২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পায়ে ফুটবল, অচেনা বঙ্গবন্ধু

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
আগস্ট ১৪, ২০২০
27
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

রূপক বসু : বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিল ফুটবলের নিবিড় যোগ। তবে সে সব নিয়ে চর্চা তুলনায় কম। বঙ্গবন্ধুর ফুটবল জীবনের স্মৃতি যেন আজ আটকে একটা ছবিতে। সেই ছবি নিয়েই যত রহস্য। কী রকম?রূপক বসু খেলার ময়দান থেকে রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ওঠার তালিকাটা নেহাত কম নয়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জুডোয় ব্ল্যাকবেল্ট।

লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জর্জ উইয়ার পরিচিতি কিংবদন্তি ফুটবলার হিসেবে। তেমনই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পূর্ব পরিচয় সবার জানা। এ ছাড়া ফিজির দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট কামিসেসে মারা নিউ জিল্যান্ডের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছিলেন। উগান্ডার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইদি আমিন প্রথম জীবনে ছিলেন এক জন প্রতিশ্রুতিমান বক্সার।

খেলার ময়দান থেকে দেশনায়কদের হয়ে ওঠার রূপকথায় সে ভাবে খোঁজ মেলে না ‘ফুটবলার’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেও ছিল ফুটবলের নিবিড় যোগ। তবে, সে সব নিয়ে চর্চা তুলনায় কম।

বঙ্গবন্ধুর ফুটবল জীবনের স্মৃতি যেন আজ আটকে একটা ছবিতে। ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট সেকেলে ছবি। জার্সির রঙও সাদা-কালো। ট্রফির পাশে বসে আছেন বঙ্গবন্ধু। বাস্তবে কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ফুটবল জীবন বেশ রঙিন। তখন চারের দশক।

চুটিয়ে ফুটবল খেলতেন শেখ মুজিবর। তাঁর নিজের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’-তে রয়েছে ফুটবলের উল্লেখ। প্রশ্ন হল, কোথায় খেলতেন মুজিবর? সেটাও আজ কেমন ধাঁধার মতো। বাংলাদেশে অনেক মানুষ দাবি করেন, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে চুটিয়ে খেলতেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৮। জার্সি নম্বর কখনও ৯, কখনও ১০।

স্ট্রাইকার হয়ে করেছেন গোলের পর গোল। পরবর্তী কালে ওয়ান্ডারার্সের প্রশাসনের সঙ্গেও জড়িয়েছিলেন। ও পার বাংলার ফুটবল ইতিহাসে ওয়ান্ডারার্স কোনও হেলাফেলা করার মতো ক্লাব নয়। আবাহনী আর ঢাকা মহামেডানের পর সবচেয়ে বেশি বার ঢাকা লিগ জয়ের নজির তাদেরই।

আজ সেই ক্লাবের অবস্থাও অবাক করার মতো, এবং অদ্ভুত ব্যাপার, সেই ক্লাবে নেই বঙ্গবন্ধুর ফুটবল সংযোগের কোনও স্মৃতিচিহ্ন! জার্সি, বুট কিছুই নেই। ফোনের ও পার থেকে বাংলাদেশের বর্ষীয়ান সাংবাদিক কামারুজ্জামান সাহেবের গলা থেকে বেরিয়ে আসে দীর্ঘনিঃশ্বাস, ‘ওয়ান্ডারার্সের কাছে যদি বঙ্গবন্ধুর ফুটবলের কোনও স্মারক থাকত, তা হলে সেটা তারা লুকিয়ে রাখত না। সবার সামনে তুলে ধরত।

সেগুলো তো দেশের সম্পদ।’ অন্য সম্ভাবনার কথা উস্কে দিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন ফুটবলার গোলাম সারোয়ার টিপু। ঢাকা থেকে ফোনে প্রবীণ ফুটবলারের সাফ কথা, ‘বঙ্গবন্ধু কোনও দিন ওয়ান্ডারার্সে খেলেছেন বলে মনে হয় না। অবশ্যই সেই ক্লাবের সদস্য ছিলেন। প্রশাসনেও জড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু খেলেননি।’

এখানেই ধাঁধা। আসলে ওই সাদা কালো জার্সিতে একটা ছবি ছাড়া আজ আর তেমন কোনও সাক্ষ্যই যে পাওয়া যায় না ফুটবলার বঙ্গবন্ধুর। ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে এক বার আগুন লেগেছিল। তাতেই নাকি ছারখার হয়ে গিয়েছে সব স্মৃতি। টিপুর ব্যাখ্যা অবশ্য অন্য রকম, ‘সাদা-কালো জার্সি ভেবেই সবাই সেটা ওয়ান্ডারার্সের ধরে নিয়েছেন। তখন বাংলাদেশে অনেক টিমের জার্সিই সাদা-কালো ছিল।

কিন্তু ওই ছবিটা ওয়ান্ডারার্সের নয়।’ টিম নিয়ে টানাপোড়েন থাকতে পারে, কিন্তু বঙ্গবন্ধু যে ফুটবল খেলতেন তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। সেই ছবি তা হলে কী ভাবে এল? অনেকে বলেন, এ ছবি বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবনের। গোপালগঞ্জে নিজের স্কুলের হয়ে এক টুর্নামেন্টে তাঁর নেতৃত্বেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল টিম। সেখানকার ছবি এটা। এত সমস্যা হত না, যদি বঙ্গবন্ধু মুজিবরের কোনও স্মৃতিচিহ্ন থাকত।

কিন্তু সে সবের হদিশ কেউ দিতে পারেন না। দেশের প্রথম প্রেসিডেন্টের স্মৃতিবিজড়িত কোনও ফুটবল স্মৃতিচিহ্ন অমর হয়ে নেই সেই স্কুলেও। নিদেনপক্ষে সেই ট্রফিটা থাকতেই পারত। কিন্তু ঝড়ে নাকি নষ্ট হয়ে গিয়েছে সব। ছবি ছাড়া কোনও জাগতিক জিনিস না থাকলেও শেখ মুজিবের ফুটবল প্রেমের গল্প পদ্মা পারে ঘোরে লোকগাথার মতো। সেই আবেগের স্রোত মেশে কলকাতা, এমনকী তিন প্রধানেও।

কী সেই গল্প? ছাত্র জীবনে কলকাতায় পড়তে চলে আসেন বঙ্গবন্ধু। শোনা যায়, সে সময় কলকাতার মহামেডান ও এরিয়ান ক্লাবে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলেন। এ কথার কোনও প্রমাণ নেই। কিন্তু ছাত্রজীবনে যে কলকাতায় ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহামেডান গ্যালারিতে চুটিয়ে খেলা দেখার গল্প শুনিয়েছিলেন খোদ মুজিবই।

স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে যখন আবাহনী ক্রীড়াচক্র ভারত সফরে আসে, তখন মুজিবর সতর্ক করে দিয়েছিলেন ফুটবলারদের। বলেছিলেন, তিনি কলকাতার বড় ক্লাবের খেলা স্বচক্ষে দেখেছেন। তাই আবাহনী ফুটবলাররা যেন কলকাতার ক্লাবগুলোকে হাল্কা ভাবে না নেন।

মুজিবরের বাবাও ফুটবল খেলতেন। বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামালের রক্তেও ফুটবল। আবাহনী ক্রীড়াচক্র গড়ার পিছনে প্রধান উদ্যোগ ছিল কামালেরই। বঙ্গবন্ধুর আর এক ছেলে শেখ জামাল ছোটবেলায় খেলতেন ধানমন্ডি ক্লাবে। এখন তাঁর নামেই হয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব।

রয়েছে ছোট ছেলে শেখ রাসেলের নামে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র। তবে এ সব ক্লাবে সরাসরি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জড়িয়ে নেই। ঢাকায় ফুটবলের সেরা মাঠ ‘বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম।’ আছে ফুটবলের বঙ্গবন্ধু কাপও। কিন্তু তাতে বঙ্গবন্ধুর নাম থাকলেও ছোঁয়া কই? যা আছে সেই ছবিতে। আপশোস তবু থেকেই যায়। বঙ্গবন্ধুর চুরুট, চশমার মতো যদি জার্সি, বুটও থাকত…। ( ভারতীয় অনলাইন পত্রিকা এই সময় থেকে সংগৃহীত)

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram