নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিষ্ফোরণ: তিতাসের আট কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তল্লা এলাকায় মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে তিতাস গ্যাসের আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়েছে।
সোমবার বিকালে তিতাসের এমডি আলী মো. আল মামুন গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন, ফতুল্লা জোনের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহম্মদ সিরাজুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান রাব্বি, সহকারী প্রকৌশলী এসএম হাসান শাহরিয়ার, সহকারী প্রকৌশলী মানিক মিয়া। আর কর্মচারীদের মধ্যে সিনিয়র সুপার ভাইজার মনিবুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র উন্নয়নকারী মো. আইউব আলী, সাহায্যকারী হানিফ মিয়া এবং প্রকর্মী ইসমাইল প্রধানকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্তের আদেশে বলা হয়, ‘নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার খানপুর, তল্লা এলাকায় বায়তুল সালাহ জামে মসজিদে গত ৪ সেপ্টেম্বর আনুমানিক রাত সাড়ে ৮টায় বিস্ফোরণ ঘটে। এই ঘটনায় ২৭ জন মুসল্লি মারা গেছেন এবং আরও ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়া মসজিদের সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যে কারণে তিতাসের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। মসজিদের বিস্ফোরণজনিত ঘটনা ফতুল্লা জোনের আওতাধীন এলাকায় হয়েছে। এই দুর্ঘটনা ফতুল্লা জোনের কর্মকর্তা ও কামচারীদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে হওয়ায় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান ও চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।’
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এশার নামাজ চলাকালে ফতুল্লার তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে অর্ধশতাধিক মুসল্লি দগ্ধ হন। দগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৭ জনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনার পর প্রথমে এসির বিস্ফোরণ হয়েছে বলে ধারণা করলেও পরে ফায়ার সার্ভিস জানায়, মসজিদের নিচ দিয়ে গ্যাস লাইন গেছে। সেখানে থাকা লিকেজেই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে, এলাকাবাসী আগেই লিকেজ সম্পর্কে তিতাস কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল। কিন্তু ৫০ হাজার টাকা ঘুষ না পেয়ে তিতাস ওই লাইন মেরামত করেনি।
এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন, তিতাস কর্তৃপক্ষ এবং ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তিনটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কেন ঘটনা ঘটেছে, কারও গাফিলতি আছে কি না এ ব্যাপারে খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে ওই মসজিদের সামনে গ্যাস সংযোগের মূল লাইন ও বাসাবাড়ির সংযোগ খুঁজতে গর্ত খুঁড়েছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। সোমবার সকালে তিতাস গ্যাস নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের উপ-মহাব্যবস্থাপক মফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে এই কার্যক্রম শুরু হয়। এসময় গ্যাস সংযোগের মূল লাইন ও বাসাবাড়িতে নেয়া সংযোগ খুঁজে বের করতে পাঁচটি গর্ত খুঁড়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। গর্ত খুঁড়ে লাইন চিহ্নিতের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
একই সময়ে মসজিদ সংলগ্ন সড়কের জলাবদ্ধতা নিরসনে অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন। গুঁড়িয়ে দেয়া হয় বেশ কয়েকটি দোকানপাটও। মাটি খুঁড়ে ড্রেন তৈরি করে পানি নিষ্কাশনেরও ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববির কার্যালয়ে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির গণশুনানিও হয়েছে।
এদিকে মসজিদে বিস্ফোরণে হতাহতের প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানি হবে আগামীকাল মঙ্গলবার। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৈয়মুর আলম খন্দকার রিটটি করেন।
রিট আবেদনে বলা হয়, মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় বাসিন্দারা গ্যাসলাইন লিকেজের বিষয়টি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের নজরে আনলেও তিতাস গ্যাসের স্থানীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন লাইন মেরামতের জন্য। সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটে। রিটে এ ঘটনার জন্য কাদের দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে, তা নির্ধারণ করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও টেলিফোনের লাইন নিয়মিত দেখভালের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।