২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাতের বেলা প্রতিপক্ষের ধান কেটে নেওয়ার সময় ছত্রপাড়ার ৩ ভাই আটক

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
নভেম্বর ৪, ২০২০
33
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 


রাতের বেলা প্রতিপক্ষের রোপণকৃত ধান কেটে নেওয়ার সময় পুলিশ আলমডাঙ্গার ছত্রপাড়া থেকে ৩ ভাইকে আটক করেছে পুলিশ। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের হুশিয়ারির পরও ছত্রপাড়ায় গত সোমবার দিনগত রাতে শরিফ গ্রুপের লোকজন প্রতিপক্ষের ধান কাটা শুরু করে। পরে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুজনকে আটক করে। বাকীরা পালিয়ে যায়।


জানা গেছে, ’৪৭ সালে দেশ ছেড়ে যাওয়া ছত্রপাড়া গ্রামে ক্ষিতীশ মজুমদারের কিছু জমি লাল খাঁ গ্রুপের লোকজন ও বেশ কিছু জমি শরিফ গ্রুপের লোকজন দখলে নিয়ে চাষাবাদ করে আসছে। গত সোমবার রাতে শরিফ গ্রুপের ১০/১২ জন ব্যক্তি লাল খাঁ গ্রুপের ধান কাটতে শুরু করে। এ সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৩ জনকে আটক করলেও বাকীরা পালিয়ে যায়। আটকৃতরা হল ছত্রপাড়া গ্রামের নিকবার আলীর ৩ ছেলে। এরা হলেন আব্দুর রহিম, আলী হোসেন ও আলম হোসেন। এ মামলার বাদী হয়েছেন আসামিদের ভাতিজা নাজমুল ইসলাম।


গত ৩ দিন পূর্বে আলমডাঙ্গার ডাউকী ইউনিয়ন বিট পুলিশিং অফিস উদ্বোধনকালে পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম ছত্রপাড়ার বিবাদমান দুগ্রুপের অপতৎপরতা সম্পর্কে হুশিয়ারি চ্চারণ করে সাবধান করে দেন। তিনি বলেন, জমির সমস্যার সমাধান হয় আদালতে। জমির কাগজ কথা বলে। কাগজ অন্ধ না। তিনি হুশিয়ার করে দিয়ে বলেন, জমি নিয়ে যদি ছত্রপাড়ায় খুনখারাবী হয়, একটি মানুষকেও আমি বালিশে মাথা দিয়ে শুইতে দেবো না।

এখানে যদি কেউ মারামারি করতে চান, আমি কিন্তু এলএমজি নিয়ে চলে আসবো। একজন ধান রোপণ করবে আর অন্যজন তা কাটবে এটা সহ্য করবো না। ধান যিনি রোপণ করেছেন তিনিই কাটবেন। ধান কাটা নিয়ে রাজনীতি চলবে না। পর্দার আড়ালে কারা কলকাঠি নাড়ে তা আমাদের অজানা থাকে না। পুলিশ সুপারের এমন কঠোর সতর্কবার্তার পরও শরিফ গ্রুপ তাদের অপতৎপরতা থেকে সরে আসেনি। সোমবার রাতে গোপনে প্রতিপক্ষের ধান কাটা শুরু করে।


প্রসঙ্গত, আলমডাঙ্গার ছত্রপাড়া গ্রামের ধনাঢ্য ক্ষিতীশ মজুমদার ’৪৭ সালের দেশ বিভাগের আগে বাড়িঘর-সহায় সম্পত্তি ছেড়ে ভারতে চলে যান। পরবর্তিতে তার রেখে যাওয়া ১৫২ বিঘা জমি শত্রু সম্পত্তি ও বাংলাদেশে পরবর্তিতে অর্পিত সম্পত্তিতে পরিণত হয়। এই বিরাট সম্পত্তির লোভে ছত্রপাড়া ও অভয়নগর দুগ্রামবাসি দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দখলের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। সম্পত্তি দখলের জন্য পরষ্পর গ্রুপের রক্ত ঝরাতে তারা রক্তলোলুপ হয়ে উঠে।

এ বিবাদে প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ গেছে কয়েকজন গ্রামবাসির। আহত-পক্ষু হয়েছেন অনেকে। যুগের পর যুগ ধরে চলমান এ দ্বন্দ্ব। ক্ষিতীশ মজুমদারের ১৫২ বিঘা জমির মধ্যে বেশ কিছু জমি অনেকে জাল দলিল তৈরি করে নিয়ে দখলের অপচেষ্টা করে আসছে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকেন, তাদের পাতি নেতারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করে, থানা পুলিশের উপর প্রভাব বিস্তার করে সমস্ত সম্পত্তি নিজেরা দখলের অপচেষ্টা করেন। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নানা অপবাদ ও দোষারোপ করে তাদের ঘরবাড়ি ছাড়া করে নেতা উপনেতারা নিজেদের মনস্কাম পূরণের অপচেষ্টা করেন। এই নিয়ে বিবাদ যুগ থেকে যুগান্তরব্যাপি বিস্তৃত হতে থাকে। ঝরতে থাকে নিজেদের রক্ত।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram