পুলিশ সুপারের হুশিয়ারির পর ছত্রপাড়ায় শুরু হয়েছে পুলিশি অ্যাকশনঃ ফুঁসলিয়ে সংঘর্ষ সৃষ্টির অভিযোগ
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের হুশিয়ারির পর আলমডাঙ্গার ছত্রপাড়া গ্রামে শুরু হয়েছে পুলিশি অ্যাকশন। ফুঁসলিয়ে ও কুমন্ত্রণা দিয়ে গ্রামের বিবাদমান দু গ্রুপের ভেতর সংঘর্ষ সৃষ্টি করার অভিযোগ তুলে শরিয়ত আলী নামের এক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে গিয়ে পরে মুচলেকায় স্বাক্ষর করিয়ে ছেড়ে দেয়।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গার ছত্রপাড়ার ঝড়ুর ছেলে শরিয়ত আলীকে গত রবিবার দিনগত রাতে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ আটক করে। তার বিরুদ্ধে ফুঁসলিয়ে ও কুমন্ত্রণা দিয়ে গ্রামের বিবাদমান দু গ্রুপের ভেতর সংঘর্ষ সৃষ্টি করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে আটক করা হয়। পরে তিনি আর এ ধরণের অপকর্মের সাথে জড়িত হবেন না মর্মে লিখিত মুচলেকায় স্বাক্ষর করে ছাড় পান।
এলাকাবাসির ধারণা- পুলিশ সুপারের হুশিয়ারির পর ছত্রপাড়া গ্রামে শুরু হয়েছে পুলিশি অ্যাকশন। গত ২ দিন পূর্বে আলমডাঙ্গার ডাউকী ইউনিয়ন বিট পুলিশিং অফিস উদ্বোধনকালে পুলিশ সুপার এ হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, জমির সমস্যার সমাধান হয় আদালতে। জমির কাগজ কথা বলে। কাগজ অন্ধ না। তিনি হুশিয়ার করে দিয়ে বলেন, জমি নিয়ে যদি ছত্রপাড়ায় খুনখারাবী হয়, একটি মানুষকেও আমি বালিশে মাথা দিয়ে শুইতে দেবো না। এখানে যদি কেউ মারামারি করতে চান, আমি কিন্তু এলএমজি নিয়ে চলে আসবো। প্রধানমন্ত্রি আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য। আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে একজন ধান রোপণ করবে আর অন্যজন তা কাটবে এটা সহ্য করবো না। ধান যিনি রোপণ করেছেন তিনিই কাটবেন। ধান কাটা নিয়ে রাজনীতি চলবে না। পর্দার আড়ালে কারা কলকাঠি নাড়ে তা আমাদের অজানা থাকে না।
প্রসঙ্গত, আলমডাঙ্গার ছত্রপাড়া গ্রামের ধনাঢ্য ক্ষিতীশ মজুমদার ’৪৭ সালের দেশ বিভাগের আগে বাড়িঘর-সহায় সম্পত্তি ছেড়ে ভারতে চলে যান। পরবর্তিতে তার রেখে যাওয়া ১৫২ বিঘা জমি শত্রু সম্পত্তি ও বাংলাদেশে পরবর্তিতে অর্পিত সম্পত্তিতে পরিণত হয়। এই বিরাট সম্পত্তির লোভে ছত্রপাড়া ও অভয়নগর দুগ্রামবাসি দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দখলের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। সম্পত্তি দখলের জন্য পরষ্পর গ্রুপের রক্ত ঝরাতে তারা রক্তলোলুপ হয়ে উঠে।
এ বিবাদে প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ গেছে কয়েকজন গ্রামবাসির। আহত-পক্ষু হয়েছেন অনেকে। যুগের পর যুগ ধরে চলমান এ দ্বন্দ্ব। ক্ষিতীশ মজুমদারের ১৫২ বিঘা জমির মধ্যে বেশ কিছু জমি অনেকে জাল দলিল তৈরি করে নিয়ে দখলের অপচেষ্টা করে আসছে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকেন, তাদের পাতি নেতারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করে, থানা পুলিশের উপর প্রভাব বিস্তার করে সমস্ত সম্পত্তি নিজেরা দখলের অপচেষ্টা করেন। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নানা অপবাদ ও দোষারোপ করে তাদের ঘরবাড়ি ছাড়া করে নেতা উপনেতারা নিজেদের মনস্কাম পূরণের অপচেষ্টা করেন। এই নিয়ে বিবাদ যুগ থেকে যুগান্তরব্যাপি বিস্তৃত হতে থাকে। ঝরতে থাকে নিজেদের রক্ত।