২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও রপ্তানি আয়ে বৃদ্ধি

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
সেপ্টেম্বর ৪, ২০২০
46
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

মহামারি করোনা সংকটের কারণে বিশ্ব বাণিজ্যে ধীরগতি দেখা দিলেও রপ্তানি আয়ে চমক দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। গত জুলাই মাসের পর আগস্টে মাসেও বেড়েছে রপ্তানি আয়। নিট পোশাক, হালকা প্রকৌশল পণ্য, কৃষিপণ্য, ওষুধ, শুকনো খাবারসহ বেশিরভাগ পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

বাংলাদেশ চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাসে আগস্টে ২৯৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এই পরিমাণ মাস ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১১ দশমিক ৭২ শতাংশ কম হলেও গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ (৪.৩২) বেশি। আগস্টে পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৩৬ কোটি ১০ লাখ ডলার।

এদিকে, অর্থবছরের  দুই মাস জুলাই ও আগস্ট মিলে মোট ৬৮৭ কোটি ৮১ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ শতাংশ বেশি এবং গত অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের আয়ের চেয়েও ২.১৭ শতাংশ বেশি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর থেকে প্রাপ্ত প্রভিশনাল প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া যায়।

জুলাইয়ের পর আগস্টেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন বলেন, রপ্তানি আয়ে বৈচিত্র্য আনতে আমরা বেশকিছু কৌশল গ্রহণ করেছি। যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও অবহিত করা হয়েছে। তৈরি পোশাকের অর্ডার বাতিলের পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে- তৈরি পোশাকের পাশাপাশি অপ্রচলিত পণ্যের রপ্তানি বাড়ানো এবং নতুন বাজার অনুসন্ধান। এর মধ্যে বেশকিছু সম্ভাবনাময় পণ্য বেছে নিয়ে ওসব খাতের রপ্তানি বাড়াতে নগদ প্রণোদনাসহ বিভিন্ন ধরনের নীতি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশীয় পণ্যের মানোন্নয়নে প্রকল্পও গ্রহণ করা হচ্ছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর খাত ভিত্তিক আয়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত মাসে (আগস্ট) তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে প্রায় ২৪৭ কোটি ডলার। জুলাই মাসে এর পরিমাণ ছিল ৩২৪ কোটি ৪৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে এই খাতের রপ্তানি আয় কমেছে ৭৭ কোটি ৪৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার। অবশ্য, জুলাই ও আগস্ট, এই দুই মাস মিলে তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানি আয় হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১.৮১ শতাংশ বেশি। এ সময়ে, এ খাতের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫৬১ কোটি ১৬ লাখ ডলারের বিপরীতে হয়েছে ৫৭১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এর মধ্যে নিটওয়্যার থেকে এসেছে ৩১১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২.২৯ শতাংশ আর গেল অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের চেয়ে ৬.৬৪ শতাংশ বেশি।

একক মাস হিসাবে গত জুলাইয়েও নিটওয়্যারের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয় ৪.৩০ শতাংশ। আর মাস ধরে নির্ধারণ করা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ওই মাসে ২৪.৫৯ শতাংশ বেশি আয় এসেছেল নিট পোশাক রপ্তানি থেকে। তবে, জুলাই-আগস্ট মিলেও ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির চক্কর থেকে বের হতে পারেনি ওভেন পোশাকের রপ্তানি আয়। এই দুই মাসে ওভেন থেকে এসেছে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮.৪৪ শতাংশ আর গেল বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭.০৬ শতাংশ কম।

গত দুই মাস মিলে (জুলাই ও আগস্ট) আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে দেশের ২য় বৃহত্তম রপ্তানিমুখী খাত চামড়া শিল্প। তবে, বড় ধরনের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতেই (১৬.৫৪ শতাংশ) আটকা পড়ে আছে এই খাত। গেল দুই মাসের হিসাবে এই খাত থেকে ১৫ কোটি ২৮ লাখ ডলারের বিপরীতে আয় এসেছে ১৫ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। যদিও গেল অর্থবছরের একই সময়ে এখাত থেকে রপ্তানি আয় এসেছিল ১৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার।

এদিকে, লক্ষ্যমাত্রা পূরণেও ব্যর্থ হয়েছে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে থাকা প্লাস্টিক খাত। গেল দুই মাসে এই খাতের আয় ১ কোটি ৭১ লাখ ডলার। ২ কোটি ৪ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা ১৬.১ শতাংশ কম। গত বছরের এই দুই মাসে প্লাস্টিক শিল্প থেকে রপ্তানি আয় এসেছিল ২ কোটি ৮ লাখ ডলার। গেল জুলাই-আগস্ট মাসের রপ্তানি আয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ (৪৯.৬৪) ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে সোনালী আঁশ পাট। পাট ও পাটপণ্য থেকে গত দুই মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ১৯ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৯ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। আর গতবছরের এই দুই মাসে এই খাত থেকে রপ্তানি আয় এসেছিল ১৩ কোটি ৬ লাখ ডলার।

এদিকে, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে ওষুধ রপ্তানি। প্রায় ১৯ শতাংশ (১৮.৯৪) ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে জুলাই-আগস্ট মিলে এখাতের আয় ২ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ কোটি ৮২ লাখ ডলার।

বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে কৃষি পণ্যের রপ্তানি আয়। জুলাই-আগস্ট মিলে এখাতের রপ্তানি আয় হয়েছে ১৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে যা ৩২.৬৪ শতাংশ বেশি। এই দুই মাসে হিমায়িত মাছ রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হযেছে ৬১ শতাংশ (৬০.৯৯)। তবে, ১ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে জুলাই-আগস্ট মিলে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৯৭ লাখ ৪০ হাজার ডলারের হিমায়তি মাছ। শতাংশের হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এই পরিমাণ ৪১.৩৯ ভাগ কম।

এ সময়ে, মসলা রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫২.৭৪ শতাংশ। এখাতের রপ্তানি আয় হয়েছে প্রত্যাশার (লক্ষ্যমাত্রা) চেয়েও ২৫.৩০ শতাংশ বেশি। গেল দুই মাসে মসলা রপ্তানি থেকে ৬৬ লাখ ৮০ হাজার ডলারের আয়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় এসেছে ৮৩ লাখ ৭০ লাখ ডলার।

এ সময়ে প্রায় শতভাগ (৯২.০৬) প্রবৃদ্ধি হয়েছে শুকনা খাবারের রপ্তানি আয়ে। গত বছরের জুলাই-আগস্ট মিলে এই খাতের রপ্তানি হয়েছিল ২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার আর এ বছর হয়েছে ৫ কোটি ১৩ লাখ ডলার। অবশ্য এই দুই মাসে এখাত থেকে ৩ কোটি ৭৪ লাখ ডলার আয়ের ‘সাবধানী লক্ষ্যমাত্রা’ নির্ধারণ করা হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে চা রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১৩ শতাংশ। ৬৬ হাজার ডলারের বিপরীতে আয় হয়েছে ৯৬ হাজার ডলার। নতুন খাত হিসেবে ৩৩.৩৩ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে প্রসাধনী পণ্যের রপ্তানি আয়।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram