১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বউকে সংসারে ফিরিয়ে নিতে যুবকের অভিনব নাটক:: সহযোগিতার হাত বাড়ালেন ওসি

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
অক্টোবর ৩, ২০২২
17
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

বউকে সংসারে ফিরিয়ে নিতে অভিনব কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন এক যুবক। কৌশলের আদ্যপান্ত জেনে-বুঝে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ। যুবক স্বামী গভীর রাতে শ্বশুরবাড়ির নিকটবর্তী মেহগনি বাগানে হাত-পা-মুখ বেঁধে নিজের জীবনকে সংকটাপন্ন করে তোলার অভিনয় করে বিমুখ স্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করেন। সিনেমার গল্পের মত শোনালেও ঘটনাটি গত ২ অক্টোবর গভীর রাতে আলমডাঙ্গায় ঘটেছে। অবশেষে সকালে থানার ওসির সহযোগিতায় স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন।


পুলিশ জানিয়েছে, কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার চকহারদী গ্রামের নিয়ামত আলীর ছেলে রাজন(২২) তিন বছর আগে আলমডাঙ্গার রাধিকাগঞ্জের স্বামী পরিত্যক্তা নার্গিস বেগমের মেয়ে জুলিকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে এক বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। রাজন-জুলির সংসার ভালই চলছিল। হঠাৎ করেই সংসারের আকাশে নেমে আসে কালো মেঘের ঘনঘটা। জুলি ছেলেকে নিয়ে বেশ কয়েক মাস মায়ের কাছে আলমডাঙ্গাতে বসবাস বসবাস করেন। স্বামী তার স্ত্রীকে ফিরে পেতে অনেক দেন দরবারও করেন। কোন কাজ হয় না। কোন কিছুতেই জুলির মন গলে না। উল্টো রাজনের নামে চুয়াডাঙ্গার আদালতে মিথ্যা মামলা ঠুকে দেন। এ ঘটনায় দিশেহারা হয়ে পড়েন রাজন। বউ-ছেলে ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন রাজন।


কী করলে বউ ছেলে ফিরে পাওয়া যায় সেই কৌশল আটতে থাকেন তিনি। রাজন স্ত্রীর মন গলাতে আলমডাঙ্গায় শ্বাশুড়ীর বাড়িতে আসেন। কিন্ত জুলি পাত্তা দেননি।


দিশেহারা রাজন এরপর শ্রীরামপুরে তার এক খালাত ভাইয়ের সহযোগিতা চান। দুই ভাই মিলে অভূতপূর্ব এক নাটক সাজান।

পরিকল্পনা অনুযায়ী শনিবার দিনগত রাত ১টার দিকে আলমডাঙ্গার মহিলা কলেজ সংলগ্ন মীর এলপিজি গ্যাস স্টেশনের পেছনে মেহগনি বাগানে যান তারা। খালাত ভাই ঝন্টু মোটা দড়ি দিয়ে রাজনের হাত-পা শক্ত করে বাঁধেন। মুখটাও বাঁধা হয়। এরপর ঝন্টু চলে গেলে রাজন গোঁঙানির মত শব্দ করতে থাকেন। পাশের মাহমুদুল কাউনাইনের বালু ব্যবসার নৈশ প্রহরী শীতল আলী মানুষের গোঁঙানীর শব্দ শুনে টর্চ লাইট জ্বেলে মেহগনি বাগানে যান। তিনি দেখতে পান হা-পা বাঁধা প্রায় অচেতন এক যুবককে। শীতল পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে রাজনকে থানায় নিয়ে যায়।


থানার ওসি সাইফুল ইসলাম রাজনকে নানা কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন যে, রাজন স্ত্রীর সহানুভুতি পেতে অভিনব এই কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। রাজন এর আগেও স্ত্রীর মন গলাতে নানা চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর শেষ চেষ্টা হিসেবে তিনি নিজের জীবন হুমকির ভেতর ঠেলে দেয়ার অভিনয় করেন।


রাজনের নির্দোষ নাটকের আদ্যপান্ত জেনে-বুঝে থানার ওসি জুলি ও তার মা নার্গিস বেগমকে থানায় ডেকে নেন। গভীর রাতের নাটকের কাহিনি জেনে স্ত্রীর মন গলে যায়। স্বামীর প্রতি তার মায়া জেগে ওঠে। জুলি স্বামীর সাথে শ্বশুর বাড়িতে যেতে রাজি হয়। রবিবার দুপুরের পর রাজন বউ-ছেলেকে নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে যান।


ভেঙ্গে যাওয়া একটি সংসার জোড়া লাগিয়ে দিতে যারপরনাই খুশি হন থানার ওসি সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, রাজন বউ-ছেলেকে ফিরে পেতে এর আগেও নানা চেস্টা করেছেন। তাতে স্ত্রীর মন গলেনি। এরপর সে অভিনব এই নাটক সাজায়। সব কিছুর পরে একটি সংসার জোড়া লেগেছে এতেই তিনি খুশি বলে মন্তব্য করেন।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram