২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রধান শিক্ষকের স্ত্রীকে অবৈধভাবে নিয়োগের বিরুদ্ধে সোচ্চার এলাকাবাসি

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
আগস্ট ৪, ২০২০
55
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জগন্নাথপুর-শ্রীরামপুরে অবস্থিত জেএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রী উলফাত আরা খাতুনকে ব্যাকডেটে সহকারি শিক্ষক পদে নিয়োগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি কালিদাসপুর ইউপি চেয়ারম্যান  ‍নুরুল ইসলামের সাথে যোগসাজশ করে প্রধান শিক্ষক স্ত্রীকে নিয়োগ দেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

নিয়ম বহির্ভুতভাবে নিয়োগকৃত শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল এবং এ ঘটনায় জড়িত প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক,-শিক্ষার্থি-অভিভাবক, ব্যবস্থাপনা কমিটি ও এলাকাবাসী ফুঁসে উঠেছে। শিক্ষকদের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা কমিটির অন্যান্য সদস্যরা বর্তমান সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মো. লিটন আলীর কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। একই ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের শাস্তি চেয়ে এলাকাবাসীর ব্যানারে গত ২৭ জুলাই মাইকিং করা হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, ২০০৫ সালে জেএস মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সাইদুজ্জামানকে সৃষ্ট পদে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তিতে ২০১২ সালে ষষ্ঠ শ্রেণির গ শাখার অনুমোদন লাভের পর ওই শাখায় সাইদুজ্জামানকে বহাল করা হয়। সেই থেকে প্রায় ৫ বছর ধরে সাইদুজ্জামান ৬ষ্ঠ শ্রেণির গ শাখার শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বিদ্যালয়টির ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ইমারত আলীর আকস্মিক মৃত্যুর পর সাইদুজ্জামানকে উক্ত পদে সমন্বয় করে নেওয়া হয়। তবে আজোবধি তিনি ৬ষ্ঠ শ্রেণির গ শাখা হতে অব্যাহতি নেননি।

এমতাবস্থায়,  এই করোনাকালীন বিদ্যালয় বন্ধের সুযোগে প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম তার স্ত্রীকে উক্ত পদে ( ৬ষ্ঠ শ্রেণির গ শাখা)  নিয়োগ প্রদান করেছেন। করোনা সংক্রমণের কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকাকালীন সময়ে ৫ বছর পেছনের তারিখে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে ২০১৪ সালে স্ত্রী উলফাত আরাকে নিয়োগ দেখিয়েছেন। যা তদন্ত করলেই অভিযোগের সত্যতা বেরিয়ে আসবে বলে দাবি করা হয়েছে।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালের ৮ মে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড বিদ্যালয়টিতে ষষ্ঠ শ্রেণির গ শাখা চালুর অনুমোদন দেয়। কিন্ত, তারও সাতবছর আগে সেখানে গ শাখা খোলা হয় এবং সাইদুজ্জামান নামে একজন শিক্ষককে ওই শাখায় শিক্ষক হিসেবে  নিয়োগ দেয়া হয়।

২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ইমারত আলী মারা গেলে তার শূণ্যপদে সাইদুজ্জামানকে সমন্বয় করে নেওয়া হয়। সে হিসেবে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ষষ্ঠ শ্রেণির গ শাখার শিক্ষকের পদটি শূণ্য হয়ে পড়ে। তবে আজোবধি সাইদুজ্জামান ৬ষ্ঠ শ্রেণির গ শাখা শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি দেন নি। অথচ, প্রধান শিক্ষক ব্যাকডেটে ২০১৪ সালে স্ত্রীকে নিয়োগ দেখান। ফলে একই পদে গত ৬ বছর ধরে দুজন শিক্ষক কীভাবে চাকুরী করছেন ? সেটিও বড় প্রশ্ন সকলের কাছে।

জে এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থি হুমায়রা খাতুন, ফাতেমা খাতুন, ঈশিতা খাতুন, নাহিদা খাতুন, মণিকা খাতুন, ইমন আলী ও ওমর আলীর সাথে মোবাইলফোনে কথা হয়। তারা জানান, ২০১৬ সালে তারা ওই বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন। গত প্রায় ৫ বছরে একদিনও উলফাত আরা খাতুনকে বিদ্যালয়ে দেখেননি। ক্লাস নেওয়া তো দূরে থাক। কোন ক্লাস রুটিনে তার নামও দেখিনি।

১০ম শ্রেণির ছাত্রী হুমায়রার পিতা জগন্নাথপুরের রবিউল ইসলাম, ৯ম শ্রেণির ছাত্র সিয়াম হোসেনের পিতা জগন্নাথপুরের ইকরামুল হোসেন জানান, একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এত বড় অনিয়ম কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের শাস্তি হওয়া উচিত। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সালে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটি উলফাত আরা খাতুনকে তার যোগ্যতা বলেই নিয়োগ দান করেছেন। ওই পদটির অনুমোদন না থাকায় বিগত ৫ বছর বেতন ভাতা পাননি। বর্তমানে পদটি এমপিওভূক্ত হওয়ায় বেতন ভাতার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির নিকট জমা দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির বর্তমান সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মো. লিটন আলী জানান, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী এধরণের নিয়োগ দানের কোনো সুযোগ নেই। অনিয়মের বিষয়টি শিগগিরই অধিকতর তদন্ত করে দেখা হবে।    

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram