মানসচক্ষে বিপদ দেখে নিয়ে ব্লুমগার্টেনকে এলডোরাডো দেখানোর ছকে ঘোল খাইয়ে সাওপাওলোয় প্রফেসর শঙ্কুর প্রাণ বাঁচিয়ে ছিলেন মাকড়দা নিবাসী নকুড় চন্দ্র বিশ্বাস।

বাস্তবে যদি তাঁকে পাওয়া যেত, তাহলে বিশ্ববাসী এখন একটাই প্রশ্ন করতে চাইত, 'করোনা পরিস্থিতির অন্ত হবে কবে? কবে ফের আগের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে পারবে বিশ্ব?

গল্পের বাইরে বেরিয়ে রূঢ় বাস্তবে ফিরলে যে উত্তরটা আপাতত সবথেকে 'বাস্তবোচিত' মনে হচ্ছে, তা শুনলে বাকি দিনটা আপনার তেতো হয়ে যেতে বাধ্য। ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ জিততে এখন একটাই অস্ত্র পড়ে রয়েছে বিশ্ববাসীর সামনে, 'টিকাকরণ'। সংবাদসংস্থা ব্লুমবার্গ বিশ্বের সব প্রান্তের করোনা সংক্রমণ এবং টিকাকরণ কর্মসূচি ধরে বিশ্বের বৃহত্তম যে ডেটাবেস তৈরি করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, এই হারে টিকাকরণ চললে সাত বছরের আগে পরিস্থিতি পুরোপুরি আগের মতো হয়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই।

অবশ্য এর মধ্যে বেশকিছু ফাইনপ্রিন্ট রয়েছে। প্রথমত, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে টিকাকরণ পূর্ণ গতিতেই চলবে। এখন কাজে লাগানো ৯টি ভ্যাকসিনের পাশাপাশি পরীক্ষার নানা স্তরে থাকা ৫৮টি ভ্যাকসিনও যথাসময়ে কাজে লাগানো সম্ভব হবে। দ্বিতীয়ত, নতুন করে আবার কোনও করোনাভাইরাসের স্ট্রেনে কাহিল হয়ে পড়বে না বিশ্ব। তৃতীয়, চতুর্থ করে তালিকা আরও বেশ খানিকটা লম্বা। সব জানার তেমন প্রয়োজনীয়তাও সবার নেই। তবে মোদ্দা কথা হল, বিশ্বজুড়ে টিকাকরণের প্রক্রিয়া সফল ভাবে সম্পন্ন হলে তবেই আগের জীবনযাত্রায় ফিরবে বিশ্ব।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চিন থেকে শুরু হয়েছিল তার মারণযাত্রা। গত বছর জানুয়ারির শেষে ভারতে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রামিত রোগীর খোঁজ মিলেছিল ত্রিশূরে। তারপর থেকে মৃত্যুমিছিল কম-বেশি চলছেই। প্রায় ১.৫৫ লক্ষ দেশবাসীকে ইতিহাসের পাতায় পাঠিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতিকেও ঘোল খাইয়ে দুমড়ে মুচড়ে ছেড়েছে আণুবীক্ষণিক এই ভাইরাস। গোটা বিশ্বের ছবিটাও আলাদা কিছু না।

বাঁচার অস্ত্র এখন টিকাকরণ। ভয়-সংশয় দূরে রেখে মারণ ভাইরাসের প্রতিষেধক নিয়ে 'শক্তিমান' হয়ে ওঠা। মার্কিন বিশেষজ্ঞদের মতে, ধরে ধরে আপামর দেশের সবাইকে প্রতিষেধক দেওয়া কষ্টকল্পিত ভবিষ্যৎ। তাই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ৭০-৮৫% মানুষকে টিকাকরণের আওতায় আনা গেলেই করোনা জয় সম্ভব হবে। ইতিমধ্যেই বিশ্বে ১২ কোটির কাছাকাছি মানুষকে টিকাকরণের আওতায় আনা গিয়েছে। এই হারে চললে আগামী ৭ বছরের আগে আশার আলো দেখা যাচ্ছে না, দাবি ব্লুমবার্গের বিশেষজ্ঞদের।

টিকাকরণের গতিতেও অনেক সাব-ক্লজ রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশ যে ভাবে ৭৫% পথ ২০২২ আসার আগেই করে ফেলার সম্ভাবনা দেখছে, বাকিদের জন্য ছবিটা তেমন নয়। সবার জন্য প্রতিষেধক কেনার ট্যাঁকের জোর এখন অনেক দেশেরই নেই।

এর সঙ্গেই রয়েছে টিকাকরণের মেকানিজম কার্যকর করতে সরকারের অভিপ্রায়। ইজরায়েল সরকার ঠিক করেছে, আগামী ২ মাসের মধ্যে ৭৫% দেশবাসীকে টিকাকরণের আওতায় এনে ফেলা হবে। কিন্তু বড় দেশগুলির পক্ষে এই হারে এগোনো কার্যত অসম্ভব। বিশ্বের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ দেশে আপাতত শুরু করা সম্ভব হয়েছে ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকাকরণ।

ফলে হরে-দরে করোনা আশঙ্কা মুছে ফেলতে সাত বছর অপেক্ষা করা ছাড়া পথ নেই, দাবি বিশেষজ্ঞদের। এবং সেই করোনাভাইরাস, যার স্ট্রেন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভাইরাস ডিজাইন করা হয়েছে। নতুন আবার কিছু এলে ছবিটা পাল্টে যেতে বাধ্য। এর মধ্যে বড় কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলেও তা আরও সময় নষ্ট করবে, জানিয়েছে ব্লুমবার্গ। যেমন সময় আরও পিছোবে, যদি না বাচ্চাদেরও টিকাকরণ শুরু করা যায়। এখনও বাচ্চাদের শরীরে টিকা দেওয়ার ছাড়পত্র মেলেনি। এটি যত দেরি হবে, ততই পিছোবে সময়।

অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন 'হার্ড ইমিউনিটির' কথা। কিন্তু ব্লুমবার্গের বিশেষজ্ঞদের দাবি, জনসংখ্যার ৭৫% টিকাকরণের আওতায় না এলে 'হার্ড ইমিউনিটি' বাস্তবায়ন হওয়া শক্ত।

ছবিটা একই সঙ্গে আশার এবং নিরাশার। আলোর এবং অন্ধকারের সম্ভাবনায় ভরা। তবে অর্ধেক খালি গ্লাসের কথা না ভেবে বাকি অর্ধেক টিকাকরণের মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব ভরে ফেলার পরামর্শই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram