২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দীর্ঘ ১ বছর ৫ মাস পর হারদীর পানব্যবসায়ি সবুর হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচিত হতে চলেছে

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
নভেম্বর ২৪, ২০২০
40
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

আলমডাঙ্গার হারদী গ্রামের পানব্যবসায়ি আব্দুস সবুর (৩৭) হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ চাচা শ্বশুরসহ ২ ব্যক্তিকে আটক করেছে। গত ২২ নভেম্বর দিনগত ভোররাতে পুলিশ তাদের আটক করেছে। দীর্ঘ ১ বছর ৫ মাস পর এ হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচিত হতে যাচ্ছে বলে পুলিশ আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।

হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে আটক চাচাশ্বশুর ও পারিবারিক ভ্যানচালক


জানা যায়, গত বছরের ২২ জুন রাতে আলমডাঙ্গার হারদী গ্রামের আব্দুস সবুর (৩৬) নামের এক পানব্যবসায়ি যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। ভোরে নিজ ঘরের খাট থেকে তার লাশ পুলিশ উদ্ধার করে। হত্যাকান্ডের পর আব্দুস সবুরের স্ত্রী সালমা খাতুন জানান, আব্দুস সবুর যে রুমে রাত কাটাতেন তার পাশের রুমে সন্তানসহ তিনি(স্ত্রী) থাকতেন। বন্ধুদের সাথে আড্ডা শেষে আব্দুস সবুর সাধারণত রাত ১টা / দেড়টার দিকে বাড়ি ফিরতেন। বাড়ি ফিরে তিনি তাকে (স্ত্রীকে) ডেকে তুলতেন।

কিন্তু ঘটনার রাতে তার আচরণের ব্যত্যয় ঘটে। ২১ জুন রাত ১০টার দিকে আব্দুস সবুর বাড়ি থেকে খেয়ে স্ত্রী সালমা খাতুনের নিকট থেকে ১ শ টাকা চেয়ে নিয়ে বাইরে যায়। কখন ফিরে এসেছিলেন তা তিনি জানতে পারেননি। ভোর ৩টার দিকে একটা শব্দ শুনে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে সময় তিনি নিজের রুম থেকে বের হয়ে স্বামীর ( আব্দুস সবুরের) রুমে যেতে চেষ্টা করেও পারেননি। কেউ বাইরে থেকে তার রুমের দরজার শেকল আগে থেকেই আটকে দিয়েছিল। সে সময় তার চিৎকারে প্রতিবেশিরা ছুটে গিয়ে তার রুমের শেকল খুলে দেয়। তিনি রুম থেকে বের হয়ে দেখেন স্বামীর রুমের দরজা খোলা। ভেতরে গিয়ে খাটে শুয়ে থাকা অবস্থায় স্বামী আব্দুস সবুরের গুলিবিদ্ধ লাশ দেখতে পান।


আব্দুস সবুরকে শাবল বা ভারি কোন কিছু দিয়ে কপালে আঘাত করে হত্যা করা হতে পারে বলে পুলিশ প্রথমিকভাবে ধারণা করেছিল। কিন্তু ময়না তদন্তকারি চিকিৎসকের বক্তব্য পুলিশের ধারণা পালটে দেয়। ময়নাতদন্তকারি চিকিৎসক আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার শামীম কবীর জানান, শর্টগান অথবা ওয়ান শুটার গানের গুলিতে আব্দুস সবুরের মৃত্যু ঘটেছে। তার মস্তিষ্কের ভেতরে শর্টগান বা ওয়ান শুটার গানের গুলির ৩৬টি স্পিন্ডার পাওয়া গিয়েছিল। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে সেসময় আলমডাঙ্গা থানায় এজাহার দায়ের করে। তবে সে এজাহারে কাউকে আসামি বা সন্দেহ করা হয়নি।


তবে পুলিশ ঘটনার দিনেই হারদী গ্রামের মৃত কালু মন্ডলের ছেলে মনির ও একই গ্রামের মৃত কলিম উদ্দীনের ছেলে আতিয়ারকে আটক করে। তারা দুজনেই নিহত আব্দুস সবুরের বন্ধু।
দীর্ঘ ১ বছরের অধিক সময়েও পুলিশ এ হত্যাকান্ডের রহস্যের কোন কুল কিনারা করতে পারে নাই। সাধারন মানুষও সবুর হত্যাকান্ডের কথা ভুলতে বসেছিল। কিন্তু আলমডাঙ্গা থানার বর্তমান অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীরে নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত মাসুদুর রহমান বেশ কিছুদিন ধরে এ হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচনের জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা অব্যাহত রাখে। এরই প্রেক্ষিতে সবুর হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচিত হতে চলেছে।


নিহত সবুর গভীর রাত অবধি তিনি সবান্ধবে নেশা করতেন। নিজের উপার্জন তো বটেই, তার স্ত্রীর বেতনের টাকাও দেদারচ্ছে উড়াতেন নেশার পেছনে। আব্দুস সবুরের স্ত্রী সালমা খাতুন পল্লীবিদ্যূত সমিতির আলমডাঙ্গা অফিসে কর্মরত। এই নেশা করা নিয়ে স্ত্রীর সাথেও তার সম্পর্কের অবনতি ছিল।এ বিষয়টি জানার পর পুলিশের বদ্ধমূল ধারণা জন্মে যে, পারিবারিক অশান্তিই এ হত্যাকান্ডের কারণ হতে পারে। এ বিষটি সামনে নিয়ে পুলিশ ব্যাপক তদন্ত শুরু করে। নিহতের ও তার ঘনিষ্ঠদের মোবাইল ফোনের কললিস্ট চেক করা হয়। যে সব নাম্বার থেকে অস্বাভাবিকভাবে অতিরিক্ত যোগাযোগ করা হয়েছে তাদেরকে টার্গেট করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। এক পর্যায়ে এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের পরিচয় বের হয়ে আসে বলে একটি সূত্র দাবি করে।


গত ২৩ নভেম্বর রাতে পুলিশ এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার কুমারীডাঙ্গা গ্রামের মৃত জহির উদ্দীনের ছেলে শফি উদ্দীনকে (৫০) আটক করে। আটক শফি উদ্দীন নিহত আব্দুস সবুরের চাচা শ্বশুর। পরে একই রাতে হারদী গ্রামের রিকন শেখের ছেলে পাখিভ্যান চালক কিরণ শেখকে (২১) আটক করেছে। আটক কিরণ শেখের ভ্যানে নিহত আব্দুস সবুরের শিশু সন্তান ও স্ত্রী যাতায়াত করতেন। তাদেরকে আটক করতে পুলিশকে বিশেষ কৌশল প্রয়োগ করতে হয় বলে জানা যায়।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীর জানান, আটক ২ ব্যক্তি এ হত্যাকান্ডের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করে গুরুত্বপূর্ণ তত্থ্য দিয়েছে। আশা করছি হত্যাকান্ডে জড়িত বাকীদের খুব দ্রæত আটক করা সম্ভব হবে।


প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আটককৃতদের আদালত হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram