মেহেরপুরে সূর্যমুখি ফুলে-ফুলে ভরে গেছে খামারের জমি
মাসুদ রানা, মেহেরপুর প্রতিনিধিঃ চারিদিকে হলুদে একাকার। মাঝ দিয়ে মেঠো পথ যেন চোখ ধাঁধানো মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য। এই দৃশ্যের সৌন্দর্য আরেকটু বাড়িয়েছে রাস্তার দুইদিকে নারকেল গাছের সারি। এমনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেখা মিলবে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি বিএডিসি ফার্মে।এমন সৌন্দর্য অবলোকন করতে প্রতিদিনই আসছে হাজারো দর্শনার্থী ।
বীজের চাহিদা মেটানোর জন্য সূর্যমুখির চাষ করেছে মেহেরপুরের আমঝুপি তৈল ও বীজ উৎপাদন খামারসহ চাষীরা। সেখানে বীজ উৎপাদনে ২১ বিঘা জমিতে চাষ হয়েছে সূর্যমূখির। সূর্যমুখি ফুলে-ফুলে ভরে গেছে খামারের জমি। মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের পাশে আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামারে সূর্যমুখি ফুলের হাসি সব বয়সী মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে। আর সেই দৃষ্টিকাড়া ফুলের মধ্যে কেউ সেলফি, কেউ স্বজন নিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত ছবি তুলতে ভিড় করছে। কেউ যেন ফুল না ছেড়ে সেজন্য সেখানে লোকবল নিয়োগ করতে হয়েছে।
খামারে চাষ করা সূর্যমূখি ফুলের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে গত একমাস ধরে থেকে সেখানে উপচে পড়ছে মানুষের ভিড়। ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের মানুষ মাইক্রোবাস-কার, মোটর সাইকেলে করে ছুটে আসছে মানুষ। যুবক-যুবতীদের সামলাতে কাহিল হতে হচ্ছে খামারের লোকজনকে। অনেকেই গাছ ভেঙ্গে জমির মাঝে চলে যাচ্ছে ছবি তুলতে। তাতে গাছের ক্ষতি হলো কি না দেখছে না। শহর কিংবা গ্রাম থেকে স্বামী সন্তান নিয়ে ছবি তুলতে আসা গৃহবধু সহ অনেকে সাথে কথা বলে জানা গেছে- ফেসবুকে ফুলের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে ছবি তুলতে এসেছি।
এখানে এসে সংসারের ভারে ক্লান্ত মনটা ভরিয়ে গেলো। ফুলে-ফুলে ভরপুর এমন দৃশ্য আর আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামারে স্বপরিবারে বিনোদনের একটি জায়গাও বটে। ছবি তুলতে আসা সাগরিকা সরকার জানান- জন্মের এ পর্যন্ত এমন মাঠজুড়ে সুর্যমুখি ফুল দেখিনি। স্মৃতিতে ধরে রাখতে এখানে ছবি তুলতে এসেছি স্ববান্ধবে। আমঝুপির মেয়ে তৌহিদা আব্দুল্লাহ ২৭ বছর আগে গিয়েছিলেন পাকিস্থানে। দীর্ঘ সময় পর দেশে এসে বেড়াতে এসেছেন আমঝুপি ফার্মে। সাথে ছিল ছেলে আব্দুল্লাহ ও মেয়ে আয়েশা। অস্পষ্ট বাংলা আর উর্দূ মিশিয়ে মেয়ে আয়েশা জানালেন, পাকিস্থানে এই ধরনের সূর্যমুখীর বাগান নেই।
এটা খুবই সুন্দর দৃশ্য। আমার বেশ ভালো লাগছে। চুয়াডাঙ্গার ভালাইপুরের আব্দুর রাজ্জাক। পেশায় স্কুল শিক্ষক। দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন আমঝুপি ফার্মে। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন “ সত্যিই অসাধারণ”। সামাজিক যোগযাগ মাধ্যম ফেসবুকে আমঝুপি ফার্মের এই হলুদাবরণ দেখে নিজেরও ইচ্ছে হলো দেখার। তাই চলে এলাম পরিবার নিয়ে। মেহেরপুর শহরের লিটন সরকার ও সুমনা সরকার এসেছেন এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে। এই দৃশ্যের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমি এর আগে এতো বড় সূর্যমুখীর বাগান দেখিনি।
সেই সাথে পাশের সরিষার ক্ষেত সৌন্দর্যকে দ্বিগুণ করেছে। নিজের এলাকায় এতো সুন্দর দৃশ্য না দেখে কি আর থাকা যায়। তাই চলে এলাম পরিবার নিয়ে। আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামারের কেয়ার টেকার আমিরুল ইসলাম জানান, ফুল ফোটার পর ফেসবুকে ভাইরাল হলে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। কাউকে আটকানো যাচ্ছেনা। খামারের মুল গেটে তালা লাগানোর পর বিভিন্ন দিক দিয়ে মানুষ ভেতরে প্রবেশ করছে। বাধ্য হয়ে গেট খুলে দিয়ে লাঠি হাতে জমির মধ্যে আসা প্রতিরোধ করাতে হচ্ছে। খামারের উপ-পরিচালক মামুনুর রসিদ জানান, দেশে ভৈজ্য তেলের চাহিদা মেটানো জন্য সূর্যমূখী বীজের জন্য খামারে প্রতিবছরই কমবেশী সুর্যমূখির চাষ করা হয়। এবার ২১ বিঘা জমিতে চাষ করা হয়েছে। পুরোমাঠ জুড়ে ফুলে ভরে যাওয়াতে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ তৈরী হয়েছে।
এখন সব শ্রেণির মানুষ ফটো তোলার জন্য ভিড় করছে। মানুষের উপস্থিতি ভালো লাগছে। কিন্তু কিছু নারী পুরুষ গাছ দুমড়ে-মুচড়ে ভেতরে গিয়ে ছবি তুলছে। যা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোকবল দিয়েও জমির মাঝে যাওয়া ঠেকানো যাচ্ছেনা। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী জানা গেছে মেহেরপুরের মাটি অতান্ত্য উর্বর হওয়ায় এ বছরে বেশির ভাগ জমিতে সূর্যমুখী চাষের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। চাষীরা তৈল সম্ভাব্্য চাষ করলে তেল উৎপাদনে দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা অনেকাংশে মেটানো সম্ভব