২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মেহেরপুরে আমের গুটি ঝরে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় চাষিরা

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
এপ্রিল ২৪, ২০২১
37
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

মাসুদ রানা, মেহেরপুর । সুস্বাদু আমের জন্য যে জেলার পরিচিতি সবার কাছে তা হলো মেহেরপুর। চলতি মৌসুমে জেলায় আমের ফলন কেমন হবে, তা নির্ভর করছে এই গুটি টেকার ওপর। আমের গুটি ঝরে যায় মূলত মাটিতে রসের অভাব হলে। আম বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিলে বৃষ্টিপাত কম হলে দেখা দেয় এই সংকট। গাছে গাছে আমের গুটি দেখা গেলেও দীর্ঘ ৫ মাস ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় এবার আমের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

এতে চিন্তিত হয়ে পড়েছে আম ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা। জেলায় উৎপাদিত আমের মধ্যে হিমসাগর, বোম্বাই, ল্যাংড়া, আম্রপালি প্রসিদ্ধ। এছাড়াও গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাতি, আশ্বিনা, গবেষণাকৃত বারি-৩, বারি-৪, বারোমাসি কাটিমন জাতের বাগান তৈরির ক্ষেত্রেও আগ্রহী হয়ে উঠছে অনেকে। মেহেরপুরের হিমসাগর দেশের বাজার ছাড়িয়ে রপ্তানী হচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। জেলা কৃষি বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, এ মৌসুমে প্রায় ৯৮ ভাগ গাছেই মুকুল আসে। জেলার ৩ উপজেলায় ছোট বড় গাছ মিলে প্রায় ৩ হাজার ৩শ ৫০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে।

কিন্তু বৈরী আবহাওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের মুখে যেন হাসি নেই, যেন মলিন হয়ে গেছে। স্বাদের দিক থেকে মেহেরপুরের আমের নাম রয়েছে । সরজমিনে দেখা গেছে. সদর উপজেলার আমঝুপি, মেহেরপুর, বামনপাড়া, আমদাহ, উজলপুর, বন্দর,আশরাফপুর, পিরোজপুর, কোলা, রায়পুর এবং মুজিবনগরের মোনাখালি, দারিয়াপুর, শিবপুর, আনন্দবাস, বাগোয়ান, সোনাপুর, মহাজনপুর এবং গাংনীর গাড়াডোব, ধানখোলা, বামুন্দী, কাজিপুর, নওদাপাড়া কাথুলীসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বাগান ঘুরে দেখা যায়, আমের গুটি বেরানো শুরু করেছে। কোনটি আকারে ছোট, আবার কোনটি একটু বড়। বৃষ্টি না হওয়ায় আমের গুটি স্বাভাবিক কারণে বড় হচ্ছে না। এতে করে আম চাষীসহ বাগান মালিকদের ভাবিয়ে তুলেছে।

আমচাষি শাহরিয়ার লিয়ন জানান, অনুকুল আবহাওয়া ও সঠিক পরিচর্যার কারনে এ বছর আমের বাগানে ব্যাপক মুকুল এসেছিল। সে হিসেবে প্রচুর গুটি ধরেছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভাল ফলন পাবার প্রত্যাশা করছি। তবে বৃষ্টির কারণে গুটি ঝরে যাচ্ছে। গাংনীর ভোমরদহ গ্রামের আমচাষি জাহিদুল হাসান জানান, আমাদের জেলার আম খেতে খুবই সুস্বাদু। বিগত দশ বছরের থেকে এবার প্রতিটি গাছেই বেশি বেশি গুটি ধরেছে। বম্পার ফলনের আশাই আছি কিন্তু আবহাওয়া অনুক‚লে না থাকায় আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। বাগানে নিয়মিত যতœ নিতে অনেক খরচ হয়ে যাচ্ছে।

সদরের আমবাগান মালিক মোমেনুল ইসলাম জানান, এবছর পর্যাপ্ত পরিমাণ মুকুল এসেছিল। আর সময়মত গুটি আসায় আশার সঞ্চার জেগেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় বেশ চিন্তার মধ্যে পড়তে হয়েছে। তবে, সামর্থ্য অনুযায়ী আমগাছে পানি দিয়ে স্প্রে এবং গাছের গোড়ায় পানি দেয়া হচ্ছে। খরচের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, তদুপরি এ মুহুর্তে করার কিছুই নেই। আম ব্যবসায়ী জহির উদ্দিন জানান, এবছর আমের গুটি ভালই এসেছে, তবে গত বছরের অক্টোবর মাসে থেকে অদ্যাবধি বৃষ্টি না হওয়ায় ফলন বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। আশায় বুক বেঁধেছিলাম হয়তো ফলন ভাল হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপর কুমার খাঁ জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর মেহেরপুরে আমের ব্যাপক ফলনের আশা করা হচ্ছে। আমের ফলন যাতে ভাল হয় তার জন্য প্রতিনিয়ত সঠিক পরিচর্যা ও পোকামাকড় দমনে বালাইনাশক প্রয়োগ করার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীরা। তবে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে কিছু গাছে গুটি পড়ে যাচ্ছে। এ মুুহুর্তে বৃষ্টি হলে ফলন ভাল হবে, না হলে আম উৎপাদনে ব্যাহত হতে পারে। যদিও খরচ বেশী পড়বে, তারপরও আমচাষীদের গাছে পানি দেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram